লোডশেডিং- তোমায় ভুলি নাই

mahfuj_1মাহ্ফুজুল হক :

এমন কিছু মানুষ, বিষয় ও ঘটনা আছে ও থাকে যাকে কখনো ভোলা যায় না। সবচেয়ে কাছের প্রিয় মানুষটি তার অনুপস্থিতিতেও সর্বত্র ছায়া সঙ্গী হয়ে সর্বদা বিরাজ করে। আবার মানসিক বা শারীরিকভাবে আঘাত দেওয়া মানুষটিকেও সহজে ভোলা যায় না। ঘুরে ফিরে সেই আঘাতের কথা ও আঘাত দাতার কথা স্মরণ হয় আর মনকে পীড়া দেয়। সুখপ্রদ দুঃখপ্রদ স্মরণীয় ঘটনার কথা মানুষ ভুলে না। আবার এমন কিছু বিষয়ও থাকে যা মানুষ সময়ের ব্যবধানে ভুলে যায় বা বিস্মৃত হয়। কিন্তু একই জাতীয় বিষয় যখন আবার সামনে আসে তখন সেই বিস্মৃত বিষয়ও জাজ্জ্বল্যমান হয়ে তার অস্তিত্ব জানান দেয়। পুরনো বিষয়টি মানসপটে অবিকল ভেসে ওঠে। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গেয়েছেন, ‘পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে, হায় ও সেই চোখের দেখা প্রাণের কথা, সেই কি ভোলা যায়।’
বিদ্যুৎ – সম্ভবতঃ হাল জমানার সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একটি শক্তির নাম। পরমাণুর ক্ষুদ্রতম অংশ ইলেকট্রন ও প্রোটন নামীয় দুটি পার্টিক্যালকে কাজে লাগিয়ে যে শক্তি তৈরি হয় তা-ই বিদ্যুৎ বা ইলেকট্রিসিটি। পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশ পরমাণু। আমরা জানি, পদার্থ কতকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণার সমন্বয়ে গঠিত যার নাম পরমাণু। ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রনের সমন্বয়ে পরমাণু গঠিত। পরমাণুর কেন্দ্রে থাকে নিউক্লিয়াস যা প্রোটন ও নিউট্রনের সমন্বয়ে গঠিত। ইলেক্ট্রন এই নিউক্লিয়াসের চারপাশে প্রদক্ষিণ করে। প্রোটন ধনাত্নক (+), ইলেক্ট্রন ঋণাত্নক (-) এবং নিউট্রন হলো নিরপেক্ষ কণা। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে ইন্টারএ্যাকশন হলো গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে একটি পদার্থের ইলেক্ট্রন অন্য একটি পদার্থে চলে যায়। ফলে একটি পদার্থে ইলেক্ট্রনের আধিক্য দেখা দেয়। প্রবাহ (কারেন্ট) সৃষ্টি করে বিদ্যুৎ শক্তিকে (এনার্জি) বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ইংরেজি শব্দ লোড মানে ভারি বোঝা (Load), শেড মানে পড়ে বা সরে যেতে দেয়া (Shed), যেমন ব্লাডশেড। ‘বোঝা’ ও ‘বোঝা হালকা করা’ এই শব্দগুলোকে জোড়া লাগালে হয় লোডশেডিং (Load-shedding)। আবার একটি ডাইনামো বা জেনারেটিং স্টেশন কর্তৃক সরবরাহ করা বিদ্যুৎ প্রবাহকে লোড বলে। লোডশেডিং নামীয় বিশেষ্যকে ডিফাইন করা যায় এভাবে, নির্দিষ্ট একটি লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ ছেঁটে বা কেটে দেওয়া যখন সেখানে যোগানের চেয়ে চাহিদা বাড়তি থাকে।
