টার্গেট শুমারীতে অর্ন্তভূক্ত

সীমান্ত দিয়ে বেড়েছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ

00000000শফিক আজাদ, উখিয়া
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারী শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা শুমারী। এতে অর্ন্তভূক্ত হতে উখিয়া ও পার্শ্ববর্তী ঘুমধুম ইউনিয়নের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে হঠাৎ অনুপ্রবেশ বেড়েছে। এছাড়া ও স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির সহায়তায় কতিপয় এনজিও সংস্থার ঢালাও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের মাধ্যমে অবৈধ রোহিঙ্গাদের সাহায্য সহযোগীতার হাত সম্প্রসারিত হওয়ায় সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছেনা বলে জানিয়েছেন সীমান্তে বসবাসকারী সচেতন এলাকাবাসিরা। এ নিয়ে স্থানীয় গ্রামবাসীর মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা।
জানা গেছে, তৎকালীন ১৯৮০ দশকে এদেশের প্রথম রোহিঙ্গাদের আগমন ঘটে। নাইক্ষ্যংছড়ি, রামু, উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত অতিক্রম করে এসময় প্রায় ২লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে সরকারের প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে তারা আশ্রয় গ্রহন করে। পরবর্তীতে দু’দেশের সফল কুটনীতিক তৎপরাতায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়। অতি অল্প সময়ে প্রায় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যেতে সক্ষম হলেও বাদ বাকী রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের বিভিন্ন বন জঙ্গলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান করে।
দ্বিতীয় দপায় ১৯৯১ সালে উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত অতিক্রম করে প্রায় ২লক্ষ ৫০ হাজার ৮৭৭ জন রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফ, রামু ও নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন শরাণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমার সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করে। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ২ লক্ষ ৩৬ হাজার ৫৯৯ জন রোহিঙ্গাকে ফেরৎ পাঠানো হলেও টেকনাফের নয়া পাড়া শরণার্থী শিবিরে ১ হাজার ৭৭৫ পরিবারের ১৪ হাজার ৪৩১জন রোহিঙ্গা এবং উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের ১ হাজার ১৯৪ পরিবারে ৯ হাজার ৮৫০ জন সহ প্রায় ২৮ হাজার রোহিঙ্গা দুই ক্যাম্পে অবস্থান করে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে উক্ত ২ কাম্পের পার্শ্বে ঝুপড়ি নির্মাণ করে আরো দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় নেয়। এছাড়া কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মিলে মোট ৩লক্ষাধিক রোহিঙ্গা এ দু’জেলায় রয়েছে বলে ইউনিসেফ কর্তৃক এক রিপোর্টের মাধ্যমে জানা গেছে। অবশেষে এসব অবৈধ ভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের শুমারীর মাধ্যমে পরিচয়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন সরকার। যার প্রেক্ষিতে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারী শুরু করতে যাচ্ছে রোহিঙ্গা শুমারীর কাজ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যা ব্যুরো এ শুমারী উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যে কুতুপালং শরনার্থী শিবিরের দায়িত্ব রোহিঙ্গা নেতা, এবং সরকারী কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় ও করেছে।
উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসের সহকারী পরিসংখ্যান কর্মকর্তা নুরুল কবির জানান, রোহিঙ্গাদের শুমারীর মাধ্যমে পরিচয়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তবে এসব পরিচয়পত্র দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে এনজিও সংস্থা আইএমও। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের নিয়ে সরকারের বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা থাকতে পারেন বলেও তিনি জানান। এদিকে রোহিঙ্গা শুমারীর কথা সর্বত্রে ছড়িয়ে পড়লে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা শুমারীতে অর্ন্তভূক্ত হতে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, কতিপয় এনজিও সংস্থা এসব রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের আখের গোছানোর জন্য দায়ভার বহন করতে হচ্ছে এদেশের মানুষকে। তাই এসব এনজিও সংস্থাগুলোর রোহিঙ্গা ক্যাম্প ভিত্তিক অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করা না হলে সরকারি গৃহীত পদক্ষেপ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া কোন দিনও সফলতা লাভ করবে না। উপরোন্তু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আরো বৃদ্ধি পেয়ে উখিয়া-টেকনাফের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হওয়ার আশংকা রয়েছে।
১৭ বিজিবি’র অপারেশন অফিসার মোঃ আবুল খায়ের বলেন, সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঢেকানোর জন্য বিজিবি সার্বক্ষনিক প্রস্তুত রয়েছে।


শেয়ার করুন