সাকা নিয়ে মাথাব্যথা নেই বিএনপির

সিটিএন ডেস্ক:

দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মানবতাবিরোধী অপরাধের চূড়ান্ত রায় নিয়েও কোনো মাথাব্যথা নেই বিএনপির।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর দেওয়া সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বুধবার (২৯ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বহাল রাখলেও দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে না। কোনো কর্মসূচি ঘোষণার কথাও ভাবছে না বিএনপি। বরং স্পর্শকাতর এ বিষয়টি নিয়ে নিরাপদ অবস্থান গ্রহণকেই শ্রেয় মনে করছে দলটি।

মঙ্গলবার (২৮ জুলাই) বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা, সাকার আইনজীবী ও নীতিনির্ধারণী ফোরামের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি নন কেউ।

এ প্রসঙ্গে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট এ জে মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, এ ধরনের সেনসেটিভ বিষয় নিয়ে ফোনে কমেন্ট করতে পারবো না। কথা বলতে চাইলে চেম্বারে চলে আসুন। পরে অবশ্য চেম্বারে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনও রায়ের আগে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। রায় পর‌্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, বিষয়টি উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ পর্যন্ত গড়িয়েছে। কাল (বুধবার) চূড়ান্ত রায় ঘোষণা হতে যাচ্ছে। ঠিক তার আগ মুহূর্তে এ ব্যাপারে কোনো কমেন্ট করা যাবে না। রায়টা দেখি, পরে কথা বলবো।

সূত্র জানায়, দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সহকর্মী সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় নিয়ে মিডিয়াতে প্রকাশ্যে কিছু না বললেও বিএনপির এসব শীর্ষ নেতারা মনে করেন, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের রায় নিয়ে নীরব অবস্থানই দলের জন্য মঙ্গলজনক।

তাদের মতে, রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা হয়ে পড়া বিএনপি এই মুহূর্তে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রকাশ্যে বিরোধিতা অথবা সাজাপ্রাপ্তদের প্রতি সহানুভূতি বা অনুকম্পা দেখালে দলের জন্য হিতে-বিপরীত হতে পারে। তাই অন্য রায়গুলোর মতো সাকা চৌধুরীর বেলায়ও নীরব ভূমিকায় থাকা দলের জন্য নিরাপদ।

সূত্রমতে, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে দলের অবস্থান পরিস্কার না হওয়ায় এ নিয়ে জনগণের মধ্যে বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণার জন্ম হয়েছে। এখন যদি সাকা চৌধুরীর রায়ের পর দলের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়, তাহলে  সেটি হবে বিএনপির জন্য মস্ত বড় ভুল। সুতরাং যুদ্ধাপরাধ ইস্যুতে জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে প্রচণ্ডরকম চাপে থাকা বিএনপির জন্য সাকার রায় নিয়ে কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখানো ঠিক হবে না।

তাছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বিভিন্ন সময় উল্টা-পাল্টা বক্তব্য দিয়ে আগে থেকেই খালেদা-তারেকপন্থিদের বিরাগভাজন ছিলেন সাকা চৌধুরী।

এ কারণে আন্তুর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়ার পরও সাকা চৌধুরীর ব্যাপারে কোনো আগ্রহ দেখায়নি বিএনপি।

যদিও ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর সাকা চৌধুরী গ্রেফতার হওয়ার পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সংবাদ সম্মেলন করে আন্তর্জাতিক অপরধ ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন তুলে অবিলম্বে বিচার প্রক্রিয়া বন্ধের দাবি জানিয়েছিলেন।

এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, তার (সাকা) দলীয় পরিচয় আছে। সে বিষয় নিয়ে দলের সিলেক্টেড পার্সনরা কথা বলবেন। এই মুহূর্তে আমি দলের সিলেক্টেড পারসন নই। আর বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আগে-ভাগে কোনো মন্তব্য আমার কাছ থেকে পাবেন না।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আগ বাড়িয়ে কথা বলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ শুরু থেকেই দিয়ে রেখেছিলেন চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। ফলে জোট শরিক জামায়াতের একাধিক নেতার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ও দু’জনের ফাঁসি কার্যকর হবার পরও নীরব ছিলেন বিএনপি নেতারা। দলের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়াও জানানো হয়নি তখন।

খালেদা জিয়ার ওই নির্দেশ এখনও বলবত থাকায় সাকা চৌধুরীর রায়ের পর নীরব ভূমিকা পালন করবে বিএনপি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এখন দলের অখণ্ডতা রক্ষা, সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ও দল পুনর্গঠন নিয়ে ভাবছি। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে আগ বাড়িয়ে কোনো কিছু করার ইচ্ছা আমাদের নেই।


শেয়ার করুন