সেনাবাহিনীর সহায়তায় আলীকদমে মুরুং শিশুরা পাচ্ছে শিক্ষার আলো

রিপন চক্রবর্তী, বান্দরবান:

পশ্চাৎপদ মুরুং শিশুরা আর অবহেলিত নয়।তারা এখন অন্য দশজন শিশুর মত বই খাতা নিয়ে স্কুলে যাচ্ছে।স্বপ্ন দেখছে বড় হওয়ার।মানুষের মত মানুষ হওয়ার।বাংলাদেশকে সুন্দর আগামী উপহার দেওয়ার।মুরুং শিশুদের জন্য এই বিরল সুযোগটি করে দিয়েছে আলীকদম সেনা জোন।সেনাবাহিনীর সহায়তায়  আলীকদমে শিক্ষার আলো পাচ্ছে ৬৯ জন মুরুং শিশু। পিছিয়ে পড়া মুরুং জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নিতে মুরুং কল্যাণ ছাত্রাবাস পালন করছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা । সকাল-সন্ধ্যায় শিক্ষার্থীদের পড়ানো হয় মুরুং কল্যাণ ছাত্রাবাসে। শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনজন শিক্ষক। নিযুক্ত আছেন একজন তত্ত্বাবধায়কও। নানা ক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকা মুরুং শিশুদের জন্য এ যেন এক আলোর পাঠশালা।

জানা যায়, সেনাবাহিনীর শান্তকরণ কর্মসূচির খাত থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে মুরুং কল্যাণ ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেন আলীকদম জোনের তৎকালীন জোন কমান্ডার লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ পিএসসি, এলএসসি। সে স্বপ্নই ২০০৮ সালে বাস্তবরূপ নিয়ে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে `আলীকদম মুরুং কল্যাণ ছাত্রাবাস’। লে. কর্নেল আবুল কালাম বদলি হয়ে গেছেন সরকারি চাকরির সুবাদে। কিন্তু তাঁর উত্তরসূরী হিসেবে পরবর্তী জোন কমান্ডারগণও এ আলোর পাঠশালাকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন স্বপনীল ঠিকানায়।ছাত্রাবাসের তত্ত্বাবধায়ক ইয়োংলক মুরুং জানান, আশির দশকে আলীকদম সদরে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় নির্মিত হয় মুরুং কমপ্লেক্স। এই মুরুং কমপ্লেক্সের সম্প্রসারিত রূপ মুরুং কল্যাণ ছাত্রাবাস। ছাত্রাবাস পরিচালনার পুরো অর্থ বহন করছে আলীকদম সেনা জোন ও বান্দরবান সেনা রিজিয়ন।সরেজমিনে দেখা যায়, আলীকদম উপজেলা সদরের বাস স্টেশনের পাশে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এ বিশেষায়িত মুরুং কল্যাণ ছাত্রাবাস। তিন পাশে ছোট ছোট আধা পাকা টিন সেড ঘর। এর দু’টি শিক্ষার্থী নিবাস, অন্যটি অতিথি/অভিভাবক ভবন। দক্ষিণ দিকে বেড়ার ঘরটি ব্যবহৃত হয় রান্না ও ডাইনিং হল হিসেবে। কিছুটা অসমতল হলেও মাঝখানে মাঝারি সাইজের খেলার মাঠ। ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬৯ জন। এরা সবাই মুরুং জনগোষ্ঠীর প্রজন্ম। আশপাশের বিভিন্ন স্কুলে পড়ালেখা করলেও যারা আর্থিক অনটনে দুগর্মৃ এলাকা থেকে এসে বাড়িবাড়া করে থাকতে পারেনা, ঠিকমত দু’মুঠো অন্ন জুটে না ভাগ্যে, আর্থিক অনটনে যে সব অভিভাবক ঠিকমত পড়ার প্রতি যত্ন নিতে পারছে না কোমলমতি শিশুদের, সে সব অবহেলিত শিশুর ঠাঁই হয় এই পুষ্পুটিত কাননে। তত্বাবধায়ক, শিক্ষকের বেতনও শিশুদের  শিক্ষা উপকরণ, খাতা-কলম এবং তিন বেলা খাবার যোগাতে বরাদ্দ পাওয়া যায় মাসে মাত্র ৬০ হাজার টাকা। মাঝে মধ্যে দুর-দুরান্ত থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা হোস্টেলে এলেও তাদের আহারের যোগানও দিতে হয় এ বরাদ্দ থেকেই।

খেতদিং ম্রো পাড়ার ৯ম শ্রেণীর ছাত্র ঙুইয়া ম্রো উল্লাস বোধ করে বলে, আহ! কী মজা! এখানে পড়তে পারি, খেলতে পারি, বাড়িতে তা পারি না। মেরিংচর পাড়ার ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী হাই পাও ম্রো হাসি মুখে বলে,আমার এখানে খুব ভালো লাগে।শিক্ষকরা আমাদের খুব আদর করে।ছাত্রাবাস পরিদশর্নকালে আরো দেখা যায়, দল বেঁধে শিশুরা খেলছে নৈসর্গিক আনন্দে। হোস্টেল পরিচালনায় নানা সীমাবদ্ধতা থাকলেও এতটুকুও চাপ নেই এসব শিশুদের মুখে।  এক অবিশ্বাস্য নির্ভরতা যেন তাদেরকে ঘিরে রয়েছে সারাক্ষন।নিবিড় আনন্দে কাটছে তাদের ক্ষণ।


শেয়ার করুন