শিশু ও শিক্ষক হত্যার আসামীরা এখন জড়িয়ে পড়েছে ইয়াবা পাচারে

নিহত ২জনের ছবি

শফিক আজাদ,উখিয়া প্রতিনিধি। 
সীমান্তবর্তী উপজেলা টেকনাফের বহুল আলোচিত কলেজ শিক্ষক সামশুল আলম ও শিশু বোরহান হত্যা মামলার ৩ আসামীর রয়েছে ইয়াবা কানেকশন। এ দুটি হত্যা মামলার আসামীরা জামিনে বেরিয়ে এসে ইয়াবা বানিজ্যের মাধ্যমে বর্তমানে অঢেল সম্পদের মালিক । এতে দুটি হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেতে তারা উঠেপড়ে লেগেছে। যাদের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে তারা ৩ জনই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী।
জানা যায়, ২০১৫ সালের ৩ ফেফ্রয়ারী টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের আলীখালী গ্রামে ইয়াবা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে শত শত লোকের সামনে প্রকাশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী জিন্নাহ ও মোস্তাক প্রকাশ গুজুর নেতৃত্বে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা জামাল হোছনের শিশু পুত্র বোরহান উদ্দিনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। ঘটনাস্থলে বোরহানের মৃত্যু নিশ্চিত করে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। সেদিন রাতে শিশু বোরহানের মা খুরশিদা বেগম বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১১,তাং-০৩-০২-২০১৫ ইংরেজি। এতে আসামী করা হয় উত্তর আলীখালী এলাকার ফরিদ আহম্মদের ছেলে দিদারুল আলম জিন্নাহ ও মোস্তাক আহমদ গুজুসহ ১০ জনকে। হত্যাকান্ডের পর জিন্নাহ ও মোস্তাক আদালতে আত্মসমর্পণ করে অভিযোগ গঠন না হওয়া পর্যন্ত জামিন পান। জামিনে এসে র‌্যাবের ক্রয়ফায়ারে নিহত নুর মোহাম্মদের ম্যানেজার হিসেবে ইয়াবা ব্যবসায় সম্পৃক্ত হয়ে জিন্নাহ ইয়াবা ইয়াবা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে। পরিবর্তিতে এ ব্যবসায় যুক্ত তার মোস্তাক প্রকাশ গুজুকে। পরে তাদের নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেট আশেপাশের পুরো ইয়াবা বানিজ্যের নিয়ন্ত্রন নেয়। সাগর পথ সহ বিভিন্ন মাধ্যমে ইয়াবা বানিজ্য নির্বিঘেœ্ন চালিয়ে নিতে ম্যানেজ করে রাখে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা সহ পুলিশের দুর্নীতিবাজ গুটিকয়েক সদস্যকে। এতে অল্প সময়ে বিপুল পরিমান সম্পদের মালিক বনে যায় তারা। হৃীলা ছাড়াও কক্সবাজার ও চট্রগ্রামে প্লাটবাড়ী ক্রয় করে তাতে ইয়াবা মজুতের আড়ত হিসেবে ব্যবহার শুরু। তাদের সিন্ডিকেট ছড়িয়ে পড়ে কক্সবাজার চট্রগ্রাম ঢাকা সহ সর্বত্র। বর্তমানে শিশু বোরহান হত্যা মামলা থেকে বাদ যেতে তারা ইয়াবার মাধ্যমে গড়া মোটা অংকের টাকার মিশন নিয়ে নেমেছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে বিগত ২০১৪ সালের ৩১ অক্টোবর বিকেলে হোয়াইক্যং আওয়ামীলীগ নেতা ফিরোজ চৌধুরীর উপস্থিতিতে জমি বিরোধ সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে খারাংখালী গ্রামের মৃত মোহাম্মদ ইলিয়াছের পুত্র মহি উদ্দিনের নেতৃত্বে ১৫/২০ জনের একদল সন্ত্রাসী টেকনাফ ডিগ্রি কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মো. শামসুল আলমকে পিটিয়ে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত শিক্ষকের স্ত্রী দিলসাদ আক্তার বাদী হয়ে স্বরাষ্টমন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন সহ জ্ঞাত-অজ্ঞাত ৪১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পুলিশ এ মামলায় মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করলেও ৬ মাস না যেতেই সে জামিনে বেরিয়ে আসে। কক্সবাজারের আলোচিত ইয়াবা ব্যবসায়ী ইয়াবা মুফিজ নিহত হওয়ার পর সে গড়ফাদারের ভুমিকায় অবতীর্ণ হয়ে ক্ষমতাশীন দলের আশ্রয়ে থেকে ইয়াবা বানিজ্যের মাধ্যমে গড়ে তুলে সারাদেশে বিশাল সিন্ডিকেট। এ সিন্ডিকেটের মাধ্যেমে সে টেকনাফ থেকে সাগর পথেই সে বড় বড় ইয়াবার চালানগুলো ঢাকায় পৌছে দিচ্ছে। সেও হত্যা মামলা থেকে বাদ যেতে উঠেপড়ে লেগেছে। শিশু বোরহান হত্যা মামলার আসামি দুই ভাই জিন্নাহ ও মোস্তাকের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় জাফর মেম্বার জানান, শিশু বোরহান হত্য মামলার আসামী এ দুই এলাকার চিন্থিত ইয়াবা গড়ফাদার,তারা এলাকার যুবসমাজকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। যুবকদের দিয়ে সারাদেশে ইয়াবা পাচার করে যাচ্ছে এলাকার সবাই তা জানে। অন্যদিকে কলেজ শিক্ষক নিহত শামসুল আলমের ভাগিনা আয়াজ উদ্দিন অভিযোগ করে জানান, জামিনে এসেই হত্যা মামলার আসামি মহিউদ্দিন মামলা তুলে নিতে আমার মামীসহ অন্যান্যদের হুমকি ধমকি দিয়ে যাচ্ছে। এতে আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি। হত্যা মামলা আসামীদের ইয়াবা বানিজ্যের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টেকনাফ থানার ওসি মাঈন উদ্দিন বলেন,তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হবে,অপরাধী কাউকেই ছাড় দেওয়া হবেনা।


শেয়ার করুন