বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের

লামায় ‘‘ওয়াগ্যোয়েই পোয়ে” উপলক্ষে ফানুস তৈরীতে মহোৎসব

Lama Fanush Photo 27 October''15এম বশিরুল আলম, লামাঃ

বান্দরবান পার্বত্য জেলার লামায় বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মীয় উৎসব “ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ” নামক প্রবারণা পূর্ণিমা জাক-জমকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে পাহাড়ে বৌদ্ধ সম্প্রদায়রা। ২৭ অক্টোবর মঙ্গলবার পূর্ণিমাকে ঘিরে প্রতিটি কেয়াং (বিহার) ও বৌদ্ধ ধর্মালম্বীর পল্লি গুলোতে ফানুস তৈরীসহ নানান কর্মসূচীর আয়োজনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায় জনগোষ্ঠীরা।

এই পূর্ণিমায় ফানুস উড়ানোর মূল উদ্ধেশ্য হল, রাজপুত্র সিদ্ধার্থ (গৌতম) জগৎ সংসারের মায়া-মোহ ছেড়ে, দুঃখ মুক্তি পথের সন্ধানে ২৯ বছর বয়সে শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমায় কপিলাবস্তুর রাজপ্রাসাদ ত্যাগ করেন। অনোমা নদী পার হয়ে রাজপোশাক খুলে সন্ন্যাসীর পোশাক পরিধান করেন। এরপর সিদ্ধার্থ আপন তরবারি দিয়ে মাথার চুল কেটে সত্যক্রিয়া অধিষ্ঠান করেন- ‘আমি যে উদ্দেশ্যে সংসারধর্ম ত্যাগ করে সন্ন্যাসধর্ম গ্রহন করছি সে উদ্দেশ্য যদি পূর্ণ হয় অর্থাৎ ভবিষ্যতে বুদ্ধত্ব লাভ করতে পারি- তাহলে আমার কর্তিত চুলগুচ্ছ নিচে না পড়ে উর্ধ্বে আকাশে উড়ে যাবে….।’ সত্যি সত্যিই তার চুল উর্ধ্বে উত্থিত হয়। বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের দৃঢ় বিশ্বাস সে পবিত্র চুল আজও আকাশে ভাসমান আছে। শাস্ত্রে আছে দেবরাজ ইন্দ্র পবিত্র চুল রাশি সংগ্রহ করে আকাশ (স্বর্গ) চুলামণি চৈত্য (জাদি) নির্মাণ করে দেন। সে চুলামণি চৈত্যকে বন্দনার জন্যই ‘‘ফানুস’’ উড়ানো হয়।
বিশেষ করে সন্ধ্যায় পরই বৌদ্ধ অধ্যুষিত গ্রাম বা পাড়া ও বিহারেগুলোতে ফানুস বাতি উড়ানো প্রতিযোগিতা সকলকে আকৃষ্ট করে। এই ফানুস চীনা কাগজ (সাদা, লাল, নীল ও বেগুনী রং) দিয়ে তৈরি করা হয়, পরে সলতে দিয়ে তৈল সহকারে তা উড়ানো হয়। এতে বিভিন্ন রং,বর্ণ এবং সাইজের ফানুস তৈরি হয়। বিশাল ও বিভিন্ন আকৃতির ফানুস বাতি আকাশে উড়ানোর দৃশ্য দেখার জন্য বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের লোক এমনকি বহু বিদেশি পর্যটকও ভীড় জমায়।

লামা কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ বিহারের ওয়াঃ উদযাপন কমিটির আহবায়ক ময়ইনু মার্মা কারবারী জানান, ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ বা প্রবারণা পুর্ণিমা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেও এটি একটি সামাজিক ও আনন্দ উৎসবে পরিণত হয়েছে। মারমা বা রাখাইন পাশাপাশি বৌদ্ধ ধর্মালম্বী বড়ুয়া, ম্রো, চাকমা, তঞ্চঙ্গারাও এ উৎসবে পালন করে থাকে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও যথাযথ মর্যাদায় দিয়ে ওয়াগ্যোয়েই পোয়েঃ উৎসব পালন করা হবে। এর পাশাপাশি উপজেলার ফাঁিসয়াখালী, আজিজনগর, ফাইতং, সরই, গজালিয়া, রূপসী পাড়া, লামা সদর ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার বিভিন্ন বৌদ্ধ মন্দির ও পল্লী গুলোতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপনের প্রস্তুতি খবর পাওয়া গেছে।


শেয়ার করুন