সুফল পাচ্ছেনা জনগণ

সদ্য সরকারিকৃত কলেজ সমূহের শিক্ষা ব্যবস্থা চরম বিপর্যয়ের মুখে

মোজাম্মেল হকঃ
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ৩০ শে জুন যে সকল উপজেলায় সরকারি কলেজ নেই সে সকল উপজেলায় একটি করে কলেজ সরকারি করণের ঘোষণা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সাল থেকে কক্সবাজার জেলার ৫টি সহ দফায় দফায় ৩০৩টি কলেজকে সরকারি করণের সম্মতি প্রদান করেন। পরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তারা উক্ত কলেজ সমূহ সরেজমিনে পরিদর্শন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিষ্ঠান প্রধানরা কলেজের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তির দানপত্র দলিল (ডিড অব গিফ্ট) সরকারের কাছে হস্থান্তর করেন।
জাতীয়করণের পর এসব কলেজের কর্মরত শিক্ষকদের অবস্থান ও মর্যাদা কি হবে তা নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। সরকারি কলেজে কর্মরত শিক্ষকরা বলেছেন, আত্তীকৃত শিক্ষকরা ক্যাডারভূক্ত হতে পারবেননা। তারা “নো বিসিএস নো ক্যাডার” শ্লোগান দিয়ে রাজপথে আন্দোল করেছেন, কলেজে ক্লাস বর্জন করেছেন। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির তীব্র আপত্তি ও বিরোধিতার পর ও শিক্ষা মন্ত্রাণালয় ২০১৮ সালের ৩১শে জুলাই ‘সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষক ও কর্মচারী আত্তীকরণ বিধিমালা ২০১৮’ জারি করেন। ২০১৮ সালের এই বিধিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, সদ্য সরকারি হওয়া কলেজ শিক্ষকরাও শিক্ষা ক্যাডারে অন্তর্ভূক্ত হতে পারবেন। তবে তাদেরকে সরকারি কর্মকমিশনের অধিনে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। এই বিধিমালার আলোকে ২০১৮ সালের ৮ আগষ্ট ৩০৩টি কলেজকে সরকারি করণের আদেশ (জিও) জারি করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
দুই বছর অতিক্রান্ত হয়েছে কিন্তু অদ্যাবধি শিক্ষকদের আত্তীকরণ সম্পন্ন হয়নি। বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় কাগজ পত্র যাচাই-বাছাইয়ের কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি। কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ের নামে কেবল হয়রানি করা হচ্ছে। বেসরকারি কলেজের নিয়োগ বিধি না জানা লোকদের দিয়ে কাগজ পত্র যাচাই-বাছাই করার কারণে মূলত আত্তীকরণের এই ধীরগতি হচ্ছে বলে শিক্ষক নেতারা বার বার দাবী করে আসছেন। কাগজ পত্র যাচাই-বাছাইয়ের জন্য বিভিন্ন দপ্তর, অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে শিক্ষা ক্যাডারের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তারা ইচ্ছাকৃত ভাবে আত্তীকরণের কাজটিকে দীর্ঘায়িত করছে। যে সব কর্তারা “নো বিসিএস নো ক্যাডার” আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদেরকে দিয়ে কখনো এই মহৎ কাজ সুষ্ঠুভাবে এবং দ্রুত গতিতে সম্পন্ন করা মোটেই সম্ভব নয় বলে শিক্ষক নেতারা বার বার আপত্তি জানিয়ে আসছেন। শিক্ষক নেতারা আরো দাবী করে আসছেন যে, উক্ত চক্রকে মন্ত্রণালয় থেকে সরাতে হবে এবং বেসরকারি কালেজের নিয়োগ বিধি সম্পর্কে অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দিতে হবে। শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা চাচ্ছেন যে আত্তীকরণের বিষয়টি যত বেশি ঝুলিয়ে রাখা যাবে তত বেশি তাদের জন্য সুবিধা হবে। ইতিমধ্যে শত শত শিক্ষক কর্মচারী বেসরকারি অবস্থায় অবসরে চলে গেছেন, আরো শত শত শিক্ষক কর্মচারী অবসরে চলে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে।
সরকারিকৃত কলেজ গুলোতে এমনিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যে সব বিভাগের শিক্ষক অবসরে চলে যাচ্ছেন সে সব বিভাগে নতুন করে শিক্ষক নেওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে অনেক কলেজে অনেকগুলো পদ খালি হয়ে গেছে। ক্ষেত্র বিশেষে পুরো বিভাগের সব গুলো পদ খালি হয়ে গেছে। কলেজ গুলোর শিক্ষা কার্যক্রমে মারাত্মক ধস নেমে এসেছে। শত শত শিক্ষার্থী ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এর দায়ভার কে নেবে?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রতিটি উপজেলায় একটি করে কলেজ সরকারি করণের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার আলো ঘরে পৌঁছে দেয়ার জন্য। কিন্তু হিতে বিপরীত হচ্ছে। এদিকে সরকারিকৃত কলেজ শিক্ষকরা বেসরকারি কলেজের শিক্ষকদের ন্যায় বেতন ভাতা ভোগ করছেন। সরকারি কোন সুযোগ-সুবিধা এখনো পাচ্ছেন না বিধায় শিক্ষার্থীদের থেকে বেসরকারী কলেজের ন্যায় টিউশন ফিসহ অন্যান্য ফি গুলো আদায় করা হচ্ছে। এতে করে সরকারি করণের যে সুফল শিক্ষার্থীসহ সাধারণ জনগণ পাওয়ার কথা তা এখনো পাচ্ছেনা। ফলে যে উদ্দেশ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কলেজ সরকারি করেছেন সে উদ্দেশ্যে ব্যহত হচ্ছে। এমতাবস্থায় ৩০৩টি কলেজের শিক্ষক কর্মচারীদের একমাত্র দাবী হচ্ছে কোন ধরনের গড়িমসি নয়, কোন ধরনের কালক্ষেপন নয়। অনতিবিলম্বে, কালবিলম্ব না করে শিক্ষক কর্মচারীদের আত্তীকরনের কাজ সম্পন্ন করা হোক।
প্রভাষক
রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ
টেকনাফ সরকারি কলেজ।
ও সাংগঠনিক সম্পাদক সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতি (সকশিস) কক্সবাজার জেলা।


শেয়ার করুন