সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ও মোদির মিয়ানমার সফর

প্রথম আলো :

রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের ভাবনাচিন্তা জানতে চেয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। আজ অং সান সু চির সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠক
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের জবরদস্তি করে ফেরত পাঠানো সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকারের ভাবনাচিন্তা ঠিক কী রকম, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট তা জানতে চেয়েছেন। গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরদিন গতকাল মঙ্গলবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দুই দিনের সরকারি সফরে মিয়ানমার পৌঁছেছেন। সেখানে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে দুই দেশের নেতাদের কী কথা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষা আন্দোলনের কর্মীদেরও দৃষ্টি সেদিকে নিবদ্ধ।

আজ বুধবার মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। আশা করা হচ্ছে, ওই বৈঠকে তাঁরা রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কথা বলবেন। প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান অত্যাচারিত হয়ে মিয়ানমার থেকে এসে ভারতের রাজধানী দিল্লিসহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কয়েক বছর ধরে বাস করছে।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু গত মাসে সংসদে জানিয়েছিলেন, অবৈধভাবে চলে এসে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গা ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বসবাস করছে। এরা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে জম্মু, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, দিল্লি, রাজস্থান ও হায়দরাবাদের বিভিন্ন এলাকায়।

ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিমত, রোহিঙ্গারা ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক। ইসলামি সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর নজরও রয়েছে অবৈধভাবে চলে আসা এই রোহিঙ্গাদের ওপর। সংসদে রিজিজু জানিয়েছিলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন রাজ্য সরকারকে বলা হয়েছে, অবৈধ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর বন্দোবস্ত করতে।

গত সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ রিজিজুর এই বিবৃতির কারণেই। ভারতের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি এ এম খানবিলকর ও বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচুড় গত সোমবার অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতাকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সরকারি মনোভাব জেনে তা যেন সুপ্রিম কোর্টকে জানানো হয়।

আবেদনকারী দুই রোহিঙ্গা শরণার্থী মহম্মদ সালিমুল্লা ও মহম্মদ শাকিরের পক্ষে আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ গত মাসে এই বিষয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা সুপ্রিম কোর্টে দায়ের করেন। তাঁদের আবেদন, সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের আগে সরকার যেন রোহিঙ্গা মুসলমানদের জবরদস্তি করে ফেরত না পাঠায়। অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি। বিচারপতিরা আবেদনকারীদের বলেন, তাঁদের কাছে যেসব তথ্য ও নথি রয়েছে, আবেদনপত্রের সঙ্গে সেসব যেন অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেলের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট ভারতের জাতীয় মানবাধিকার রক্ষা কমিশন (এনএইচআরসি) ও জাতিসংঘের শরণার্থী হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) মনোভাবও জানতে চেয়েছেন। এ দেশে চলে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে সাড়ে ১৬ হাজার ইতিমধ্যেই ইউএনএইচসিআরে নাম নথিভুক্ত করেছে।

অত্যাচারিত শাকির ২০১১ সালে ও সালিমুল্লা তারপরের বছর বাংলাদেশ হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় নেন। সুপ্রিম কোর্টে তাঁদের আবেদন, জোরজবরদস্তি করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা হলে তা হবে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ তাঁর শুনানিতে বলেন, সরকারি ভাবনাচিন্তা যা তা ভারতীয় সংবিধানের ১৪, ২১ ও ৫১(গ) ধারার পরিপন্থী। এই ধারাগুলো সবাইকে সমান অধিকার ও স্বাধীনতা দিয়েছে। প্রশান্ত ভূষণ বলেন, ১৯৯৬ সালে সুপ্রিম কোর্ট অরুণাচল প্রদেশে চাকমা শরণার্থীদের এই যুক্তি দেখিয়েই রক্ষা করেছিলেন।


শেয়ার করুন