বিদ্যুৎ বিনা সভ্যতার চাকা অচল, মানুষের জীবন এখন অনেকটাই বিদ্যুৎ নির্ভর। যাবতীয় যন্ত্রপাতি, সরঞ্ছামাদি ও জীবন ঘনিষ্ঠ উপকরণাদি একান্তই বিদ্যুৎ কেন্দ্রিক। বিদ্যুৎ নেই তো আলো নেই, ঠান্ডা নেই, এমনকি গরমও নেই। নগর কেন্দ্রিক জীবনে শীত থেকে বাঁচতে যেমন বিদ্যুৎ আবশ্যক তেমনি প্রচন্ড গরম থেকে স্বস্তি পেতেও বিদ্যুৎ অত্যাবশ্যক। এককথায় বিদ্যুৎ বিহীন জীবন যাত্রা পুরোপুরি স্থবির। সেই কবে আকাশের বজ্রপাত দেখে বিদ্যুৎ আবিষ্কার করেছিলেন এক বিজ্ঞানী (বেঞ্ছামিন ফ্রাঙ্কলিন), তারপর থেকে এর অবিরাম পথচলা। সভ্যতার চাকাকে এগিয়ে নিয়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলেছে এই আগুন সদৃশ আলোক শক্তিটি। বলা হয়ে থাকে, দু’টি জিনিষের আবিষ্কার আধুনিক সভ্যতার মূল নিয়ামক- এর একটি শূণ্য বা চাকা (গোলাকার) অপরটি বিদ্যুৎ বা তড়িৎ। মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ প্রদত্ত সূর্যই পৃথিবীবাসীর শক্তির (এনার্জি) মূল উৎস। আর অপরাপর উৎসগুলোও সূর্য দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাবিত। সৌর শক্তি, বায়ু, পানি এবং খনিজ পদার্থ (জ্বালানি তৈল, গ্যাস, কয়লা, পরমাণু) এগুলো হচ্ছে শক্তির প্রাকৃতিক উৎস যা বিভিন্ন কায়দায় ব্যবহার করে মানুষ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে।
বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কিছু শব্দের সাথে মানুষ এখন বেশ পরিচিত- লোডশেডিং, লোড ম্যানেজমেন্ট, সিষ্টেম লস, লো ভোল্টেজ, ওভার ভোল্টেজ, ওয়াট, কিলোওয়াট, মেগাওয়াট, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি, ভৌতিক বিল ইত্যাদি। এতগুলো শব্দ জানতে দেয়ার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ নিঃসন্দেহে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। মহান সেবাদাতা, সশ্রদ্ধচিত্তে তোমায় স্মরি !
এদেশের মানুষ গাঁটের পয়সা খরচ করে বিদ্যুৎ কিনে ব্যবহার করেন, মাগনা বা বিনামূল্যে নয়। সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিদ্যুৎ বিভাগ কর্তৃক স্থাপিত মিটার রিডিং দেখে তাদের লোকজন প্রতিমাসে ব্যবহৃত বিদ্যুতের বিল প্রস্তুত করেন এবং গ্রাহক তা নির্ধারিত ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করেন। এখানে সরকার বিদ্যুৎ বিক্রেতা আর গ্রাহক বা জনগন ক্রেতা। ক্রেতা-বিক্রেতার নির্দিষ্ট কিছু দায়-দায়িত্ব থাকে। যেমন, বিক্রেতা তার মানসম্মত পণ্য সঠিক পরিমাণে যথাসময়ে ও চুক্তিনামায় উল্লিখিত নিয়মে ক্রেতাকে প্রদান করেন। আর ক্রেতা উক্ত পণ্যের মূল্য চুক্তিমাফিক যথাসময়ে বিক্রেতা বরাবর পরিশোধ করেন। তার পণ্য ভোক্তার কাছে পৌঁছানো যেমন বিক্রেতার দায়িত্ব তদ্রুপ পণ্যমূল্য বিক্রেতাকে পরিশোধ করা ক্রেতা বা ভোক্তার দায়িত্ব। ক্রেতা-বিক্রেতার সম্পর্ক ছাড়াও আর একটি বড় সম্পর্ক এখানে রয়ে গেছে। বলা হয়, সরকার জনগণের সেবক। দেশের নাগরিকদের নাগরিক অধিকারগুলো যথাযথ প্রদান করা সরকারের দায়িত্ব। উদাহরণস্বরূপ আমরা দেখি, জনসাধারণের হাঁটা চলার জন্য ফুটপাথ, গাড়ি নিয়ে চলাচলের জন্য প্রশস্ত রাস্তা-ঘাট, রাস্তায় পর্যাপ্ত আলো ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা, রাস্তা ও ঘরে বিদ্যুৎ-পানি-টেলিফোন-গ্যাস ইত্যাদির সংযোগ ও সেবা, নাগরিকদের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা ইত্যাদি সেবাগুলো পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ; কারো দয়া-দাক্ষিণ্য নয়। নাগরিকদের এই সকল অধিকার নিশ্চিত করার জন্যই সরকার। গণতান্ত্রিক সমাজে জনগন একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য বিশেষ এক বা একাধিক রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় বসায় যাতে করে সর্বাগ্রে তাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত হয়। জনগনও উপরোক্ত সেবা পাওয়ার বিনিময়ে সরকার কর্তৃক ধার্যকৃত বিভিন্ন ট্যাক্স প্রদান করেন। জনগনের টাকায় (ট্যাক্স) যে সরকার চলে সে সরকার যদি জনগনের প্রাপ্য অধিকার দিতে অনীহা দেখায় বা ব্যর্থ হয় তাহলে তার প্রতিকার কী ? নির্দিষ্ট মেয়াদ অন্তর জনগন তাদের হাতে সংরক্ষিত ’জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস’ ক্ষমতা প্রয়োগ করেন। জনগনই সকল ক্ষমতার উৎস – কথাটি ভন্ডামি ছাড়া আর কিছু নয়। একমাত্র নির্বাচনের সময় ব্যতীত তাদের আর কোন ক্ষমতাই পরিদৃষ্ট হয় না। আবার সেই ভোটাধিকার প্রয়োগকালেও দেখা যায় অযাচিত হস্তক্ষেপ, ভোট চুরি, মিডিয়া ক্যু, কারচুপি, জালিয়াতি ইত্যাদি। আসলে নিরংকুশ ক্ষমতা কার ? রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানের, নাকি জনগনের, নাকি রাজাধিরাজ বিশ্ব স্রষ্টা-পরিচালক মহান আল্লাহ্র ? মহান আল্লাহ্ বলেন, ’ক্ষমতার মালিক একমাত্র আল্লাহ্ তায়ালা’। ‘বল, আল্লাহই রাজত্বের মালিক। তিনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দান করেন আর যার কাছ থেকে ইচ্ছা রাজ্য কেড়ে নেন।’ দুনিয়াতে কতো প্রতাপশালী রাজা-রাণী এলো গেলো, কিন্তু রাজাধিরাজ ঠিকই রয়ে গেলেন। সুতরাং দু’দিনের জন্য ক্ষমতা পেয়ে ধরাকে সরা জ্ঞান করা নিশ্চয় বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
জনগনের ট্যাক্সের টাকায় চালিত খাদেম (সরকার) জনসেবাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবেন, সরকারের অধীনে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারিরা নিজেদেরকে জনগনের প্রভূ নয় বরং সেবকই জানবেন – এটাই জনগন প্রত্যাশা করে। কোন অফিসে কেহ গেলে কর্তব্যরত লোকটি ’আমি কি আপনাকে সাহায্য করতে পারি ?’ ধরনের বাক্য মুখে যখন এগিয়ে এসে সাহায্যের হাত বাড়ায় তখন প্রকৃতই তার সেবক পরিচিতির প্রকৃষ্ট প্রকাশ ঘটে। আমাদের দেশে ক্ষেত্র বিশেষে প্রভূরূপী কর্মকর্তার কাছে ঘেঁষাও যায় না, নিবেদন পেশ তো দূরের কথা। জনগন সর্বত্র অসহায়, তাদেরই প্রাপ্য অধিকার পেতে কথিত সেবকের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষুকের মতো ঘোরাঘুরি করতে হয় আর পদে পদে হেনস্তার একশেষ হতে হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগ ভৌতিক বিল দিয়ে যায়। অভিযোগ করতে গেলে উপদেশ শুনতে হয়, বিল পরিশোধ করে আসেন পরে আবেদন বিবেচনা করা যাবে। গ্রাহক ব্যবহার করেছেন ১০০ ইউনিট বিদ্যুৎ কিন্তু তাকে পরিশোধ করতে হবে ৩০০ ইউনিটের মূল্য। কেন তিনি খামাখা ৩০০ টাকার স্থলে ১,৫০০ টাকা প্রদান করবেন ?
