ইত্তেফাক : বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দীনের আটক নিয়ে রহস্যের কিনারা হয়নি। পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তাকে আটক করা হয়েছে। বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতেও একই দাবি করা হয়েছে। তবে পুলিশ, র?্যাব কিংবা কোন সংস্থাই এই আটকের কথা স্বীকার করেনি। উত্তরার যে বাড়ি থেকে তাকে আটক করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে সেই বাড়িটিও রহস্যে ঘেরা। তবে সেই বাড়ি থেকে একজনকে ডিবি পরিচয়ে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। স্থানীয় থানা পুলিশ সেই ব্যক্তির পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আটক ব্যক্তিকে ‘মেহমান’ পরিচয় দিয়ে বাড়িটিতে নিয়ে এসেছিলেন হাসানাত নামের এক ব্যক্তি। সেই হাসানাত ও তার স্ত্রী সুমনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১৩/বি রোডের ৪৯/বি নম্বর ভবনের দোতলা থেকে গত মঙ্গলবার রাতে ডিবি পরিচয়ে একজনকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই ব্যক্তি সালাহউদ্দীন বলে দাবি করছেন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। তবে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কোনো সংস্থা বিষয়টি নিশ্চিত করেননি।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা ‘আটক’ সেই ব্যক্তিকে খুঁজছি। তাকে পাওয়া গেলে এই রহস্য উদঘাটন করা যাবে। ইত্তেফাকের এই প্রতিনিধি গতকাল শুক্রবার উত্তরার সেই বাড়িতে যান। বাড়ির দারোয়ান আক্তার আলীর সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, তার বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার দেবগাঁও গ্রামে। দুই মাস আগে তিনি এই ভবনে ৭ হাজার টাকা বেতনে চাকরিতে যোগদান করেন।
তিনি জানান, ভবনটির মালিক মৃত সিরাজুদ্দৌলার মেয়ে। তিনি দেশের বাইরে থাকেন। রেজা নামের এক ব্যক্তি বাড়িটির দেখাশোনা করেন। রেজা থাকেন ধানমন্ডিতে। বাড়ির দোতলার ভাড়াটিয়া ফাস্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ডিএমডি হাবিব হাসানাত।
ঘটনার ৪ দিন আগে নিজে গাড়িতে করে একজন মেহমানকে বাড়িতে নিয়ে আসেন হাসানাত। দারোয়ানকে ডেকে বলেন, মেহমানকে দেখাশোনা করতে। এছাড়া বাসায় ৩০/৩৫ বছর বয়সের একজন গৃহকর্মী রেখে তিনি চলে যান। ওই গৃহকর্মী এই বাসায় দীর্ঘ দিন ধরে আছেন। হাসিনা আহমেদের ভাষ্য অনুযায়ী সেই মেহমানই হলেন সালাহউদ্দীন আহমেদ।
দারোয়ান জানান, ঘটনার দিন রাত ৯টায় তিনি ভাত রান্না করছিলেন। কলাপসিবল গেট খোলা ছিল। এই সময় ডিবি পরিচয়ে ৩/৪ জন লোক বাড়িতে ঢোকে। তারা দোতলায় উঠে কলিং বেল চাপলে কাজের মেয়ে দরজা খুলে দেয়। এরপর ডিবি পরিচয় দানকারী ব্যক্তিরা ওই মেহমানকে গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক ব্যক্তি বলেন, এ সময় একটু দূরেই র্যাবের একটি গাড়ি অপেক্ষমাণ ছিল। ওই মেহমানের পরনে ছিল সাদা টি শার্ট এবং প্যান্ট। তিনি সালাহউদ্দীন কীনা জানি না।
জানা যায়, হাবিব হাসানাত দেড় বছর ধরে এই বাসায় ভাড়া থাকেন। তার কোন সন্তান নেই। তবে এই বাসায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী থাকেন। তার নাম সুমনা। হাসানাতের প্রথম স্ত্রী এক ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে কানাডায় থাকেন। সুমনার মা আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য মরিয়ম বেগম। সুমনারও দ্বিতীয় স্বামী হাসানাত।