সম্মানী ভাতা পাচ্ছেন না মুক্তিযোদ্ধা বাবু খাঁ’র পরিবার

Lama photo-2এম.বশিরুর আলম, লামা:
বান্দরবানের লামায় অর্ধহারে অনাহারে জীবন যাপন করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবুখাঁ’র পরিবার। ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায় ৬নং হামিরদী ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মাবধপুর গ্রামের বাসিন্দা দরিদ্র কৃষক, পিতা করিম খাঁ ও মাতা ছুটু খাতুন-এর সন্তান বাবু খাঁ। মুক্তি বাহিনীতে যোগ দিয়ে ভারতে গিয়ে রণ প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে এই বীর যোদ্ধা নিজ জম্মস্থান ফরিদপুরের রণাঙ্গনে যুদ্ধরত ছিলেন।
১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর ১৬ ইসিবিতে চাকুরী হয়। স্বাধীনের কয়েক বছর পর, ১৯৭৮ সালে সেনা সদস্য হিসেবে আলীকদম জোনে বদলী হয়ে আসে। নিজ জেলায় ফরিদপুরে জায়গা জমি না থাকায় ৭০ দশকের শেষ দিকে বান্দরবানের লামা উপজেলার ইয়াংছা গ্রামে ছোট্ট এক টুকরো পাহাড় কিনে সেখানে বসবাস শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে মার্চ মাসের ১২ তারিখে অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করবেন, ১৩ তারিখে টেলিভিশনের পর্দায় এমন সংবাদ শুনে খুশীতে আত্মহারা হয়ে নিজ বাসায় হ্নদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু খাঁ। ১৯৯৬ সালে দেশে রাজনৈতিক পেক্ষাপট পরিবর্তন হলে, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন হয়। মুক্তিযোদ্ধা চুড়ান্ত তালিকায় ও মুক্তি বার্তায় তালিকাভুক্ত, সর্বপুরী রণাঙ্গনের অকুতভয় এই বীর সেনা বাংলাদেশ সেনা বাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য হিসেবেও সফল যুদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধার ওয়ারিশ হিসেবে বাবু খাঁ’র স্ত্রী আমেনা বেগম সরকার প্রদেয় সুবিধাদি ভোগের জন্য সংগৃহীত মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের ডাটা বেজ (ফরিদপুর জেলা) সূত্রে জানাযায়, এই মুক্তি সেনার সাময়িক সনদপত্র নং-ম-৫০৮৭৭,১/৩/০৫, মুক্তি বার্তা নং- ০১০৮০৭০১৬৪। গ্রেজেট নং ও তারিখ : ১০১৬, তাং-০৫/০৬/২০০৫। ভারতীয় তালিকা নং- ৪৪৯৬, ইবিআরসি নং-৩৫২৯। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কমন তালিকা পর্যালোচনা: ৩ তালিকা, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম জামাল কর্তৃক ১৭/৫/২০০৩ তারিখে স্বাক্ষরিত তালিকায় ক্রমিক নং-৩৪৭-এর মুক্তি নং ১৬৪, কল্যাণ নং-৪৪৯৬, ইবিআরসি নং-৩৫২৯, ২৬ নং পৃষ্টায়ও তার নাম রয়েছে।
মৃত্যুকালীন সময়ে তার স্ত্রী আমেনা বেগম ও, ছেলে ইলিয়াছ খাঁ, মোখলেছ খাঁ, আনছার খাঁ ও এক কণ্যা কোহিনুর খাঁসহ নাতি-নাতনি রেখে যান। বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু খাঁ মৃত্যুর পর তার সহধর্মিনী আমেনা বেগম, তার জেলায় জম্ম নেয়া জাতীর জনক ও জাতীর জনক কন্যা শেখ হাসিনা তার দল বাংলাদেশ আওয়ামীলীগকে ভালোবেসে বাড়ির প্রধান ফটকে একটি নৌকার তৌরণ তৈরি করেন। এ স্বপ্ন তার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু খাঁ’রও ছিল। কিন্তু দারিদ্রতার কষাঘাতে সে স্বপ্ন পুরন করতে পারেননি। স্বামীর মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা পতিœ আমেনা বেগম বসত ভীটার একাংশ বিক্রি করে, সে অর্থে ইট সিমেন্ট, রড ক্রয় করে সব টাকা শেষ হয়ে যায়। তবে নৌকার তৌরণ তৈরির অধম্য ইচ্ছা মন থেকে শেষ হয়নি জাতীর জনক ও তার কন্যা শেখ হাছিনকে ভালবাসার পাগল মুক্তিযোদ্ধা পতিœ আমেনা বেগমের। গ্রামের মানুষের ক্ষেতে খামারে দিন মুজরী করে টাকা জমিয়ে, সেই টাকায় তৌরণ নির্মান করেন। কয়েক বছর আগে তৈরি তৌরণটির বর্তমানে বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। এচাড়া তৌরণের দু’পাশে জাতীর জনক ও প্রধান মন্ত্রীর খোদাই করা ছবিটি নষ্ট হয়ে গেছে। আমেনা বেগম স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি দু হাতের তালুতে শুকিয়ে যাওয়া ক্ষত চিহ্ন দেখিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ইট কংক্রীট করতে তার দু’হাত তেকে অনেক রক্ত ঝরেছে। তৌরণ নির্মানের জন্য স্থানীয় কোন নেতার কাছ থেকে স্বেচ্ছায় সহযোগিতা না নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, নৌকার তৌরণ তৈরি করে জাতীর জনক ও তার কণ্যার প্রতি ভালবাসার ভাগি অন্য কাউকে করতে চাননি।
লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে ছোট্ট এক পাহাড় পাদদেশে সবুজ গাছগাছালী বেষ্টিত একটি টিনসেট আধাপাকা বাড়িতে ছেলে সন্তান, নাতি-নাতনী নিয়ে বসবাস করছেন হতদরিদ্র এই মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। সাবেক সেনা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বাবু খাঁ’র অবসর ভাতা ও দিন মজুর ছেলেদের সামান্য আয় দিয়ে অর্ধাহারে- অনাহারে দিনাতিপাত করছেন এই পরিবারটি। বড় ছেলে ইলিয়াছ খাঁ, নিজেও স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। তার বয়স তখন ১২ বছর। পাক বাহিনীর যাতায়ত বিঘœ করতে মুক্তি সেনাদের সহযোগি হিসেবে ভাঙ্গা উপজেলার একটি বড় ব্রীজ ডিনামাইন্ড দিয়ে উড়িয়ে দেয়। গুপ্ত আশ্রয়ে থাকা মুক্তি সেনাদের ক্যাম্পে গিয়ে গিয়ে শিশু মুক্তিযোদ্ধা ইলিয়াছ খাঁ শত্রুবাহিনীর গতিবিধি জানাতেন। মুক্তি বাহিনীর সাথে শত্রু বাহিনীর এক ঘাটিতে অপারেশন গ্রুপে ইলিয়াছ খাঁ অংশ নিয়ে পাক হানাদার বাহিনীর এক সদস্যকে ছুরিকাহত করেছিলেন। আজো সেই ছুরিটি স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছেন ইলিয়াছ খাঁ।
একই পরিবারের বাপ ছেলে দু’জনই মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। সেই পরিবারটি আজো বলতে পারেন না, তারা মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা পাবেন কি পাবেন না(!)। প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরে কোন সু-ফল না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা পতিœ আমেনা বেগম প্রধান মন্ত্রী শেখ হাছিনার কাছে যাওয়ার একাদিক চেষ্টা করেছিলেন। স্থানীয় এমপির টোকেন ছাড়া দেখা করতে পারেনি প্রিয় নেতা জাতীর জনক কন্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাছিনার সাথে। আমেনা বেগম সাংবাদিকদের কাছে বলেন, বিগত তিন বছরের ও বেশী সময় ধরেন স্থানীয় নেতাদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেও তাদের মাধ্যমে বান্দরবানের এমপি বীর বাহাদুরের সাথে দেখা করা সম্ভব হয়নি। সকলে শুধু সাহার্য্যরে আশ্বাস দেয়, কিন্ত সাহার্য্য মিলেনা কারো কাছ থেকে। আমেনা বেগম বলেন, আমি আর সাহার্য্য চাইনা, আমি অধিকার চাই। আমার স্বামী ও শিশু সন্তান সেদিন জীবনের মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাণের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেই স্বাধীনতার স্বাধ কি শুধু নেতারাই নিবে? আমরা স্বাধ নয় অধিকার চাই। দেশের সকল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতণা লালনকারীদের কাছেই আহবান রেখে আমেনা বেগম বলেন, আমার স্বামীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাইতে আর কোন যুদ্ধ, কত যুদ্ধ করতে হবে আমার অসহায় পরিবারকে।
এ ব্যপারে সঠিক কোন ব্যাখা: দিতে পারেনি লামা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ মাহাবুবুর রহমান ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা। হয়তো প্রশাসন চেষ্টা করলে এর সমাধান হবে। বিষয়টি লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার-এর মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় হস্তক্ষেপ করলে দ্রুত সমাধান হবে বলে মুক্তিযোদ্ধা বাবু খাঁ’র পরবিার মনে করেন।


শেয়ার করুন