সুপেয় পানি নিশ্চিত ও যুব কর্মসংস্থান

সারা দেশে পুকুর, দীঘি খনন করবে সরকার

Pond-dig-local-government_1সিটিএন ডেস্ক :

জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পুকুর, দীঘি ও খাল খনন এবং পুনর্খনন করবে সরকার। ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরতা কমিয়ে সুপেয় পানি চাহিদা মেটাতে এবং মাছ ও হাঁস চাষ, সবজি চাষের মাধ্যমে যুবকদের বেকারত্ব ঘুচাতে এ কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে।

এ জন্য সারা দেশ থেকে তথ্য নিয়ে তালিকা করে পুকুর, দীঘি ও খাল খনন কাজ বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয় সরকার বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, কৃষি জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়া, সুপেয় পানির সরবরাহ ও গৃহস্থালি কাজসহ বিবিধ কাজে পানি ব্যবহারের কারণে ভূ-গর্ভস্থ পানি (গ্রাউন্ড ওয়াটার) দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। তা ছাড়া ভূ-গর্ভস্থ পানিতে অত্যধিক আর্সেনিক, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, ক্লোরাইড ইত্যাদি থাকায় মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থের মাধ্যমে নানা রকম মানবিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভূ-গর্ভস্থ পানি দূষিত হওয়ার কারণে ভবিষ্যতে ভূ-গর্ভস্থ পানি সরবরাহের মাধ্যমে জনসাধারণের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা দুরূহ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে জনসাধারণকে সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে হলে ভূ-গর্ভস্থ পানির বিকল্প হিসেবে ভূ-উপরিস্থ পানি (সারফেস ওয়াটার) ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। এ জন্য পুকুর ও দীঘি খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

এর আগে জেলা প্রশাসক সম্মেলনেও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী জেলা প্রশাসকদের পুকুর ও দীঘি খননে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররাফ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, ‘আগে গ্রামে পানি সরবরাহের বিষয়টি ছিল পুকুর ও দীঘিনির্ভর। এগুলো পুনরুদ্ধার করা হবে। এ ছাড়া নতুন করেও খনন করা হবে। এতে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে পারব। এই পানির আধারটা থেকে পানি মাটির নিচের পানির স্থরে যাবে, ধীরে ধীরে আগামী ৪/৫ বছরের মধ্যে পানির স্তরটা আবার আগের অবস্থানে ফিরে আসবে। এ জন্য আমাদের কাজ চলছে।’

কিছুদিন আগে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. খাইরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের বিভিন্ন জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের আওতার মধ্যে খাস জমি/খাস পুকুর রয়েছে। যা চিহ্নিত করে খনন/পুনর্খননের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে ভবিষ্যতে সুপেয় পানির উৎস হিসেবে এ পুকুরগুলোকে ব্যবহার করা সম্ভব।’

জনসাধারণের জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে ভূ-উপরিস্থ পানির উৎস হিসেবে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদের আওতার মধ্যে খাস জমি বা খাস পুকুর চিহ্নিত করে ওই চিঠিতে জরুরী ভিত্তিতে প্রকল্প নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্ল্যানিং সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তুষার মোহন সাধু খান দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা এখন মাঠ পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহ করছি। এ তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।’

পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক মহাপরিচালক ম. ইনামুল হক দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘শিল্প বর্জ্য, পয়ঃবর্জ্য নদীতে, জলাধারে ফেলা হচ্ছে, জলাভূমির তলা দিয়ে এগুলো ভূ-গর্ভস্থ পানির দূষিত করছে।’

ম. ইনামুল হক আরও বলেন, ‘ঢাকা ও আশপাশে মাটির নিচে অল্প গভীর স্তরটি একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রকৃতির উপর মানুষের অত্যাচার, সরকারের অবহেলায় এ অবস্থা হয়েছে।’

নতুন কূপ খনন ও পুনর্খননের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ইনামুল হক বলেন, ‘এটা প্রয়োজন। তবে খেয়াল রাখতে হবে বাইরের ময়লায় এগুলোও যেন আবার দূষিত হয়ে না পড়ে।’

পুকুর, দীঘি ও খাল খননে হবে যুবকদের কর্মসংস্থান : গত ২৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠানো চিঠিতে সারাদেশে পুকুর, দীঘি ও খাল খননে উদ্যোগ নিতে বলা হয়।

এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার বিভাগ গত ৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার কৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে জরুরিভিত্তিতে একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

একই দিন তাদের অধীন এলাকায় থাকা পুকুর, দীঘি ও খালের তালিকা বিস্তারিত তথ্যসহ ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পাঠানোর জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও রংপুরের বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

ওই চিঠিতে বলা হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগকে সমগ্র দেশের পুকুর, দীঘি ও খাল ইত্যাদি খনন করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে স্থানীয় যুবক সমাজ মৎস্য চাষ, হাঁস পালন, শাক-সব্‌জি চাষবাদের মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করতে পারবে ও ব্যাপক কর্মসংসস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে অনুমিত হয়। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের আওতায় এ মৎস্য চাষ, হাঁস পালন ও শাক-সব্‌জি চাষবাদ করা যাবে।

বিভাগীয় কমিশনারদের জেলাওয়ারী পুকুর, দীঘি, খালের তালিকা প্রস্তুত করে বিস্তারিত তথ্য ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাতে বলা হয়।

এ ছাড়া ৭ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের আওতার জেলাওয়ারী পুকুর, দীঘি ও খালের তালিকা পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট সচিবদের কাছেও চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ তালিকাও ২১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠাতে বলা হয় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগকে।


শেয়ার করুন