শামসুল হুদা ছিদ্দিকী আপসহীন এক সংগ্রামীর নাম

কালাম আজাদ

কালাম আজাদ

কালাম আজাদ :

বায়ান্নের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মৃত্যুর দশক পর্যন্ত বাংলার আকাশে  জাতীয় ও আঞ্চলিক এবং স্থানীয় পর্যায়ে যত ধরনের আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে প্রায়ই সবকটি আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা শামসুল হুদা ছিদ্দিকী। শামসুল হুদা ছিদ্দিকী দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার বরেণ্য শিক্ষাবিদ ছিদ্দিক আহমদ ও সুফিয়া খাত‍ুনের গর্ভে  ২২ মার্চ ১৯৩১ জন্ম নেন। স্বভাবত পারিবারিক নিয়মে গ্রামের মক্তব ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থেকে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে ভর্তি করে কুতুবদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে শুরু হয় বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন। কুতুবদিয়া উপজেলা চট্টগ্রাম শহরের কাছাকাছি অবস্থানের কারণে ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র হত্যার খবরটি কুতুবদিয়ায় পৌঁছায় ২২ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন চট্টগ্রাম থেকে আসা এ কে খান স্টিমার থেকে সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকার মাধ্যমে এ খবরটি পায়। তৎক্ষনাৎ ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে কুতুবদিয়ায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে কুতুবদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও ধুরং হাই স্কুলের শিক্ষার্থীরা। রাজধানী ঢাকার ছাত্র হত্যার খবর কুতুবদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পৗঁছার পরে বিদ্যালয়ের ছাত্ররা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট পালন করে ও বিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এই আন্দোলনে এস কে মকবুল হোসেন, মোহাম্মদ নুরুল ইসলামসহ কয়েকজনের সহায়তায় নেতৃত্বও দিয়েছেন ভাষার দাবির মিছিল ও সমাবেশে।  ১৯৫২ নালে কুতুবদিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাশ করে ভর্তি হন চট্টগ্রাম কলেজে (ওই সময় কক্সবাজার জেলায় কোনো কলেজ ছিলো না)। ওই কলেজে পড়াকালীন সময়ে অনুষ্ঠিত হয় ’৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট আন্দোলন। পাকিস্তান বিরোধী প্রগতিশীল রাজনীতির জড়িত হয়ে পড়েন তিনি। জড়িয়ে পড়েন ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতিতে। চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আই.এ এবং বি.এ ডিগ্রী অর্জন করার পর ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির সঙ্গে জড়িত হন।।

shamsul-huda-siddiqi-25কক্সবাজার জেলা ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক, পরে সভাপতি হিসেবে। ১৯৬৫ সালের দিকে ন্যাপ ভাসানী ও মোজাফ্ফর নামে দু’গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গেলে তিনি ভাসানী ন্যাপের থেকেই যান। ৬৬ এর ৬ দফা, ’৬৯ এর গণঅভুত্থান, একাত্তরের অসহযোগ আন্দোলন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ (ভাসানী) পক্ষ থেকে কক্সবাজার মহকুমা সংগ্রাম কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতার পর ন্যাপ (ভাসানী) এর কক্সবাজার মহকুমা সভাপতি নির্বাচিত হন এবং কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। । ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুফীদুল আলম ও সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন সাইফুল্লাহ খালেদ।
১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সাধারণ নির্বাচনে ন্যাপ (ভাসানী)’র মনোনীত প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. শামসুদ্দিন আহমদ চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন। ওই নির্বাচনে দেশের প্রায় সবকটি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করা হয়।
১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের জাগদলে যোগদেন এবং কক্সবাজার মহকুমা কমিটির একজন সদস্য হিসেবে কাজ করেন। এ সময় আহ্বায়ক ছিলেন মাহমুদুল করিম চৌধুরী। ১৯৭৯ সালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য এবং কুতুবদিয়া থানা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন সাইফুল্লাহ খালেদ। পরে হুদা ছিদ্দিকী কক্সবাজার জেলা বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং আমৃত্যু তিনি কক্সবাজার জেলা বিএনপির সিনিয়র সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।
১৯৮১ সালের সামরিক শাসন জারির পর কারারুদ্ধ ও পরে মুক্তি লাভ। রাজনীতির পাশাপাশি শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ছিলেন। সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী হিসেবে তিনি কুতুবদিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমানে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়) ও আমজাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া কুতুবদিয়া, কক্সবাজারে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠায় ও অবকাঠামো উন্নয়নে যথেষ্ট সহায়তা করেন। মৃত্যু: ১৯ জুলাই ২০০৭।


শেয়ার করুন