সন্ত্রাসবিরোধী সভায় হামলা-গুলি, ওসিসহ আহত ২০

2016_05_28_16_47_45_sqIGdA2pb30dFLpAKDsSeP5DwlxCAT_originalপ্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে জনসচেতনতামূলক সভাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপে হামলা, সংঘর্ষ, গুলিবর্ষণ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এতে হাতিয়ার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও এক এসআইসহ আহত হয়েছে অন্তত ২০ জন।

রোববার দিনভর নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়ায় দফায় দফায় সংঘর্ষে গুলিবর্ষণ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এসময় চারটি বাস ভাঙচুর করে হামলকারীরা। ঘটনার পরে দুই পক্ষের মধ্যে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। বর্তমানে পরিস্থিতি থমথমে অবস্থায় রয়েছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

আহতদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় ফজর আলী, আকতার হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস, জসিম উদ্দিন, রুবেল উদ্দিন, রাসেদ উদ্দিন, সাহেদ উদ্দিন, সুজন, হকসাব, সাহেদ, লোকমান হোসেন, ইউনুছ, রাকিব উদ্দিন ড্রাইভার ও আবুল বাশারকে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যদের বিভিন্ন ক্লিনিতে চিকিৎসা দেয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রমতে, হাতিয়ার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মোহাম্মদ আলীর ও হাতিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ অলিউল্যাহর কর্মী- সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে এখনও টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। যেকোনো সময় আবারো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে বলে আশঙ্কা হাতিয়াবাসীর।

সূত্রমতে, রোববার সকালে হাতিয়া পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ওছখালিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে জনসচেতনতা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ঈদ পুনর্মিলনী সভার আয়োজন করা হয়। হাতিয়া পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফউদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক এমপি অধ্যাপক অলিউল্যাহ, বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ্ব মহিউদ্দিন আহম্মদ, কামাল উদ্দিন, হুমায়ন কবির বাবলু, আব্দুল হালিম আজাদ। বক্তব্য দেন, আবুল কালাম মারজাহান, নজরুল ইসলাম রাজু, আমিনুল ইকবাল প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের অভিযোগ, পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আহ্বান করা সন্ত্রাস জঙ্গিবাদ নির্মূলে জনসচেতনতা ও ঈদ পুনর্মিলনী সভা মেনে নিতে পারেনি সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলী ও তার কর্মী-সমর্থকরা।

সভার সভাপতি অ্যাডভোকেট সাইফউদ্দিন আহম্মেদ অভিযোগ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে হাতিয়া পৌর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলে জনসচেতনতামূলক সভায় যোগ দিতে উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন থেকে আসা দলীয় নেতাকর্মদের ওপর মোহাম্মদ আলীর কর্মী-সমর্থকরা অতর্কিত হামলা চালায়। এসময় পিটিয়ে, কুপিয়ে ও গুলি করে অন্তত ২০/২৫ জন দলীয়কর্মীকে আহত করে। তিনি আরো অভিযোগ করেন, মোহাম্মদ আলীর লোকজন শনিবার রাত থেকেই বিভিন্ন স্থানে সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও যানবাহন আটকে কর্মী-সমর্থকদের সভায় আসতে বাধা দেয়।

সোনাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ আলহাজ্ব নেতা নুরুল ইসলাম প্রকাশ মালেশিয়া নুরুল ইসলাম ও নিঝুম দ্বীপ ইউপি চেয়ারম্যান মেহেরাজ উদ্দিন অভিযোগ করেন, প্রধানমন্ত্রীর ডাকে সাড়া দিয়ে তারা জনসচেতনতামূলক সভায় যোগ দিতে আসার পথে মোহাম্মদ আলীর লোকজন পথে পথে তাদের এবং কর্মীসমর্থকদের বাধা দেয় ও মারধর করে। দুপুর দুটার দিকে মোহাম্মদ আলীর বাড়ির কাছে এমপিপুল নামক স্থানে তার কর্মী-সমর্থকরা সভায় যোগ দিতে আসা অলিউল্যার বেশকিছু কর্মী- সমর্থককে আটক করে রাখে।

এ খবর পেয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবুল হাসনাত মঈন উদ্দিন এবং হাতিয়া থানার ওসি একদল পুলিশ নিয়ে আটককৃতদের উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র মোহাম্মদ আলীর কর্মী-সমর্থকরা পুলিশ ও ইউএনওকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় পুলিশ ও ৫০/৬০ রাউন্ড গুলি নিক্ষেপ করে। সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া ইটের আঘাতে ওসি এটিএম আরিচুল হক ও দারগা জাহাঙ্গীরসহ ২০ জন আহত হন। এ সময় সন্ত্রাসী হামলার ভয়ে হাতিয়া শহরের সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়।

হাতিয়া থানার ওসি ও ইউএনও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, আওয়ামী লীগের সভায় যোগ দিতে আসা কিছু নেতাকর্মী আটকের খবর পেয়ে তাদের উদ্ধার করতে এমপিরপুল এলাকায় যায় ফোর্স। এসময় মোহাম্মদ আলীর কর্মীসমর্থকরা পুলিশকে লক্ষ করে এলোপাতাড়ি গুলি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশকিছু লোকজন আহত হয়।

মোহাম্মদ আলীর কর্মীসমর্থকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি মোহাম্মদ আলীর ঘনিষ্ট ও হাতিয়া পৌরসভার মেয়র এ কে এমইউছুফ আলী এ ব্যাপারে বলেন, ৩/৪ দিন আগে স্থানীয় আফাজিয়া বাজারে অলিউল্যার লোকজন হাতিয়ার বর্তমান এমপি আয়েশা ফেরদৌস ও তার স্বামী সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে অশালীন স্লোগান দিয়েছিল। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ হাতিয়ার সাধারণ মানুষ অলিউল্যাহ ও তার কর্মীসমর্থকদের প্রতিহত করছে।

নোয়াখালী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম জহিরুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বর্তমানে হাতিয়ার পরিস্থিত প্রশাসনের অনুকূলে রয়েছে।

— বাংলামেইল২৪ডটকম


শেয়ার করুন