“আন্দোলনের গন্তব্য হাসিনার বিদায়, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করুন। প্রতিটি এলাকায় জনগণকে সঙ্গে নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলুন, যেন গণতন্ত্রের বিরোধী শক্তি ঘর থেকে বেরুতে না পারে।”
৫ জানুয়ারি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ উপলক্ষে ইস্ট লন্ডনের অট্রিয়াম অডিটোরিয়ামে রোববার এক সভায় একথা বলেন সাত বছর ধরে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যান তারেক।
“৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে ঢাকাকে যেমন সারা বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছিল, এবার ঢাকার ভেতরেও এক এলাকা অন্য এলাকা বিচ্ছিন্ন করে দিন। যাতে করে একটি বিশেষ অঞ্চলের কোনো বাহিনী গিয়ে আন্দোলনকারী জনগণের ওপর নির্যাতন চালাতে না পারে। একইভাবে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও নিজ নিজ এলাকা বিচ্ছিন্ন করে দিন।”
“আন্দোলন সফল না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরে যাবেন না। লক্ষ্য একটি, গন্তব্যস্থল একটি। শেখ হাসিনা যেদিন বিদায় নেবে, আন্দোলনকারীরা সেদিন ঘরে ফিরবে,” নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়ার ছেলে।
“বিভ্রান্তির অবকাশ নেই। যখন খবর পাবেন শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছে, ঠিক তখনই রাজপথ ছাড়বেন। তার আগে নয়।”
দশম সংসদের বছর পূর্তির দিন ৫ জানুয়ারি সোমবার বিএনপি ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে সমাবেশ ও কালো পতাকা মিছিলের কর্মসূচি দেয়।
একই দিন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ রাজপথে বিরোধী দলকে মোকাবেলার ঘোষণা দিলে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ঢাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে পুলিশ। নয়া পল্টনে বিএনপি কার্যালয়ে শনিবার রাতে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তালা, গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলা হয় দলীয় চেয়ারপারসন খালেদাকে।
ঢাকায় কর্মসূচি ঘোষণার একদিন আগে লল্ডনে দেওয়া বক্তব্যে তারেক বলেন, “আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ছে। আর থামিয়ে দেওয়া যাবে না। এ আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। গতিশীল করতে হবে।”
আন্দোলনে থাকতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আন্দোলন থেমে গেলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই নিজে বাঁচতে, পরিবার বাঁচাতে, দেশ বাঁচাতে, জনগণ ও গণতন্ত্র বাঁচাতে চলমান এই আন্দোলনের বিকল্প নেই।
“আওয়ামী লীগের সঙ্গে জনগণ নেই। তাদের সঙ্গে আছে বিশেষ অঞ্চলের কিছু র্যাব পুলিশ। এই র্যাব-পুলিশ ছাড়া এদের রাস্তায় নামার মুরোদ নেই। র্যাব-পুলিশ ছাড়া এরা কিছুই করতে পারবে না।”
বিএনপি নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের ‘যৌক্তিক’ দাবিতে আন্দোলন করছে দাবি করে তাতে শরিক হতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তারেক।
বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর এই ছেলে পুলিশের উদ্দেশে বলেন, “শেখ হাসিনাকে রক্ষার জন্য আর কত গুলি চালাবেন? এ পথ থেকে সরে আসুন। জনগণের ওপর গুলি চালাবেন না।”
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ‘অবৈধ সরকারের’ নির্দেশ না মানতে প্রশাসনের প্রতিও আহ্বান জানান তিনি।
“এবার জনগণের পক্ষ নিন। অন্যায় আদেশ মানবেন না। নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করুন।”
বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ‘বেটার বাংলাদেশ’ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তরুণদের উদ্দেশে তারেক বলেন, “সেই বাংলাদেশে কালো বিড়াল সাদা করা হবে না। অন্যায়কে অন্যায়, ন্যায়কে ন্যায় বলা হবে।
“গণতন্ত্রের কথা বলে অন্য দলের ওপর জেল-জুলুম করা হবে না। স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে ক্রেস্টের স্বর্ণ চুরি করা হবে না। অন্যায়ের সমালোচনা করলে গণমাধ্যম বন্ধ করা হবে না। ফেইসবুকে সমালোচনার জন্য জেল-জুলুম হবে না।”
গত কয়েকটি অনুষ্ঠানে ইতিহাস নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যের জন্য সমালোচিত তারেক এবারের সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘দুর্নীতিবাজ’ বলে আখ্যায়িত করেন।
“তারা বাপ-বেটি দুজনই দুর্নীতিবাজ। স্বাধীনতার পর বন্ধুপ্রতীম ভারত থেকে একজন কর্মকর্তা শেখ মুজিবের কাছে এসেছিলেন। শেখ মুজিবকে তিনি জানিয়েছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগৃহীত কিছু টাকা ভারত সরকারের কাছে রয়েছে। এই টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে ফেরত আনতে শেখ মুজিবকে নিয়মানুযায়ী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তিনি আহ্বান জানান। কিন্তু প্রতি-উত্তরে শেখ মুজিব ব্যাংকের মাধ্যমে না এনে এসব টাকা ট্রাকে বস্তায় ভরে পাঠানোর প্রস্তাব দেন এবং বলেন, এসব টাকা তিনি পরবর্তী নির্বাচনে খরচ করবেন।”
“এটি প্রমাণ করে শেখ মুজিব বাংলাদেশে প্রথম দুর্নীতিকে ভিত্তি দিয়েছিলেন। শেখ মুজিবের মতো তার কন্যাও একই পথ অনুসরণ করছে।”
আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না দাবি করে তারেক বলেন, “তারা কথায় কথায় স্বাধীনতার চেতনার কথা বলে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে। আসলে এর কোনোটিতেই তারা বিশ্বাস করে না।
“আওয়ামী লীগ মূলত রাজাকারের দল। বাংলাদেশের বহু রাজাকার এই দলে রয়েছে। এমনকি শেখ হাসিনার ঘরেও রয়েছে নামকরা রাজাকার। রাজাকারদের সঙ্গে সখ্য তাদের দীর্ঘদিনের।”
যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। সভা পরিচালনা করেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ।