শিক্ষায় ভ্যাট,ইসলাম সমর্থন করে কি?

2275-400x183সিটিএন ডেস্ক:
বে-সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টিউশিন ফির ওপর কর প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের দাবি শিক্ষা পণ্য নয়, মানুষের মৌলিক অধিকার। এ মৌলিক অধিকার রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আর এই মৌলিক অধিকারের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কেন কর বা ভ্যাট নেবে? শিক্ষার্থীরা বলছে,গুলি করে মেরে ফেল। শিক্ষার জন্য জীবন দিতে রাজি, তবুও ভ্যাট দেবো না।
মানব সভ্যতার শুরু থেকে কেউ কি শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে ভ্যাট বা কর নিয়েছে? ইসলামী খেলাফত বা রাসুল (স.) সময়ও জ্ঞান অর্জনকারীদের ও প্রতিষ্ঠানকে সাহায্য করা হতো। কর আরোপ তো দুরের কথা। এমনকী ইসলামী খেলাফতের সময় অমুসলিম রাষ্ট্রের কাছ থেকে কর আদায় করা হতো। কিন্তু সেখানকার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কোন কর নেওয়া হতো না।

ইসলামী জীবনব্যবস্থা জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার ওপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করেছে। বর্তমান বিশ্বের জ্ঞান-বিজ্ঞানের এই যে চরম উৎকর্ষতা ইসলামেরই অবদান। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. জ্ঞানালোক ও সভ্যতার যে বিরাট প্রাসাদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তা পৃথিবীকে অলংকৃত করে আসছে তার সময়কাল থেকেই।

পবিত্র কোরআন মাজিদে মুসলমানদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে-‘হে আমাদের রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি কর।’ তাছাড়া সাহাবায়ে কেরাম মহানবীকে (সাঃ) বলতে শুনেছেন-‘জ্ঞান হচ্ছে মুমিনের জন্মগত অধিকার, যেখানেই এটা দেখ গ্রহণ কর।’

রাসুলে কারীম (সাঃ)-এর নিকট অবতীর্ণ ওহীর প্রথম কথাতেই অধ্যয়ন করার নির্দেশসহ মানব সৃষ্টিতত্ত্ব ও কলমের উল্লেখ করে গবেষণার প্রতি উৎসাহ প্রদান করে। সূরা আলাকের প্রথম ৫ আয়াতে বলা হয়েছে ‘পড়, তোমার প্রভুর নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত হতে। পড়, আর তোমার প্রভু মহামহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।’

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন মানুষকে সকল সৃষ্টি জীবনের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন। মানুষের এই মর্যাদা তার জ্ঞান-বুদ্ধির জন্যই। মহান আল্লাহ পাক ফেরেশতাদের অসম্মতি সত্ত্বেও হজরত আদমকে (আঃ) সৃষ্টি করেন। তারপর তাকে সকল কিছুর নাম শিক্ষা দেন। এই নাম শিক্ষা মানেই জ্ঞান ও বিদ্যা। আর বিদ্যা অর্জনের মাধ্যমেই হজরত আদম (আ) ফেরেশতাদের থেকে সেজদা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন অর্থাৎ সম্মানের শীর্ষ পর্যায়ে উন্নীত হন। পবিত্র কোরআনুল কারীমে বলা হয়েছে ‘আর স্মরণ কর যখন তোমার প্রতিপালক ফেরেশতাদের বললেন, আমি পৃথিবীতে প্রতিনিধি পাঠাতে যাচ্ছি। ফেরেশতারা বলল, আপনি কি সেখানে এমনকিছু পাঠাবেন যারা অশান্তি ঘটাবে ও রক্তপাত করবে? আমরাই তো আপনার প্রশংসা, মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করছি।

তিনি বললেন, আমি যা জানি তোমরা তা জান না। আর তিনি আদমকে যাবতীয় বস্তুর নাম শিক্ষা দিয়ে সেগুলোকে ফেরেশতাদের সামনে প্রকাশ করলেন এবং বললেন, এগুলোর নাম আমাকে বল, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।’ (সুরা আল-বাকারাহ)।
কোরআন কারিমে রয়েছে শিক্ষা সংক্রান্ত অনেক আয়াত রয়েছে। কোরআনেই বলা হয়েছে, ‘জিজ্ঞেস করুণ, যারা জানে আর যারা জানে না তারা উভয় কি সমান হতে পারে?’ (যুমার: ৯)। কোরআনের এ আয়াত দ্বারা বোঝে আসে, এ শিক্ষক শিক্ষার্থীরা সমাজের সাধারণদের থেকেও উর্দ্ধে। তারা জ্ঞানের ভা-ার। কোরআন তাদের মূল্যায়ণ দিয়েছে। তবে সেই মূল্যায়ণ ও অধিকার ছিনিয়ে নিতে চায় রাষ্ট্র। রাষ্ট্রকর্তাদের প্রতি আহ্বান দেশ চালান, তবে শিক্ষার্থীদের ভ্যাট দিয়ে নয়। দেশ চালান, শিক্ষার্থীদের অধিকার ফিরিয়ে দিতে।


শেয়ার করুন