লামায় ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত

আত্মসাতএম বশিরুল আলম, লামা:
লামা পৌরসভার মেয়র আমির হোসেন অব্যাহত ভাবে পৌর তহবিলের অর্থ আত্মসাত করে যাচ্ছে। পৌরসভার প্রকল্প নীতিমালা অনুসরণ না করে ভুয়া প্রকল্প বাস্তবায়ন দেখিয়ে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন নীতিমালি অনুসরণ না করে ১৪-১৫ অর্থ বছরে সাধারণ এডিপি’ বিশেষ বরাদ্দ ৫০ লাখ টাকা ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগে প্রকাশ, লামা পৌরসভায় ২০১৪-১৫ আর্থিক সালের এডিপি (বিশেষ) অর্থায়নে উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের অর্থ বরাদ্দে গৃহীত ৪টি প্যাকেজে ৭টি প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ উন্নয়ন কাজ না করেই আত্মসাত। বন্যা পরবর্তী লামা পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে কাদামাটি পরিস্কার বাবদ ৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা এবং রোলার মেরামত ও আইপিএস ক্রয়- বাবদ মোট ৩ লাখ টাকাসহ ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে রাজস্ব তহবিলসহ অসংখ্য কাগুজে প্রজেক্ট দেখিয়ে প্রচুর সরকারি অর্থ আত্মসাতের চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। লামা পৌরসভার মেয়র আমির হোসেন, ভারপ্রাপ্ত সচিব মাসুদ মোর্শেদ ও সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ারকে পাশকাটিয়ে এ আত্মসাতের মাধ্যমে দুর্নীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। পৌরসভার ১৫ টি জনগুরুত্বপুর্ন প্রকল্প দেখিয়ে এ অর্থ লুপাট করা হয়। আর মাত্র ৪ মাস পরেই অনুষ্ঠিত হবে পৌর নির্বাচন। এই সময় লুপাটকৃত এসব প্রকল্প পৌর শহর এলাকায় হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হওয়ার পাশাপাশি পৌর কর্তৃপক্ষের দুরদান্ত প্রকল্প হরিলুটে বিস্ময়ে হতবাক হয়েছে পৌর নাগরিকরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২০১৪-’১৫ অর্থ বছরে লামা পৌরসভার দরপত্র বিজ্ঞপ্তি নং ০৩/২০১৪-১৫ ইং, স্মারক নং- লামা পৌ:/দরপত্র/পাঁচ-২৪/২০১৫/৩৭, তারিখ: ১২/০৪/২০১৫ খ্রি: এর ১৫টি প্রকল্পের মধ্যে ৭ টি প্রকল্পের কাজ না করে অর্থ আত্মসাত করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এডিপির ৪ প্যাকেজে ১৫ টি প্রকল্পের মধ্যে যে ৭টি প্রকল্প’র কাজ করা হয়নি, তার মধ্যে রয়েছে, প্যাকেজ নং- এলপি/আইএফটি-০৩ এডিপি/২০১৪-২০১৫ (ক) চম্পাতলী আ: চালামের বাড়ি হইতে গনির বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা এইচ.বি.বি দ্বারা উন্নয়ন। (গ) পশ্চিম কলিঙ্গাবিল ব্রিক ড্রেনসহ ড্রেন-কালভার্ট নির্মাণ। প্যাকেজ নং এলপি-০২/আইএফটি-০৩ এডিপি/২০১৪-২০১৫ (ক) লামা সিনেমা হল হতে মঞ্জুর বাড়ি পর্যন্ত রাস্তা সংস্কার। (খ) নয়াপাড়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন রাস্তা সিসি দ্বারা উন্নয়ন। প্যাকেজ নং এলপি-০৩/আইএফটি-০৩ এডিপি/২০১৪-২০১৫ (গ) ছাগল খাইয়া লামা আলীকদম সড়ক থেকে মাতামুহুরী নদী পর্যন্ত ব্রিক ড্রেন নির্মাণ। (চ) রাজবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় হইতে মাতামুহুরী নদী অভিমূখি রাস্তা সিসি দ্বারা উন্নয়ন কাজ। প্যাকেজ নং- এলপি-০৪/আইএফটি-০৩ এডিপি/২০১৪-২০১৫- (ক) পূর্ব চেয়ারম্যানপাড়া মসজিদের কলাম, গ্রেডভীম ও ছাদ নির্মাণ। এসব প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় দরা হয়েছে ৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা। এসব কাজ না করে মেয়র সচিব, ইঞ্জিনিয়ার ও ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মিলে এসব অর্থ আত্মসাত করেছে। এর ফলে জনস্বার্থে বিেিশষ এডিপি বরাদ্দে সংস্কারে সরকারের মুল লক্ষ ব্যহত হয়েছে।
এছাড়া বন্যা পরবর্তী লামা পৌর শহরের বিভিন্ন স্থানে কাদামাটি পরিস্কার বাবদ ৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা খরচ দেখিয়ে সিংহভাগ অর্থ আত্মসাত করেছে পেীর মেয়র। একই অর্থ বছরে আরএফ কিউ কোটেশন দেখিয়ে পৌর তহবিল থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করা হয় বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। সূত্রমতে আরো কয়েকটি প্রকল্পের আওতায় লামা মাছ বাজারের ড্রেন পরিস্কার বাবদ- ১৪ হাজার, লামা বাজারের উত্তর পাশে কাদা মাটি পরিস্কার বাবদ- ২৪ হাজার, বাস ষ্টেশন হইতে গোপাল বাবুর মোড় পর্যন্ত রাস্তা পরিস্কার- ২৪ হাজার, লামা বাজার কাদামাটি পরিস্কার দেখিয়ে- ২৪ হাজার, গজালিয়া জীফ ষ্টেশন থেকে ও মীম ফিলিং ষ্টেশন থেকে মেইন রোড পর্যন্ত কাদামাটি পরিস্কারসহ, আরএফকিউ-এডিপি’র মোট ৪টি ভুয়া প্যাকেজ প্রকল্পের অনুকুলে ১০ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। এসব প্রকল্পের ৮০% অর্থ দুর্নীতির মাধ্যমে আত্মসাত করেছে বলে জানা গেছে।
সূত্রে প্রকাশ, মেয়র ও সচিব মিলে ভুয়া ভাউচার দিয়ে রাজস্ব তহবিলের লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে রোলার মেরামত দেখিয়ে ১ লাখ ও আইপিএস ক্রয়- বাবদ ২ লাখ মোট ৩ লাখ টাকাসহ অসংখ্য কাগুজে প্রজেক্ট দেখিয়ে প্রচুর সরকারি অর্থ আত্মসাতের গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। সূত্রমতে ইঞ্জিনিয়ারকে পাশকাটিয়ে মেয়র ও সচিব এসব দুর্নীতিতে নিমজ্জিত রয়েছেন। এ ব্যপারে ভারপ্রাপ্ত সচিব মাসুদ মোর্শেদ-এর (মোবাইল নং- (০১৮১৭৭৯১৮৮২) আলাপকালে তিনি বলেন, আমি চকরিয়ার মূল দায়িত্বে রয়েছে, ভারপ্রাপ্ত হিসেবে মাঝে মধ্যে লামার দায়িত্ব পালন করি তবে এ অনিয়মের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।

ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক বাসু কান্তি দাশ জানান, “আমার পদবী কর আদায়কারী” হিসাব রক্ষক না থাকায় অফিস আদেশ বলে আমি হিসাব রক্ষকের দায়িত্ব পালন করছি। গ্রহীত প্রকল্প’র কাজ শেষ হয়েছে কিনা বা হয়নি তা আমার জানার বিষয় নয়। আমার কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি বিল ভাউচার ও হিসাব সংরক্ষণ করে থাকি।
জানাগেছে প্রাক্যলিত এসব প্রকল্পের পত্রিকায় দরপত্র বিজ্ঞপ্তি আহবান দেখালেও বাস্তবে পত্র-পত্রিকায় কোন ধরণের টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেয়নি লামা পৌর কর্তৃপক্ষ। এদিকে প্রকল্প সমুহের বিপরীতে বরাদ্দকৃত সমুদয় অর্থ ৩০ জুন/১৫’র মধ্যে উত্তোলন করে আত্মসাত করেছে। জানাযায়, কাজ না করে ইঞ্জিনিয়ারের স্বাক্ষর ছাড়া প্রকল্পের বিল ছাড় করেছে পৌর মেয়র ও সচিব। এসব প্রকল্পের বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই। সরেজমিন তদন্ত করলে ভয়াবহ অর্থ আত্মসাত কেলেংকারীর স্বরুপ ফুটে উঠবে মেয়র আমির হোসেন ও ভারপ্রাপ্ত সচিব মাসুদ মোর্শেদসহ সংশ্লিষ্টদের। বান্দরবান জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত স্থানীয় নাগরিকদের দেয়া এক অভিযোগে এসব তথ্য জানাগেছে।
এ ব্যাপারে লামা পৌরসভার মেয়র আমির হোসেন জানান, এডিপি’র সংস্কার উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। প্রবল বর্ষনের কারণে ও কাজের গুণগত মান রক্ষাকল্পে কয়েকটি প্রকল্প’র কাজ ঠিকাদারদের বলে বন্ধ রাখা হয়েছে, তবে আবহাওয়া ভাল হলে ওইসব কাজ করিয়ে নেয়া হবে।

তিনি অভিযোগটি অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, কিছু ব্যক্তির মনগড়া অভিযোগের ফলে দাতা সংস্থার সম্ভাব্য ৩০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প স্থগিত হয়ে যায়। মেয়র বলেন, মহল বিশেষ পৌরসভার উন্নয়ন চায়না, উপরন্ত আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জালবুনে চলছে


শেয়ার করুন