পাঁচ মাসে সহস্রাধিক অভিযুক্ত, পুলিশ সুপার ও থানায় থানায় সতর্কবার্তা
গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী কমিশনার রাজিবুল হাসান ১৭ বছরের তরুণীকে অপহরণ করে নিজের বাসায় দুই মাস বন্দী করে রাখেন। তরুণীর পরিবার কাফরুল থানায় মামলা করলে র্যাব-৪-এর সহায়তায় এপ্রিলে তরুণীকে উদ্ধার করা হয়।
ডিএমপি কমিশনারও একইভাবে সতর্কবার্তা দিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে। কিন্তু পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজনৈতিক এবং বিশেষ দুটি এলাকার বিবেচনায় প্রাইজ পোস্টিং পাওয়া পুলিশ সদস্যদের অধিকাংশই এসব অপরাধে জড়িত। দলীয় পরিচয় থাকায় এরা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাদেরও ধার ধারেন না। অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না তাদের বিরুদ্ধে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশের কতিপয় সদস্য অপরাধীর কায়দায় সব ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় গোটা বাহিনীর ইমেজ সংকটের মধ্যে পড়বে। পুলিশের প্রতি মানুষ আস্থা হারাবে; যা পুনরুদ্ধার করা পুলিশের পক্ষে কঠিন হবে। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক এস এম শাহজাহান বলেন, পুলিশকে নিজেদের মতো করে কাজ করতে দিতে হবে। দলীয়করণের কারণে অপরাধের বেশকিছু ঘটনা ঘটছে, যা পুলিশের কাছ থেকে কেউ আশা করে না।
পুলিশ সদর দফতরের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৪ সালে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৪ হাজার ৪০০ জন পুলিশ সদস্যকে লঘু শাস্তি দেওয়া হয়। একই সময় গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৭৬২ জনকে। এদের মধ্যে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ৮০ জনকে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ৩০ মে পর্যন্ত লঘুদণ্ড দেওয়া হয়েছে ৯৫৫ জনকে। গুরুদণ্ড হয়েছে ৪৫ জনের, চাকরিচ্যুত করা হয়েছে ১২ জনকে। এ ছাড়া অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে নয়জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে।গত পাঁচ বছরে ৬৭ হাজার ৮২০ জন পুলিশ কর্মী ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে; যা প্রতি বছর গড়ে ১৩ হাজার ৫৬৪ জন। এতে দেখা যায়, কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) পর্যন্ত পুলিশ সদস্যরা অপরাধে জড়াচ্ছেন সবচেয়ে বেশি। তবে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে উচ্চপদের কর্মকর্তাদের এ ধরনের অপরাধে জড়ানোর হার কম। সূত্র জানায়, ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত ৬৩ হাজার ৩৪৯ জনকে লঘুদণ্ড, ৩ হাজার ৫৯০ জনকে গুরুদণ্ড, ৪৬১ জনকে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত ও ১২৩ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ৬৭ হাজার ৫২৩ জন কনস্টেবল থেকে এসআইর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই সময়ে ২৩৪ জন পুলিশ পরিদর্শকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় পুলিশ সদর দফতর। এর মধ্যে ২০৭ জনকে লঘুদণ্ড ও ২৭ জনকে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ সময় ৬৩ জন এএসপি থেকে উপরের স্তরের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ জনকে লঘুদণ্ড, ১২ জনকে গুরুদণ্ড, একজনকে বরখাস্ত বা চাকরিচ্যুত ও তিন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে।