সুচি’র দিকে সাড়ে ৩ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থীর দৃষ্টি

Soseশফিক আজাদ, উখিয়া :
পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পেতে চলেছে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী অং সান সুচির দল। ইতিমধ্যে নিজেদের পরাজয় মেনে নিয়েছে সামরিক বাহিনীর সমর্থনপুষ্ট ক্ষমতাসীনরা। সোমবার ক্ষমতাসীন ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট পার্টির (ইউএসডিপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাতয়ও রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজ দলের পরাজয় স্বীকার করে বলেছেন, ‘আমরা হেরে গেছি।’ যদিও মিয়ানমারের নির্বাচন কমিশন এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করেনি। তবে সুচির দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি) দাবি করেছে, প্রাথমিক ভোট গণনায় দেশটির ঘনবসতিপূর্ণ মধ্যাঞ্চলগুলোতে তারা ৮০ ভাগের বেশি ভোট পেয়েছে। এর আগে সোমবার এনএলডি মুখপাত্র উইন থেইন বলেছেন, ‘আমরা গোটা দেশে ৭০টির বেশি আসনে জয়লাভ করতে চলেছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এখনো তা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি। তিনি আরো বলেছেন, ‘দেশের মোন ও কায়িন রাজ্য দুটিতে সুচির দল ৬৫ ভাগের বেশি ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছে।’ তবে বাকি পাঁচটি রাজ্যে ফল জানা যায়নি বলে তিনি জানিয়েছেন। নির্বাচনে জয় পেলেও এনএলডি এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। এর জন্য অবশ্য তাদের দুই-তৃতীয়াংশ আসন পেতে হবে। এছাড়া দল বিজয়ী হলেও সাংবিধানিক জটিলতার কারণে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না সুচি। তবে ‘প্রেসিডেন্টের ঊর্ধ্বে’ থেকে সরকার পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন সুচি। গত ২৫ বছরে মধ্যে দেশটিতে এটিই প্রথম গণতান্ত্রিক নির্বাচন। রোববারের ওই নির্বাচনে বৈধ ভোটারের সংখ্যা ছিল ৩ কোটি। এদের ৭০ শতাংশই ভোট দিয়েছেন। এ নির্বাচনে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে সাড়ে ১০ হাজার পর্যবেক্ষক ছিলেন, যাদের মধ্যে জাতিসংঘ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশের পর্যবেক্ষকরাও ছিলেন। তারা ইতিমধ্যেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে রায় দিয়েছেন, সুত্র বিভিন্ন মিডিয়া।
এদিকে মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী সুচি’র বিজয়ের খবরে নতুন করে আশায় বুক বেঁেধছে উখিয়া-টেকনাফ শরনার্থী শিবিরের অবস্থানরত বৈধ অবৈধ ২লক্ষাধিক সহ ছড়িয়ে ছিঠিয়ে অবস্থানরত আরো দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরনার্থী। এছাড়াও মিয়ানমারের অবস্থানকারী ভোটার থেকে বাদ যাওয়া ৭লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মুসলিমের দৃষ্টি এখন তার দিকে। কুতুপালং শরনার্থী শিবিরের আনরেজিষ্ট্রার্ড রোহিঙ্গা রাকিব উল্লাহ জানান, মিয়ানমারে দীর্ঘ ২৫ বছর পর গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। এতে আমরা যারা নির্যাতিন,নিপিড়ীত রোহিঙ্গা রয়েছি, তারা নতুন করে স্বপ্ন দেখছি, দেশে ফেরার ব্যাপারে। যদি এ সময়ে আমাদের দেশে ফেরা সম্ভব না হয়, তাহলে আজীবন আমাদেরকে শরনার্থী হিসেবে বিভিন্ন দেশে বসবাস করতে হবে। একই ভাবে টেকনাফ লেদা ক্যাম্পের ক্যাম্পের মোঃ আলম বলেন, সুচি হচ্ছে মুসলিমদের নেত্রী, তাই তার কাছে আমাদের অনেক চাওয়া আছে। এ সময়ে যদি আমাদের দুঃখ, দুর্দশা লাগব না হয়, তাহলে আর কখনো সম্ভব নয়। এ ধরনের আরো অনেক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ মন্তব্য করতে দেখা গেছে।
সুত্রে জানা গেছে, বিগত ১৯৮০ দশকে ১ম দফায় এদেশের রোহিঙ্গাদের আগমন ঘঠে। নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু, উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে এসময় প্রায় ২লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে সরকারের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে তারা আশ্রয় গ্রহন করে। পরবর্তীতে দু’দেশের সফল কুটনীতিক তৎপরাতায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। অতি অল্প সময়ে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে সক্ষম হলেও বাদ বাকী রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বিভিন্ন বন জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করে।
দ্বিতীয় দফায় ১৯৯১ সালে সীমান্তের নাফ নদী অতিক্রম করে প্রায় ২লক্ষ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফ, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন শরাণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বৈঠক করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করে। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে ফেরৎ পাঠানো হলেও টেকনাফের নয়া পাড়া শরণার্থী শিবিরে ১ হাজার ৭৭৫ পরিবারের ১৪ হাজার ৪৩১জন রোহিঙ্গা এবং উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের ১ হাজার ১৯৪ পরিবারে ৯ হাজার ৮৫০ জন সহ প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা দুই ক্যাম্পে অবস্থান করে রেজিষ্ট্রার্ডভুক্ত হয় বাকী গুলো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৪ সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। যা এখনো পর্যন্ত বিদ্যমান রয়েছে। এতে বিভিন্ন এনজিও সংস্থার জরীপমতে, বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফ রোহিঙ্গা শিবিরে ২লক্ষাধিক বৈধ-অবৈধ ও কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে এবং পার্শ্ববর্তী বান্দরবান জেলায় আরো দেড় লক্ষাধিক মিলে প্রায় সাড়ে ৩লক্ষাধিক রোহিঙ্গা রয়েছে। যাহার অনুপ্রবেশ অদ্যবধি চলমান রয়েছে।


শেয়ার করুন