আনছার হোসেন
নির্বাহী সম্পাদক ও বার্তা প্রধান
দৈনিক সৈকত
শত শত মানুষ হা করে তাকিয়ে আছেন! কারো কিছুই করার নেই! চোখের সামনেই পুড়ছে পুরো একটি বিল্ডিং! আশপাশের বিল্ডিং ও ঘরবাড়ির লোকের চোখে আতংক। তাদের পাশের বিল্ডিংটি তো পুড়ছেই, তাদেরটা রক্ষা করা যাবে তো!
এমনই নাটকিয়তার মধ্যদিয়ে কক্সবাজার শহরে, ফায়ার সার্ভিসের মাত্র একশত গজ দূরে পুড়ে গেল একটি তিনতলা বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয়তলা। গোলজার মার্কেট নামের ওই বিল্ডিংয়ে শত শত মানুষের চোখের সামনেই পুড়ে গেছে অন্তত ১০ কোটি টাকার সম্পদ।
সূত্র মতে, মাত্র ১০০ গজ দূরে ফায়ার সার্ভিসের কার্যালয় হলেও আগুন নির্বাপনের গাড়িগুলো আরেকটি অগ্নিকান্ড নিয়ন্ত্রণে জেলার উখিয়া উপজেলায় গিয়েছিল। কক্সবাজার শহরে যখন আগুন লাগে তখনও ওই গাড়ি গুলো ছিল উখিয়াতেই।
কক্সবাজার বিমান বন্দরে অগ্নিনির্বাচনের আধুনিক ব্যবস্থা থাকলেও ‘আইনি জটিলতা’য় তা সাধারণ মানুষের অগ্নিকান্ডে ব্যবহার করা যাবে না, এমনই অজুহাতে বিমান বন্দর ব্যবস্থাপক মানুষের আগুন নেভানোর আবদার ফিরিয়ে দিয়েছেন।
রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এই অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হলেও বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌছায়। তখনও ভবনটি দাউ দাউ করে জ্বলছিল। তারা এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা শুরু করেন। ততক্ষণে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে!
অগ্নিকান্ডের কারণ তাৎক্ষনিক জানা না গেলেও ওই মার্কেটের ব্যবসায়িরা মনে করছেন, ‘পরিকল্পিত ভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে’।
অগ্নিকান্ডে এই মার্কেটে সবচেয়ে ক্ষতির শিকার হয়েছেন গুদামঘরের মালিক মুসা সওদাগর। তার চোখের সামনেই পুড়ে গেছে তার সব সম্পদ। এই চোখের দেখা সইতে না পেরে তিনি ঘটনাস্থলেই স্ট্রোক করেছেন। তাকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার ব্যবসায়ি মোহাম্মদ রায়হান উদ্দিন।
অগ্নিকান্ডের শিকার মার্কেটের তৃতীয় তলায় রয়েছে অনলাইন নিউজ পোর্টাল খবর বিতান ডটকমের সম্পাদক ও বাংলাদেশ সংবাদপত্র এজেন্ট এসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হাসিমের বাসভবন ও অফিস।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আড়াই ঘন্টা পর ঘটনাস্থলে পৌছালেও তারা এসে অন্তত আশপাশের দোকান, বসতঘর গুলো রক্ষা করা গেছে বলে মনে করেন স্থানীয় অধিবাসিরা।
কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কমান্ডার আব্দুল মজিদ সাংবাদিকদের জানান, উখিয়ায় আরেকটি অগ্নিকান্ড হওয়ায় সেখানে আগেই চলে গিয়েছিল অগ্নিনির্বাপনের গাড়িগুলো। সেখান থেকে আসতে বিলম্ব হয়েছে।
তিনি জানান, ওই দলটি আসার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা হয়েছে।
অন্যদিকে এই অগ্নিকান্ড শুরু হওয়ার পর কক্সবাজার বিমান বন্দরের স্টেশন ব্যবস্থাপক সাধন কুমার মোহন্তকে একাধিক সাংবাদিক ফোন করে তাদের অগ্নিনির্বাপন গাড়িগুলো পাঠানোর অনুরোধ জানান। তাদের বুঝিয়ে বলা হয়, কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলো উখিয়ায় থাকায় এখন শহরের অগ্নিকান্ড থামাতে বিমান বন্দরের গাড়িগুলোর কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এই কথায়ও সায় দেননি।
সাধন কুমার মোহন্ত সাংবাদিকদের জানান, বিমান বন্দরের ফায়ার বাসগুলো বাইরে যাওয়ার বিধান নেই।
অথচ, সাধারণ মানুষ মনে করছেন, বিপদের সময় তো কোন ‘বিধান’ দেখার সুযোগ নেই। আগে তো বিপদ থেকে উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু বিমান বন্দর ব্যবস্থাপক সেই ‘বিধান’ই এড়িয়ে গেছেন!