লায়লারা কালো পথে

170244_1সিটিএন ডেস্ক:
কুতুপালং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা বস্তির বি-ব্লকের বাসিন্দা লায়লা বেগম (ছদ্মনাম)। বয়স ১৪ ছুঁইছুঁই। সে জানায়, মাত্র ৬ মাস আগে সে বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে মিয়ানমান সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে মা-বাবার সঙ্গে। এক নিকটাত্মীয়ের সহায়তায় আশ্রয় নিয়েছে সরকারি বনভূমির বিশাল এলাকাজুড়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা রোহিঙ্গা বস্তিতে। ৩ বোন, মা-বাবাসহ ৫ জনের সংসার। বস্তির ছোট্ট একটি কুঁড়েঘরে থাকার প্রায় ১৫ দিন পর পরিচয় হয় রোহিঙ্গা বস্তির মাঝির মেয়ে সাহানা আত্তারের সঙ্গে। সেই প্রস্তাব দেয় যৌন পেশায় জড়ানোর।

অভাবের সংসার, তাই তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। তার সহায়তায় সে সপ্তাহের ৪-৫ দিন কনট্রাকের মাধ্যমে সে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে খদ্দেরদের মনোরঞ্জন করে যাচ্ছে। শীত মওসুমে ভালো চাহিদা থাকায় সপ্তাহের ৭ দিনই তাকে কক্সবাজারের বিভিন্ন হোটেলে অবস্থান করতে হয়। শুধু লায়লা বেগম নয়, উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে বর্তমানে উঠতি বয়সের ৩ শতাধিক কিশোরী দিয়ে যৌন ব্যবসা করানো হচ্ছে- এমন অভিযোগ উঠেছে। আবার অনেকে স্বেচ্ছায় টাকার লোভে এ পেশায় নাম লিখিয়েছে। বর্তমানে শীত মওসুমকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের এক শ্রেণীর হোটেলমালিক পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য এসব রোহিঙ্গা কিশোরীকে নিয়ে যৌন-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে রোহিঙ্গা কিশোরীরা পুলিশের হাতে আটক হলেও পেশাদার দালালদের সহযোগিতায় তারা জামিনে বেরিয়ে আসছে।

রোহিঙ্গা শিবিরের এসব কিশোরীকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে জেলা শহর ও দেশের বিভিন্নস্থানের নামিদামি হোটেলে দেহব্যবসা করা হচ্ছে বলে ক্যাম্প সূত্রে জানা গেছে। অনেকে অভাবের তাড়নায় এ পেশাকে স্থায়ী হিসেবে বেছে নিয়েছে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরভিত্তিক একটি শক্তিশালী পাচারকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। পাচারকারী চক্র বিভিন্ন গার্মেন্টে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের কিশোরীদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দিচ্ছে। ৫০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকায় কিশোরীদের সিন্ডিকেটের হাতে তুলে দেয়। তাও দরদাম নির্ধারিত হয় গায়ের রং, চেহারা ও বয়সের ওপর ভিত্তি করে। উচ্চবেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে পাচারকারী চক্র সম্প্রতি একটি ২০ জনের কিশোরী দল নিয়ে ভারতের মারাঠি নামক শহরে যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দিয়েছে- এমন খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের মারাঠি নামক শহরে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা মহিলা যৌন ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। শুধু তাই নয়, কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনবিরোধী একটি চত্রু এসব রোহিঙ্গা কিশোরীর দিয়ে যৌনপল্লী বানানোর চক্রান্ত করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়। গত বছর ঢাকার সূত্রাপুর থানায় কুতুপালং শিবিরের নুরুল হক মাঝির মেয়ে ফাতেমা বেগম ৫-৬ জনের একদল কিশোরী নিয়ে ভাড়া বাসায় আটক হয়। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে বিচারাধীন। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা সাবেক ইউপি মেম্বার আওয়ামী লীগ নেতা বখতিয়ার আহমদ জানান, ক্যাম্পভিত্তিক একটি কিশোরী পাচারকারী চক্র সক্রিয়।

এর পরও সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা রহস্যজনক। উখিয়া রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গারা কক্সবাজারের মানুষদের কাছে বিষফোঁড়ায় পরিণত হয়েছে। তাদের অবাধ বিচরণ ও বেশ্যা বাণিজ্য বন্ধ করা না গেলে এবং প্রত্যাবাসন করা না হলে বাংলাদেশের ধর্মীয় মূল্যবোধও নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কুতুপালং শিবির ইনচার্জ মাহমুদুল হক চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রোহিঙ্গা শিবির থেকে কিশোরী পাচারসহ যৌন বাণিজ্যের ব্যাপারে অবগত নয় বলে জানান। মানব জমিন


শেয়ার করুন