সিরিয়ার ৮ শিশুর অন্যরকম জীবনযুদ্ধ

সিরিয়ার ৮ শিশুর অন্যরকম জীবনযুদ্ধ

সিটিএন ডেস্ক:

সিরিয়ায় চার বছরে ধরে চলা গৃহযুদ্ধে স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত। ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে মরিয়া দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। তাকে উৎখাতে যুদ্ধে লিপ্ত বিদ্রোহীসহ আইএস। ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি মূল্য দিচ্ছে শিশুরা। সমুদ্রে বা রকেট হামলায় কেউ মারা যাচ্ছে আবার কেউ কেউ পঙ্গু বা বাকরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছে সারাজীবনের জন্য।

২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে সিরিয়ার এই হতভাগ্য শিশুরা বাগানে খেলা করত, মেলায় যেত, ঘুরে বেড়াত আর হই হুল্লোড়-চিৎকার-চেঁচামেচিতে ভরিয়ে রাখত নিজেদের আঙ্গিনা। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর বদলে গেছে সব। এখন তারা হাসে না, কাঁদে না— সবাই যেন প্রহর গুনে মৃত্যুর! সর্বশেষ তুরস্কের সৈকতে শিশু আয়মান কর্দির লাশ তারই কথা স্মরণ করে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। তারপরও থেমে নেই শিশু শরণার্থীদের যন্ত্রণার গল্প।

বোমা নিক্ষেপ, বিমান হামলা, নির্মম হত্যা, ঘর-বাড়িতে আগুন দেওয়া ইত্যাদি কত রকমের কাণ্ড ঘটছে সিরিয়ায়। এই সহিংসতায় শিশুরা কিভাবে হারাচ্ছে তাদের শৈশব তা নিচে ছবির মাধ্যমে তুলে ধরা হল—

হাঙ্গেরি ও অস্ট্রেলিয়ার সীমান্তের ফুটপাথে শুয়ে থাকা শিশুটির নাম আহমেদ। বয়স ৭। সিরিয়ার ইদলিবে তাদের বাড়ি। যেদিন তাদের বাড়িতে বোমা হামলা হয় সেদিনও ঘুমিয়ে ছিল সে। ওই হামলায় মারা গেছে তার ছোটভাই। মাথায় আঘাত পায় আহমেদও। কিন্তু জীবন বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত বাড়ি-ঘর ছেড়ে শরণার্থী হয়েছে তার পরিবার।

৫ বছরের আব্দুল্লাহর সামনে সিরিয়ার ডারায় হত্যা করায় তার বোনকে। নির্মম এই হত্যার সাক্ষী ছোট এই শিশু। নিজে সুস্থ নয়। কিন্তু মায়ের পক্ষে তাকে চিকিৎসা করানও সম্ভব নয়। বেলগ্রেড রেডস্টেইনের ফুটপাতের এই পরিত্যক্ত লেপে শুয়ে হয়তো ফেলে আসা অতীত নিয়ে ভাবছে আব্দুল্লাহ!

দামেস্কে গ্রেনেড হামলায় মা ও ভাই নিহত হওয়ার পর সাত বছর বয়সী রালিয়া ও ১৩ বছর বয়সী রাহাফ বৈরুতের ফুটপাতের টুকরো কার্ডবোর্ডেই ঘুমাচ্ছে তাদের বাবার সঙ্গে।

সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলের শহর ডেয়ের-ইজ-জোর থেকে সার্বিয়া এসেছে ৬ বছরের আহমেদ। কিন্তু বাবা ও চাচার মৃত্যুর পর এখনো আতঙ্ক কাটিয়ে উঠে স্বাভাবিক হতে পারেনি শিশুটি।

ছবি আঁকতে ভালবাসে ৭ বছরের শেহড। আগে কত কিছু আঁকত এখন আর ওদিকে মন নেই। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর বাবা-মায়ের সঙ্গে হাঙ্গেরিতে শরণার্থী হয়েছে শেহড। এখন শুধুই অস্ত্রের ছবি আঁকে সে।

৫ বছরের মইয়েডও তার মার সঙ্গে বাজারে গিয়েছিল। হঠাৎ বোমা হামলায় মারা যান মইয়েডের মা। এ ঘটনায় গুরুতর আহত মইয়েড এখন জর্ডানের রাজধানী আম্মানের একটি হাসপাতালে চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে।

খুব হাসত ২ বছর বয়সী আমির; এখন নীরব। শুধু চেয়ে থাকে অপলক। বলছিলেন হতভাগ্য ছেলেটির মা। অশ্রুসজল আমিরের মায়ের ধারণা হয়তো আর কখনও কথা বলবে না তার ছেলে।

ভাগ্যবতী ফাতেমা (৯)! শরণার্থী হিসেবে পরিবারের সঙ্গে সুইডেনে আশ্রয় পেয়েছে সে। তাতে কি যায়-আসে। সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার সময় লোকভর্তি নৌকায় এক মা সন্তানের জন্ম দেন পরে আবার নৌকা থেকে নবজাতককে ছুড়ে ফেলা হয় সমুদ্রে। ওই দৃশ্য দেখার পর বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে ফাতেমা।

– See more at:


শেয়ার করুন