সন্ত্রাসী ধরতে সারাদেশে বিশেষ অভিযান শুরু কাল

RAB-400x240সিটিএন ডেস্ক:
৩০ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যৌথ বাহিনীর বিশেষ অভিযান শুরু হচ্ছে কাল। এর আগেও মাসব্যাপি চলছে সন্ত্রাসীদের বিরেুদ্বে অভিযান। গ্রেপ্তারও করা হয়েছে কয়েক হাজার। মামলাও হয়েছে অসংখ্য। বিএনপি নেতাদের দাবি তাদের ১০ হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকতেন। আর এই বিশেষ অভিযান নিয়ে উৎকন্ঠা ও উদ্বেগ বাড়ছে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছাড়া সবাই সেনা মোতায়েনের কথা বললেও বার বারই ইসি তা নাকচ করে দিয়েছে।
অসংখ্য প্রার্থী সুষ্ঠু ভোট নিশ্চিত করতে আবেদন করেছেন নির্বাচন কমিশনে (ইসি)। নির্বাচনী কাজে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মাঠ প্রশাসনের কর্মকা-ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে খোদ ইসি। এই রকম পরিস্থিতিতে পৌরসভা নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে সন্ত্রাসীদের ধরতে বিশেষ অভিযানে আগামীকাল মাঠে নামছে যৌথবাহিনী। গত বৃহস্পতিবার সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে ‘সক্রিয়’ দুই সহস্রাধিক সন্ত্রাসী ও গডফাদারের তালিকাসহ একটি প্রতিবেদন ইসির কাছে জমা দেয়া হয়েছে। ওই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসী-ক্যাডারদের আটক করতে অভিযান পরিচালনার সুপারিশ করা হয়।
গত ৪৮ ঘন্টায় ময়মনসিংহের ত্রিশালে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি, চট্টগ্রামে বিএনপি নেতা মীর নাছিরের গাড়িবহরে হামলা, শরীয়তপুরের নড়িয়ায় আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, ভোলার বোরহানউদ্দিনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও পাবনার ঈশ্বরদীতে বিএনপি নেতাকে পিটিয়ে আহত, যশোরের কেশবপুরের হাবাসপোলে বিএনপির মেয়র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিসে ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ এবং সীতাকুন্ডে দুই প্রার্থীর মাইক ও গাড়ি ভাংচুর করা হয়।
এদিকে গত সোমবার কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে আহত ব্যবসায়ী মকবুল হোসেন চৌধুরী শনিবার সন্ধ্যায় মারা গেছেন। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ জাতীয় দৈনিককে বলেছেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোথাও কোনো অনিয়ম পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হবে।
এদিকে স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচন বিধিমালা অনুযায়ী সোমবার মধ্যরাত থেকে বন্ধ থাকবে প্রচারণা। নির্বাচনের জন্য মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম নির্বাচনী এলাকায় যাওয়া শুরু করেছে।
সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান প্রসঙ্গে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ সুষ্ঠু রাখতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কমিশন থেকে আগেই নির্দেশনা দেয়া আছে।
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২ হাজার ২৯ জন সন্ত্রাসী পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারে সক্রিয়। এতে বলা হয়েছে, মাঠে সক্রিয় সন্ত্রাসীদের মধ্যে বিএনপি’র ১ হাজার ১২১ জন, আওয়ামী লীগের ৫৬১ জন ও জামায়াত শিবিরের ২১১ জন, জাতীয় পার্টির ৪ জন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি)১ জন, জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ১০ জন ও অন্যান্য ১২১ জন রয়েছেন।
সোমবার থেকে প্রতিটি পৌরসভায় পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত একটি করে ভ্রাম্যমাণ ও অপেক্ষমাণ দল দায়িত্ব পালন করবে। র‌্যাবের একটি করে দল ভ্রাম্যমান এবং ৮১টি দল অপেক্ষমান বাহিনী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া প্রতিটি পৌরসভায় এক প্লাটুন করে বিজিবি এবং মুলাদী, মেহেন্দীগঞ্জ, পাথরঘাটা, রামগতি ও হাতিয়া পৌরসভার প্রতিটিতে এক প্লাটুন করে কোস্টগার্ড দায়িত্ব পালন করবে।
ইসিতে অসংখ্য অভিযোগ
পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনসহ সারাদেশের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে। দলীয়ভাবে পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচন হওয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। যদিও ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধেই বেশি অভিযোগ এসেছে ইসি সচিবালয়ে। অধিকাংশ প্রার্থী সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া প্রশাসনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতসহ হয়রানির ও অভিযোগও তুলেছেন অনেক মেয়র প্রার্থী। বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল অন্তত ১৭টি পৌরসভায় সুনির্দিষ্টভাবে তাদের প্রচারকাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ দিয়েছে ইসিতে।


শেয়ার করুন