এখন লোডশেডিং নামক দানবের অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ। শহরাঞ্চলে চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে দশ ঘন্টাও বিদ্যুৎ থাকে না। গ্রামাঞ্চলের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে, সারা দিনে ৪-৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ পাওয়া যায় তা-ও আবার কখনো কখনো একনাগাড়ে ১৫-২০ মিনিটের বেশী স্থায়ী হয় না। আমি চল্লিশ মিনিটের একটি ক্লাস নিতে গিয়ে চার চারবার বিদ্যুতের ’শুধু যাওয়া আসা’ খেলা দেখেছি। এমনিতে তীব্র দাবদাহ তার উপর বিদ্যুতের ভেল্কিবাজি, হঠাৎ আসা ও নিশ্চিত যাবার তামাশা। লোকজন রসিকতা করে বলেন, বিদ্যুৎ যায় না, মাঝে মধ্যে আসে। কদাচিৎ আসে মানে কালে ভদ্রে আসে, থাকে ভিআইপি’দের দূর গাঁয়ে তো তাই ! দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা রয়েছে ১১ হাজার ৭৪৪ মেগাওয়াট। আর চলতি গ্রীষ্মে পিক আওয়ারে (বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা) বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা সাড়ে আট হাজার মেগাওয়াট। অর্থাৎ চাহিদার পুরোটাই উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি)। দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে গত ৯ এপ্রিল, আট হাজার ৩৪৮ মেগাওয়াট। অথচ এর পর থেকেই বাড়ছে লোডশেডিং যা এখন আড়াই হাজার মেগাওয়াট ছাড়িয়েছে।’ কালের কন্ঠ।
সুতরাং লোড ম্যানেজমেন্টের নামে লোডশেডিং। শেষ ভরসা সাধারন মানুষের লাইনে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখ ঘন্টার পর ঘন্টা আর বিশেষ বিশেষ এলাকা ’নো লোডশেডিং জোন’। কারন তথায় সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ ’ভিআইপি’দের বসবাস যাদের রক্ত সাদা, চলাচল করেন এসিযুক্ত ঠান্ডা গাড়িতে, অফিস করেন শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে। যাঁরা দেশ চালাবেন, প্রশাসন চালাবেন তারাই যদি অসহ্য গরমের যন্ত্রণায় রাতে সুনিদ্রা যেতে না পারেন, দিনে ঠিকমতো কাজ করতে না পারেন তাহলে কি চলে ? সাধারন মানুষ বিদ্যুতের কারনে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের আশায় যখন তাঁদের কাছে নিবেদন করেন তখন স্বভাবতঃই কবির কথা মনে পড়ে, ’কী যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে, কভূ আশী বিষে দংশেনি যারে ?’ হায়রে সংবিধান, হায়রে সমানাধিকার ! জনগনের সেবকরা রাজার হালে আর ’সকল ক্ষমতার উৎস’ (?) জনগন বঞ্চিতের কাতারে। লোড ম্যানেজমেন্টের কল্যাণে যাবতীয় লোড খ্যাতিমানদের দিকে আর যাবতীয় লোডশেডিং আম জনতা তথা অখ্যাতদের দিকে।
‘লোডশেডিংয়ের দরকারও আছে, মানুষ যাতে ভুলে না যায়, লোডশেডিং নামে কিছু একটা ছিল।’ ২৯ মার্চ, ২০১২ তারিখ জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের সমাপণী বক্তব্যে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন, ‘বিদ্যুতের সমস্যা আছে। কিন্তু বর্তমান সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়িয়েছে। জাতীয় গ্রীডে তিন হাজার ৩০০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত বিদ্যুৎ যোগ হয়েছে। ২২ লাখ নতুন গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ পেয়েছেন। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে কুইক রেন্টাল, স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। সেচ কাজের সুবিধার জন্য বিদ্যুৎ গ্রামে যাচ্ছে। সে জন্য ঢাকায় লোডশেডিং হচ্ছে।’ আজ থেকে ৪ বছর আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, আমরা সাধারন জনগন তা মনে রেখেছি ও পালন করেছি। আমরা লোডশেডিংয়ের কথা ভুলে যাইনি এবং ভুলে যাবো-ও না। কেননা লোডশেডিং স্বয়ং আমাদেরকে তা ভুলতে দেবে না। ৪ বছর আগে লোডশেডিং হতো ২৫০০ মেগাওয়াটের। ৪ বছর পরেও তাই।
