হাধলনাগাদ ভোটার তালিকা ও এনজিওর সহজলভ্য ত্রাণের আশায়

সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ছে

bgb-patrol_154372মো.আবুল বাশার নয়ন, নাইক্ষ্যংছড়ি :

কক্সবাজার ও বান্দরবানের কয়েকটি উপজেলায় চলমান হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রণয়নের সূত্র ধরে সীমাৃৃৃন্ত এলাকায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম, রেজু, আশারতলী, চাকঢালা, লেমুছড়ি, তুমব্রু এলাকা হয়ে এসব রোহিঙ্গা কৌশলে বাংলাদেশের সীমানা এলাকায় প্রবেশ করে কেউ কেউ সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে আটক হলেও অনেকে দেশে প্রতিষ্টিত আদি রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ে চলে গেছে।
তথ্যনুসন্ধানে জানা গেছে, সদ্য অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা দূর্গম পাহাড়ী এলাকার বিভিন্ন বাগান বাড়ি, রাবার বাগান, হর্টিকালচার বাগান, বসতবাড়ির কাজে নিয়োজিত হয়ে আশ্রয় নিয়েছে। পরবর্তী সময় তারা বাংলাদেশে নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্টিত হয়ে উঠেন বলে জানান সচেতন মহল।
জানা গেছে, ২৭ আগষ্ট বৃহস্পতিবার  বান্দরবানের আশারতলী-জারুলিয়াছড়ি সীমান্ত এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময় মিয়ানমারের ছালিদং ফকিরাবাজার এলাকার কাসেম মিয়ার স্ত্রী হামিদা বেগম ও তার শিশু কন্যা তাসমিন আরাকে আটক করে আশারতলী বিওপির সুবেদার হাসেম আলী। আটকের পর পরই তাকে পূনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। তবে সীমান্তে বসবাসরত একাধিক নাগরিক জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রোহিঙ্গাদের আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কথা বলা হলেও সত্যিকারার্থে মিয়ানমারের কড়া নজরদারীর কারনে রোহিঙ্গারা প্রাণভয়ে সেদেশে ফেরত যাওয়ার কোন সুযোগ থাকে না। তারা সু কৌশলে অন্য সীমান্ত হয়ে পুনরায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে ভিন্ন এলাকায় বসতী শুরু করে। এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাইল আহামদ বলেন- রোহিঙ্গা এখন জাতীয় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে। প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরা আন্তরিক হলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অনেকাংশে কমে আসত। কিন্তু বর্তমানে হালনাগাদ ভোটার তালিকা কার্যক্রম ও কিছু এলাকায় জাতীয় সনদ, জন্মনিবন্ধন, প্রত্যয়ন ও কিছু এনজিও সংস্থার সহজলভ্য ত্রাণ পাওয়ার কারনে মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের মাঝে অনুপ্রবেশ আগ্রহ তৈরী হয়েছে।
উল্লেখ্য, চলতি মাসে ১৬ আগষ্ট নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের বালুখালী ও তুমব্রু সীমান্ত থেকে ১৫জন, ১৯ আগষ্ট ঘুমধুম ইউনিয়নের করিডোর এলাকা থেকে ৬জন, ২১ আগষ্ট ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত থেকে ১৩জন রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করে কক্সবাজারের ১৭ বর্ডার গার্ড ব্যটালিয়ন। পরে তাদেরকে মিয়ানামারে ফেরত পাঠানো হয় বলে বিজিবির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের জানানো হয়। উল্লেখ্য চলতি আগষ্ট মাসে এ সীমান্ত দিয়ে ১৩০জন আটকের পর মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন বিজিবির ১৭ ব্যটালিয়নের অতিরিক্ত পরিচালক ইমরান উল্লাহ সরকার।

সীমান্তে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাড়ছে

উখিয়া প্রতিনিধি:

উখিয়ার ও তৎসংলগ্ন নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা নর-নারী অনুপ্রবেশের সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী গ্রামবাসীর তথ্য মতে প্রতিদিন শত শত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করলেও বিজিবি’র হাতে ধরা পড়ছে স্বল্প সংখ্যক রোহিঙ্গা। গতকাল রোববার ১৩ জন সহ ১৫ দিনে ২৯৩ জন রোহিঙ্গা নারী পুরুষ কে বিজিবি সদস্যরা আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠালেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গা ঝুঁপড়িসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। কি পরিমাণ রোহিঙ্গা বস্তিতে রয়েছে এ ব্যাপারে কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। তিনি জানান, অবৈধ রোহিঙ্গা বস্তি তার নিয়ন্ত্রণে না থাকায় সঠিক তথ্য বলা যাচ্ছে। কুতুপালং গ্রামের আ’লীগ নেতা মুহাম্মদ নুুরুল হক জানান, কুতুপালংয়ে বসবাসরত অবৈধ রোহিঙ্গা বস্তির নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি বলেন, কুতুপালং বাজারে আসলে রোহিঙ্গাদের নতুন নতুন মুখ দেখা যায়। এতে অনুমান করা হচ্ছে অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা বস্তিতে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। স্থানীয় গ্রামবাসীর অভিযোগ কতিপয় দালালচক্র এখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বাণিজ্যে জড়িত হয়ে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ক্যাম্পে পৌঁছে দিচ্ছে। এতে জনপ্রতি রোহিঙ্গা থেকে ৫শ’ টাকা থেকে হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তারা বলেন, এসব দালালদের নিয়ন্ত্রণ করা না হলে রোহিঙ্গা বস্তিতে বসবাসকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকবে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, মিয়ানমার সরকার সে দেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের ভোটাধিকার থেকে বাদ দেওয়ার ঘটনায় সেখানকার রোহিঙ্গাদের মাঝে একটি অজানা আতংক ও ভীতির সঞ্চার হয়েছে। যেকারণে রোহিঙ্গারা নিরাপদ দূরত্বে চলে যাওয়ার মন মানসিকতা নিয়ে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে এদেশে পাড়ি জামাচ্ছে। বিজিবি সদস্যরা হাতে নাতে গুটি কয়েক রোহিঙ্গাকে আটক করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠালেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা কুতুপালং বস্তিসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে। এঘটনার সত্যতা স্বীকার করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, কুতুপালং বস্তি রোহিঙ্গারা নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকায় কে আসছে আর কে যাচ্ছে তার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নাই। তিনি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জের সাথে আলাপ করে একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য কমিটির সদস্যদের নিয়ে একটি বৈঠক করবেন বলে সাংবাদিকদের জানান।

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে কক্সবাজার বিজিবি’র সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মোঃ খালেকুজ্জামান রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা অস্বীকার করে বলেন, প্রতিনিয়ত অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের তৎপর রাখা হয়েছে। তবে সীমান্তে কতিপয় দালালের কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেছেন।


শেয়ার করুন