সাগরে জলদস্যুদের তান্ডব চলছে

imagesএম বশির উল্লাহ, মহেশখালী :

 ইলিশ আহরণ বন্ধ কাটেিয় মৌসুমের শুরুতে সাগরে জলদস্যুদের তান্ডবে দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপকূলের বিপুল সংখ্যক জেলে। প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত গভীর সমুদ্রগামী জেলেদের এখন চরম দূর্দিন চলছে। পাশাপাশি জাটকা নিধন রোধে কোস্ট গার্ড ও মৎস্য অধিদপ্তরের বিশেষ অভিযানে নানা ভাবে হয়রানির শিকার হওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন জেলেরা।

মৌসুমের শুরুতেই বঙ্গোপাসাগরে চলছে জলদস্যুদের তান্ডব। ইতোমধ্যে মৌসূম শুরু হয়ে গেছে তাই তাদের ছুটতে হবে বঙ্গোপসাগরে ইলিশের সন্ধানে। পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু ভালভাবে বাঁচার আশায় মহাজনদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঋণ নিয়ে সবকিছু ঠিকঠাক করে এনেছে। কিন্তু সাগরে মাছের আকাল। একই সাথে জলদস্যুদের তান্ডব। বিশেষ করে মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম সহ ঘটিভাঙ্গার বোট মালিকরা চরমভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন। মূখে শকনো হাসি ভেতরে চাঁপা কষ্ট, নির্ঘুম রাত ভেবে ভেবে কূল কিনারা পায়না। গভীর সাগরে বোট, অসহায় জেলে পরিবারের সদস্যরা। গত মৌসূমেও গেছে ইলিশের আকাল। প্রজনন মৌসূমে ইলিশ শিকারে নিষেধাজ্ঞা, প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও জলদস্যুদের আক্রমণ সব মিলিয়ে ঊপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালীর জেলেদের মোটেই ভাল যাচ্ছেনা মৌসূমটা। মহাজনদের কাছথেকে ঋণ নিয়ে কোনো মতে চলছে তাদের সংসার। গত কয়েক মৌসূমের ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে জেলেরা আশায় বুক বেঁেধ আবারো সাগরে নেমেছিল। বৈরী আবহাওয়া আর জলদস্যু আতঙ্ক নিয়েই সাগরে যাচ্ছে জেলেরা।

নাম প্রকাশ নাকরার শর্তে কয়েক ব্যবসায়ী মনে করেন. এ মুহুর্তে সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন সমুদ্রগামী জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। সাগরে নিরাপদে মাছ ধরতে পারলে একদিকে জেলেরা যেমন ভাল থাকতে পারবেন, অপরদিকে বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় করতে পারবে সরকার। এ ক্ষেত্রে প্রধান বাঁধাই হচ্ছে জলদস্যুদের তা-ব। জেলা ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির হিসাব অনুযায়ী মৌসূমে শুরতে সহ¯্রাধিক মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতি হয়েছে। এ সময় জলদস্যুরা মাছ, জাল, জ্বালানী তেল, প্রলার, ট্রলারের যন্ত্রাংশ সহ প্রায় শত কোটি টাকার মালামাল লুটে নেয়। মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণ করা হয়েছে ১০ জনের ও বেশী জেলেকে। সেসব জেলেকে ফিরিয়ে আনতে প্রায় কোটি টাকা মুক্তিপণ দিতে হয়েছে জেলে পরিবার গুলোকে। এ ছাড়া জলদস্যুদের হামলায় গত ৪ দিনে শতাধিক জেলে আহত হয়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ৫ জন গুলি বৃদ্ধ হয়ে চিকিৎসাধিন রয়েছে বলে জানা গেছে।

মহেশখালী-কুতুবদিয়ার এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, জেলেরা এঅঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষিত সম্প্রদায়। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকার আন্তরিক ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি কোস্ট গার্ডের নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি র‌্যাব বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে।
কক্সবাজার জেলার উপকূলের ৪০ হাজার জেলের মূখে হাসি নেই। সাগরের ব্যবসায় মন্দাভাব, বারবার জলদস্যুদের তান্ডবে মাছ বিহীন ট্রলার ফেরৎ আসায় চিন্তায় রাতের ঘুম হারাম, ঋণ আর সুদের টাকার চিন্তায় মহা বিপাকে তারা। পকেট টাকাশুন্য চলছে নিরব দূর্ভিক্ষ।

গেল বছর কয়েকশ জেলের সলিল সমাধি হয়েছে ডাকাতের কবলে পড়ে। এ মৌসূমে কেউ সুখের হাসি হাসতে পারবে বলে মনে হয়না অনেকের। অনেকেই নিঃস্ব হয়ে যাবে, এমন আশংকা জেলে পল্লীর। মহেশখালী ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ-সম্পাদক জানান, মৌসূমের শুরুতে ইলিশের আকাল, সরকারী নিষেধাজ্ঞা এবং জলদস্যুদের হামলা ও অপহরণের শিকার হয়েছেন উপকূলীয় জেলেরা। আর এখন সাগরে মাছ ধরা পড়েনা। তাই বোট মালিকরা অসহায় ভাবে দিন যাপন করছে। সরকারী কোন সাহায্যও পাওয়া যায়না বলে জানান তারা।

একদিকে সংসারের ভরণ পোষণে ব্যার্থতা, অপরদিকে অপহরণ থেকে ঊদ্ধার পেতে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছেন অধিকাংশ জেলে। ফলে অনেকেই পেশার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে দেনার দায়ে এলাকা ছাড়া হয়েছেন। বিশেষ করে যেসব জেলে মুক্তিপণ দিয়ে জলদস্যুদের কবল থেকে ফিরে এসেছে, সেসব পরিবার এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাই অনেক প্রতিকূলতা মাথায় নিয়েও সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি শেষ করে এনছেন জেলেরা। এখন ইলিশ শিকারই হচ্ছে তাদের একমাত্র আরাধনা। কারণ, গত বছরের ঋণ পরিশোধ করাএখনো বাকি। ফলে এক প্রকার বাধ্য হয়েই আবার সাগরে যেতে হচ্ছে জেলেদের। এ ছাড়া আর কোন পথ নেই জীবিকা নির্বাহ করার। কক্সবাজার জেলায় ৩৭ হাজার ৫৪১ টি জেলে পরিবার বাস করে। বেসরকারী সংগঠন কোডেকের হিসাব অনুযায়ী এ জেলায় জেলে পরিবারের সংখ্যা সরকারী হিসেবে প্রায় দ্বিগুণ।

মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইকুল আহমদ জানান, সাগরে জলদস্যুদের নিয়ন্ত্রণ করতে কোস্ট গার্ডের পাশাপাশি পুলিশ চিহ্নিত জলদস্যুদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন জলদস্যুকে আটক করা হয়েছে।


শেয়ার করুন