শরীরে অক্সিজেন কমে যাওয়ার ৯ লক্ষণ

সিটিএন ডেস্কঃ 
পৃথিবীতে অক্সিজেনের প্রাচুর্য থাকলেও গুরুতর রোগীরা স্বাভাবিকভাবে পর্যাপ্ত অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারেন না। রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে গিয়ে যে অবস্থা তৈরি হয় তাকে হাইপোক্সেমিয়া বলে। হাইপোক্সেমিয়া থেকে হাইপোক্সিয়া হতে পারে, অর্থাৎ কলাতে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়।

রক্তে অক্সিজেনের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ৭৫ থেকে ১০০ মিলিমিটার অব মার্কারি। কিন্তু করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ শতাংশের নিচে নামলেই জটিল পরিণতি বা মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে, এমনকি অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ শতাংশের নিচে চলে আসলেও সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

শরীরে অক্সিজেনের অভাব হলে উপসর্গ বা লক্ষণ প্রকাশের কিছু মিনিট পরেই মস্তিষ্ক, যকৃত ও অন্যান্য অঙ্গ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক কারণে হাইপোক্সেমিয়া হতে পারে, তন্মধ্যে একটি কারণ হলো- ফুসফুসের ধমনীতে রক্ত জমাট বাধা। যারা করোনাভাইরাসের নতুন ধরনে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের অনেকেরই শ্বাসতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে হাইপোক্সেমিয়া হচ্ছে। এর ফলে শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে। যথাসময়ে উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে অনেকেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে।

যেহেতু এখন করোনাভাইরাসের নতুন ধরনে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, তাই প্রত্যেকেরই অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে গেলে কী কী লক্ষণ বা উপসর্গ দেখা দেয় তা সম্পর্কে জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এখানে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতিতে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে তার একটি তালিকা দেয়া হলো।

* শ্বাসকষ্ট: করোনাভাইরাসের নতুন ধরনে সৃষ্ট সংক্রমণে শ্বাসতন্ত্রে গুরুতর ক্ষতি হয়, যার ফলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় রোগীরা শ্বাসকষ্ট ভুগেন। এই উপসর্গ নিয়ে প্রচুর রোগী মারা গেছেন। ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনে যারা সংক্রমিত হচ্ছেন তাদের মধ্যে শ্বাসকষ্টের উপসর্গ বেশি।

* বিভ্রান্তি: হাইপোক্সেমিয়ার অন্যতম প্রাথমিক লক্ষণ হলো মৃদু বিভ্রান্তি। হঠাৎ স্বাভাবিক আচরণে অস্বাভাবিকতা আসলে, মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হলে, চিন্তাভাবনায় সমস্যা হলে এবং সচেতনতা কমে গেলে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপ করে দেখা উচিত। হাইপোক্সেমিয়া বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিভ্রান্তিও বাড়তে পারে।

* মাথাব্যথা: মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত রক্ত না পৌঁছলে মাথাব্যথায় ভুগতে হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে, মাথাব্যথা হতে পারে হাইপোক্সেমিয়ার আরেকটি প্রাথমিক লক্ষণ। একারণে করোনাকালে মাথাব্যথাকে অবহেলার সুযোগ নেই। অতএব মাথাব্যথা শুরু হলে অক্সিজেন পরিমাপ করতে পালস অক্সিমিটার হাতে নিন।

* দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস: শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হলো শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত হওয়া। তাই শ্বাসপ্রশ্বাসের হার বেড়ে গেলে জরুরি সেবা নেয়ার কথা বিবেচনা করুন। ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, বিশ্রামকালে শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বাভাবিক হার হলো প্রতিমিনিটে ১২-২০। কিন্তু ২৫ এর উর্ধ্বে হলে এটাকে দ্রুত শ্বাসপ্রশ্বাস হিসেবে ধরা হবে।

* মাথাঘোরানো বা জ্ঞান হারানো: মাথাঘোরালে বা মস্তিষ্কে হালকা অনুভূত হলে অথবা চেতনা হারালে ধারণা করতে পারেন যে, শরীর প্রয়োজনীয় অক্সিজেন পাচ্ছে না। শারীরিক ভারসাম্য বিনষ্ট হলে কিংবা ঘনঘন হাই তুললেও অক্সিজেনের মাত্রা পরিমাপের প্রয়োজন রয়েছে।

* মুখের জড়তা: কথা বলার সময় সমন্বয় সমস্যা হলে অথবা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত মাংসপেশির নড়াচড়ায় অসামঞ্জস্য অনুভব করলে এটাও শরীরে অক্সিজেন ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। হাইপোক্সিয়া হলে তথা কলাতে যথেষ্ট অক্সিজেন না পৌঁছলে হাতের নড়াচড়াও অসামঞ্জস্য হতে পারে।

* উচ্চ রক্তচাপ: করোনাকালে রক্তচাপ মেপে দেখারও প্রয়োজন রয়েছে, অথবা অন্তত উচ্চ রক্তচাপের উপসর্গগুলো জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসকেরা উচ্চ রক্তচাপকে হাইপোক্সেমিয়ার একটি প্রচলিত উপসর্গ বলেছেন। হাইপোক্সেমিয়া বেড়ে গেলে রক্তচাপ উচ্চ হয়।

* দৃষ্টি সমস্যা: শরীরে অক্সিজেনের অভাবে টানেল ভিশন বা পেরিফেরাল ভিশন লস (পিভিএল) হতে পারে। এ ধরনের দৃষ্টি সমস্যাতে সরাসরি চোখের সামনে যা আছে তা ছাড়া আর কিছু দেখা যায় না। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় দৃষ্টি ঠিক থাকলেও পাশের জিনিস দৃষ্টিগোচর হয় না।

* ঠোঁট নীল হওয়া: ঠোঁট, কানের লতি অথবা নখ নীল রঙ ধারণ করলে অবশ্যই জরুরি চিকিৎসা সেবা পাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কারণ এটা হলো তীব্র অক্সিজেন ঘাটতির লক্ষণ। এ সমস্যাকে সায়ানোসিস বলা হয়, যাকে অবহেলার মোটেই সুযোগ নেই।


শেয়ার করুন