প্রায় ৪০ ডিগ্রী তাপমাত্রার আগুনে পুড়ে যখনই এদেশের মানুষ একটু ঠান্ডা বাতাসের হাওয়া পাওয়ার আশায় ফ্যানের সুইচ অন করেছেন অমনি বিদ্যুৎ মহাশয় লা-পাত্তা। লোডশেডিংয়ের কথা মনে পড়ে। প্রচন্ড গরমে অস্থির অবস্থায় ক্লান্ত হয়ে ফ্যান চালিয়ে ঘুমিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর ঘামে সিক্ত বিছানায় নিজেকে আবিষ্কার করেছেন আর ছটফট করছেন। লোডশেডিংয়ের কথা প্রচন্ডভাবে মনে পড়ে। মেয়েটির এইচএসসি পরিক্ষা। ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে নিভু নিভু চার্জ লাইটের আলোয় পড়ছে আর মা পাশে দাঁড়িয়ে হাত পাখায় বাতাস করছে। লোডশেডিংয়ের কথা ভীষণ মনে পড়ে। হালে কোন কাজ না হওয়ার পেছনে যুক্তি পেশ করা হয়, বিদ্যুৎ বিভ্রাট। পত্রিকা প্রকাশ হয়নি কেন – বিদ্যুৎ বিভ্রাট, অফিসে দরকারি চিঠি-ডকুমেন্ট রেডি হয়নি কেন – বিদ্যুৎ এর অভাবে কম্পিউটার-প্রিন্টার চালানো যায়নি, পরিক্ষার প্রস্তুতি ঠিকভাবে নেয়া হয়নি কেন – বিদ্যুৎ নাই তাই, স্কুলে যথাসময়ে পরিক্ষা নেয়া যাচ্ছে না কেন- বিদ্যুতের অভাবে কম্পিউটার-প্রিন্টার-প্রেস চালানো যায়নি। তাই প্রশ্নপত্র তৈরি হয়নি। জরুরি অপারেশন হয়নি কেন – অপারেশন থিয়েটারে বিদ্যুৎ নাই, বৃদ্ধা মা’র ঠান্ডা জনিত রোগ বেড়ে গেলো কেন – বিদ্যুৎ এর অভাবে পানি গরম করা যায়নি। শিল্প-কারখানায় হাজার হাজার শ্রমিক বেকার সময় কাটাচ্ছে লোডশেডিং নামীয় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে। ফলতঃ উৎপাদন বিঘিœত, লক্ষ-কোটি টাকা লোকসান ; যার নিশ্চিত ফলাফল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। পানির অভাবে ক্ষেতে ফসল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ; বিদ্যুতের অভাবে পানির পাম্প চালানো যাচ্ছে না বলে সেচ কাজ বন্ধ। কোল্ড ষ্টোরেজগুলোতে বিদ্যুতের অভাবে পর্যাপ্ত কোল্ড হচ্ছে না বিধায় সংরক্ষিত ফসলাদি পঁচে নষ্ট, বাসা-বাড়িতে পানি নাই – নাওয়া-খাওয়া বন্ধ, বিদ্যুতের অভাবে পানির পাম্প চলছে না, পৌর কর্তৃপক্ষ শহরে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহ করতে পারছেন না। ফিশিং বোটগুলো সাগরে কয়েক সপ্তাহের জন্য মাছ ধরতে যাবে, কিন্তু বরফ মিলছে না – বরফ কলগুলোতে বিদ্যুৎ নাই বলে ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনি সব পরিস্থিতিতে লোডশেডিংয়ের কথা খুবই মনে পড়ে, তাকে ভোলা যায় না মোটেও।
পরিশেষে, কবি-সাংবাদিক সোহরাব হাসানের বক্তব্য উদ্ধৃত করে শেষ করছি। ‘আপনি আচরি ধর্ম বলে একটি কথা আছে। অতএব লোডশেডিং থাকার কথাটি আমজনতাকে মনে করিয়ে দেওয়ার আগে সরকারের মন্ত্রী ও সাংসদদেরও মনে রাখা প্রয়োজন। অর্থাৎ লোডশেডিংয়ের কাজটি চলুক বঙ্গভবন ও গণভবন থেকেই। আশা করি, সাধারন বাসিন্দাদের এলাকায় যে কয় ঘন্টা লোডশেডিং চলে প্রধানমন্ত্রী, তাঁর কার্যালয় ও মন্ত্রীদের বাড়িতেও যাতে সমপরিমান সময় লোডশেডিং থাকে সেই ব্যবস্থা করবেন।’
সেল নম্বর : ০১৮৬৯ ৮৬৬৯০০


শেয়ার করুন