সন্ত্রাসী তৎপরতার আগাম তথ্য থাকলে জানান, নিশাকে প্রধানমন্ত্রী

141666_1ঢাকা: সন্ত্রাসী তৎপরতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আগাম কোনো তথ্য থাকলে তা দিয়ে বাংলাদেশকে সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান।

ঢাকা সফররত বিসওয়াল বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন।

এর আগে বিবিসি বাংলাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সন্ত্রাসী তৎপরতার আগাম তথ্য থাকলে তা দিয়ে সহায়তার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

নিশার সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।

বৈঠকে সাম্প্রতিক গুপ্তহত্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করে নিশা দেশাই বিসওয়াল বলেছেন- এ বিষয়ে তাদের বিশেষজ্ঞ রয়েছে।

সন্ত্রাস মোকাবেলায় অভিজ্ঞতা ও কারগরি সহায়তা দেওয়ার কথাও বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

ইহসানুল করিম বলেন, বৈঠকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড মোকাবেলায় ‘বেটার আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের’ ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। কমিউনিটি পুলিশিং বাড়ানোর কথাও উঠে এসেছে।

গত মাসে ইউএসআইডির কর্মকর্তা সমকামী অধিকার কর্মী জুলহাজ মান্নান ও তার বন্ধু মাহবুব রাব্বী তনয় হত্যাকাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।

সন্ত্রাস দমন মোকাবেলায় সহযোগিতা আরো এগিয়ে নেওয়ার জন্য সহকারী নিশাকে বাংলাদেশে পাঠানোর কথা সে সময় প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছিলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবসের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তায় বাংলাদেশ সরকারের নেয়া পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করেন নিশা দেশাই বিসওয়াল।

সাক্ষাতে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

জুলহাজ মান্নানসহ সাম্প্রতিক সময়ে মসজিদের ইমাম, চার্চের পাদ্রিসহ যে সব হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সেগুলোকে ‘সফট টার্গেট’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘সেনসেটাইজেশন’ করতেই ঠাণ্ডা মাথায় এই সব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও প্রধানমন্ত্রীর প্রাণনাশের জন্য বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করে বিসওয়াল বলেছেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও চরমপন্থা মোকাবলোয় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বিশাল অভিজ্ঞতা ও ত্যাগ রয়েছে।’

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তার সরকারের ‘জিরো টলারেন্সের’ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অপরাধীরা অপরাধী এবং সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাসীই। তাদের কোনো ধর্ম নেই।’

অতীতে অন্য দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনায় বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার করতে দেওয়া হলেও বর্তমান সরকার তা বন্ধ করেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সন্ত্রাসবাদ ও উগ্র চরমপন্থাকে মদদ দিয়েছিল অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেসময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও সন্ত্রাসীদের সহায়তা করতে বাধ্য করা হয়েছিল।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারীদের রক্ষায় জিয়াউর রহমানের শাসনামলে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ, ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা, ২০০১ সালের নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সহিংসতা এবং দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন তিনি।

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭১তম অধিবেশন চলাকালে অভিবাসন সম্পর্কিত একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেডিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে কো-চেয়ার করার জন্য শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান নিশা দেশাই বিসওয়াল।

সাক্ষাতের সময় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এবং বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট উপস্থিত ছিলেন।

 


শেয়ার করুন