শহরের লাইটহাউজে সরকারি পাহাড় কেটে প্লট বিক্রি

0001-300x225সিটিএন ডেস্ক :

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলামের সহযোগীতায় শহরের লাইটহাউজের সৈকত পাড়ার পাশের ৩ টি পাহাড় কেটে শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আবদুর রহমানের নেতৃত্বে তৈরি করা হচ্ছে প্লট। বেশ চওড়া দামে তা বিক্রিও করা হয়েছে কয়েকজনের কাছে। ৪০ বর্গফুট আয়তনের প্রতিটি প্লট দুই থেকে তিন লাখ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই তিনটি পাহাড়ে গত এক মাসে গড়ে উঠেছে শখানেক ঘর । কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের মালিকানাধীন ওই পাহাড়টি এর আগেও একবার দখল করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলেছিল ওই সিন্ডিকেটটি। এ নিয়ে ২৮ মার্চ দেশের শীর্ষ স্থানীয় একটি দৈনিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর দিন জেলা প্রশাসন সেখানে উচ্ছেদ অভিযানও পরিচালনা করে। কিন্তু উচ্ছেদ অভিযানের পর আর ওই পাহাড়ের খবর নেননি সংশ্লিষ্ঠরা। এই সুযোগে বেপেরোয়া পাহাড় খেকোর দখল আবারো দখল নেয় ওই পাহাড় ৩ টি। গড়ে তোলে শতাধিক ঘরবাড়ি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের বড়কর্তাকে ‘ম্যানেজ’ করে সৈকত পাড়ার পাশের ৩ টি পাহাড় কেটে প্লট তৈরি করছেন কক্সবাজার শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবদুর রহমান ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। শহরের ৭০ জনের সমন্বয়ে গড়ে উঠা ওই সিন্ডিকেটে রয়েছেন শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগের আরো অনেক নেতা, পরিবেশের অধিদপ্তরের বড়বাবু, সাংবাদিক, সাবেক সরকারি কর্মকর্তা ও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ।
লাইট হাউজ পল্লী উন্নয়ন সমিতির নামে গড়ে উঠা ওই পাহাড় খেকোদের দলে রয়েছেন কক্সবাজার শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আব্দুর রহমান, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম ও তার ব্যক্তিগত কর্মচারী নুনিয়াছড়ার বাসিন্দা শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদস্য মো. আলম ও তার বড় ভাই নুরুল হক, কক্সবাজার জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক জসিম উদ্দিন ছিদ্দিকী (হাজী জসিম), অবসারপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য (জেলা পুলিশে বিশেষ শাখায় কর্মরত ছিলেন) শামসুল আলম, শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সহ সভাপতি শাহাদাৎ হোসাইন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আলী মুন্না, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক মো. আলী, সদস্য মো. হানিফ ও সমিতির ক্যাশিয়ার মোবারক, ১২ নং ওয়ার্ড সাধারন সম্পাদক আব্দুর শুক্কুর, কারাগার পরিদর্শক রিয়াজ মোর্শেদ, ঝাউতলার হোটেল রেনেসার পাশের কম্পিউটার দোকান মালিক সুমন, হলিড়ের মোড়ের হোটেলের এলিনের নিচের কাশফা স্টোরের মালিক, আইনজীবি সহকারী কামাল, সাংবাদিক পরিচয়ধারী মামুন, ফারুক, কলাতলীর মাসুদ, গাড়ির মাঠের কামাল, ২ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ নেতা মুজিবুর রহমান, টেকপাড়ার বাসিন্দা শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগ সদস্য তারেক। লাইট হাউজের আহাম্মদ মিয়া, কলাতলীর ব্যবসায়ী ফরিদ, ভুট্টো, বাহারছড়ার জয়নাল ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য মামলার পলাতক আসামী ও রোহিঙ্গা যুবক।
শহরের সৈকতপাড়া প্রথম পাহাড়টি দখলে রয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী আহাম্মদ মিয়ার। ওই পাহাড়ে রয়েছে কয়েকজন সাংবাদিক ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বড় বাবু ও তার ব্যক্তিগত কর্মচারী স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মো. আলমের প্লট। এছাড়া আরো অনেক তৈরি করে ঘরভাড়া দিয়েছেন ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা। এর পাহাড়টিতে আবাসন তৈরি করছেন শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি আব্দুর রহমান ও তার অনুসারীরা। তার পরের পাহাড়ে রয়েছে সমিতির ক্যাশিয়ার ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি ঘনিষ্ঠ মোবারক সহ অন্যান্যদের প্লট।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, ৩টি পাহাড়ের বিশাল অংশ কেটে সমতল করা হয়েছে। সেখানে তৈরি হয়েছে অসংখ্য টিনের ঘর। অধিকাংশ ঘরে বসতি স্থাপন করেছে রোহিঙ্গা ও শহরের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। স্থাপন করা হয়েছে গভীর নলকূপ। পালাক্রমে পাহারা বসানো হয়েছে। সার্বক্ষনিক পাহারদার হিসেবে রয়েছে স্থানীয় আবু সালেহ।
এদিকে এ বিষয়ে সমিতির ক্যাশিয়ার মোবারক জানান, উচ্ছেদের পরও কিছু স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে। সেখানে সমিতির প্রত্যেক সদস্যকে প্লট দেওয়া হয়েছে। তবে সমিতিতে কে কে আছেন তা তিনি জানেন না।
আর পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের ব্যক্তিগত কর্মচারী ও নুনিয়ারছড়ার বাসিন্দা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মো. আলম জানান, সেখানে তার প্লট রয়েছে। তবে তার স্যারের নামে কোন প্লট নেই। কিন্তু ওখানে প্লট রয়েছে এমন একটি সূত্র জানায়, সরদার শরিফুর ইসলামের নামে প্রথম পাহাড়ে প্লট বরাদ্দ রয়েছে। সেই দখল বুঝে নিয়েছেন আলম। বিষয়টি সর্দার শরিফুলও জানেন।
তবে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, সেখানে তার কোন প্লট নেই। এটি তার বিরুদ্ধে ওই সিন্ডিকেটের অপপ্রচার।
পাহাড় দখলে নেতৃত্বদানকারী শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি আব্দুর রহমান জানান, সমিতির উন্নয়নের জন্য ওখানে প্লট তৈরি করা হচ্ছে। জেলার বাইরে থেকে আগতরা পুরো কক্সবাজার গিলে হচ্ছে কিন্তু এখানকার স্থানীয়দের বসবাসের জায়গাও নেই। তাই কিছু মানুষের বাসস্থানের জন্যই ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
এদিকে প্রশাসন একদফা দখল মুক্ত হওয়ার পর আবারো দখল হওয়ার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরকে দায়ী করেছেন জেলার সচেতন মহল। তাদের মতে দখলকারীদের বিরুদ্ধে মামলা না করে তাদেরকে পাহাড় কাটতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার সোসাইটির সহ সভাপতি কলিমউল্লাহ জানান, কক্সবাজারে পাহাড় ও বন ধ্বংস হওয়ার জন্য দায়ী সরদার শরিফুল ইসলাম। সৈকত পাড়ায় পাহাড় দখলে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ওই কর্মকর্তা দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দীপক শর্মা জানান, প্রথম দফায় পরিবেশ অদিদপ্তরের পক্ষ থেকে ওই সিন্ডিকেটের বিপক্ষে মামলা করা হলে দ্বিতীয়বার দখল করার দু:সাহস দেখাতো না দখলকারীরা।
তিনি আরো জানান, পরিবেশ অদিদপ্তরের প্রত্যেক্ষও পরোক্ষ মদদেই শহর স্বেচ্ছাসেবকলীগের শহর সভাপতি আব্দুর রহমান ওই ধ¦ংসাযজ্ঞ চালাচ্ছেন।
আর কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম জানান, অতীতে ওই পাহাড়ে স্থাপনা নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা থাকায় নতুন মামলা করা হয়নি। যেহেতু আবারো স্থাপনা করা হয়েছে । তাই এবার মামলা করা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, আজই সেখানে আবারো উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করবে। নতুন পুরাতন সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে। এছাড়া দখলকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরও করা হবে।

–দৈনিক কক্সবাজার


শেয়ার করুন