সীমান্তে শত শত মোবাইল টাওয়ার বসাচ্ছে ভারত

aqdszsdসিটিএন ডেস্ক:

বাংলাদেশ সীমান্তের দশ কিলোমিটার রেডিয়াসের মধ্যে এতদিন ভারতের কোনও মোবাইল টাওয়ার বসানোর অনুমতি ছিল না। কিন্তু দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই বিধি-নিষেধ সম্প্রতি তুলে নিয়েছে। আর, তার পরই সীমান্ত বরাবর এখন শুরু হচ্ছে শত-শত মোবাইল টাওয়ার বসানোর কাজ।  অবশ্যই, শুধু বাংলাদেশ নয়, ভারত মোবাইল টাওয়ার বসাচ্ছে ভুটান আর মিয়ানমার সীমান্ত ঘেঁষেও।

বলা হচ্ছে, বিএসএফ আর সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত। যদিও এতে চোরাকারবার বা অন্যান্য সীমান্ত-অপরাধ বাড়ার ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। ভারতের কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, এতে দেশের সীমান্তরক্ষীদেরও ওই এলাকার বাসিন্দাদের খুব সুবিধে হবে, আর বাংলাদেশের মোবাইল নেটওয়ার্কের সঙ্গেও এতে কোনও সংঘাত হওয়ার কারণ নেই।

সরকারি বিধি-নিষেধের কারণে ভারতে সীমান্ত এলাকার মানুষজন তাদের মোবাইল ফোনে এতদিন সিগন্যাল পেতেন না বললেই চলে। আর সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফেরও ভরসা ছিল, শুধু নিজস্ব ওয়্যারলেস। কিন্তু সেই ছবিটা এবার পাল্টাতে যাচ্ছে।

টাওয়ার বসানোর কাজ শুরু হবে আসামে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়েই। আর মোটামুটি প্রতি চল্লিশ কিলোমিটার পরপর প্রতিটি সীমান্ত চৌকি বা বর্ডার আউটপোস্ট পিছু একটি করে টাওয়ার বসানো হবে। শুধু আসামের সঙ্গে বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর বসবে নব্বইটার মতো টাওয়ার, আর পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বেশ কয়েক শ। এই কাজটা হবে ভারতের সরকারি টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল বা ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেডের তত্ত্বাবধানেই।

বিএসএনএলের আসাম সার্কেলের জেনারেল ম্যানেজার রাজীব যাদব এদিন জানান, শুধু ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেই বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও ভুটান সীমান্ত বরাবর বসবে সাড়ে চার শ থেকে পাঁচ শ টাওয়ার। তবে তিনি সেই সঙ্গেই বলেন, ‘বিএসএনএলের টাওয়ারের রেঞ্জ তিন কিলোমিটারের বেশি নয়। তাছাড়া সীমান্তের দুদিকেই দুদেশের নিউট্রাল জোন আছে দশ কিলোমিটার করে। কাজেই বাংলাদেশের নেটওয়ার্কের সঙ্গে এতে কোনও কনফ্লিক্ট হবে না।’

সীমান্তে মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুযোগ পেলে চোরাকারবারি ও অন্যান্য সীমান্ত-অপরাধীদের কাজে সুবিধা হবে বা এই ধরনের অপরাধ বাড়বে- এমন আশঙ্কা থেকেই কিন্তু এতদিন ওই অঞ্চলে টাওয়ার বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু বিএসএফের পক্ষ থেকে সরকারের ওপর চাপ ছিল, মান্ধাতার আমলের ওয়্যারলেস ব্যবহার করে সীমান্তে চোরাচালান ঠেকানো সহজ কাজ নয়। তাছাড়া, তাদের যুক্তি ছিল বাহিনীর জওয়ানরা যদি মোবাইল ফোনে নিজের বাড়ির লোকজন বা পরিবারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ না-পান, তাহলে তাদের মনোবল অটুট রাখাও কঠিন।

এরপর দিল্লির নর্থ ব্লকে (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সদর দফতর) ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলো অনেক আলোচনা করে শেষ পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিএসএফের মতই মেনে নিয়েছে। মোবাইল টাওয়ার বসানোর পক্ষে এ কথাও বলা হয়েছে যে, সীমান্ত এলাকার লোকজন মোবাইল নেটওয়ার্ক পেলে বিএসএফ বা গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনকেও তারা দ্রুত ইনফর্মেশন পৌঁছে দিতে পারবেন। সোজা কথায় বিএসএফ বা তার ‘ইনফর্মার’দের মধ্যেও যোগাযোগ অনেক সহজ হবে।

বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে, একেবারে চৌকি বা বর্ডার আউটপোস্টগুলোর লাগোয়া টাওয়ার বসানো হচ্ছে। তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আগেভাগে ভারত পরামর্শ করেছে, এমন কিন্তু কিছু জানা নেই। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা বিশ্লেষক কিশলয় ভট্টাচার্য অবশ্য মনে করেন, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে সম্প্রতি যে দারুণ উন্নতি দেখা যাচ্ছে, তার জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে।

এই সিদ্ধান্তে চোরাকারবার বাড়বে, সে কথাও মানতে রাজি নন মি. ভট্টাচার্য। তাঁর কথা হলো, ‘মোবাইল থাকুক আর না-থাকুক, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের অন্তত ৬০-৬৫টা স্মাগলিং করিডোর দিয়ে এমনিতেই প্রচুর চোরাকারবার হচ্ছে। নতুন করে আর সেটা কী বাড়বে?’

বরং ভারত সরকার এখন মনে করছে, সীমান্ত এলাকার মানুষের মন জিততে না-পারলে সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নয়ন কিছুতেই সম্ভব নয়। ফলে তাদের দীর্ঘদিনের দাবি মেনে শেষ পর্যন্ত স্পর্শকাতর সীমান্ত এলাকায়ও মোবাইল টাওয়ার বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিশলয় ভট্টাচার্যের কথায়, ‘বলতে পারেন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে সব পিপল-ফ্রেন্ডলি পলিসি নিয়ে এগোতে চাইছে এটাও তারই একটা!’

তবে বাংলাদেশ বা সেখানে সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষজন এতে কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান, সেটাই এখন দেখার।


শেয়ার করুন