লামাকে মাতামুহুরীর ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা জরুরী

unnamedএম.বশিরুল আলম, লামা:
মাতামুহুরী নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে পার্বত্য লামা উপজেলা সদরসহ পৌর এলাকার কয়েকটি পয়েন্ট নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পৌর এলাকার প্রায় শত কোটি টাকার স্থাপনা নদী ভাঙ্গনের হুমকীর মুখে। অব্যাহত ভাঙ্গনের সাথে প্রতি বছর পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় লামার পৌর এলাকার নিম্মাঞ্চল প¬াবিত হয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। বিগত দিনে ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধরণ ও লামা পৌরসভার পক্ষে এক আবেদনের ফলে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন রোধ, বন্যার কবল থেকে লামাবাসী ও শহর রক্ষার জন্য একাধিকবার প্রকল্প গ্রহন করে প্রাক্কলন তৈরী করেছিল। সংশ্লিষ্টদের সাথে লবিং না থাকায় এর কোনটি অদ্যাবদি বাস্তবায়িত হয়নি। এদিকে প্রতিবছর এলাকাবাসীর জানমালসহ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। নদী ভাঙ্গন ও বন্যার ভয়াবহতার হাত থেকে রক্ষার জন্য নদী সংরক্ষন প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের নিকট কয়েক দফা দাবী জানিয়েছিল এলাকাবাসী। জানাগেছে এ জনগুরুত্বপূর্ন দাবীর ফাইলটি লাল ফিতায় বন্দিদশায় আছে সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ে।
লামা শহরটি রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, ভূগৌলিক অবস্থান ও জনসংখ্যার গুরুত্ব বিবেচনায় বান্দরবান জেলা সদরের পরেই এর স্থান। প্রতি বছর বর্ষা মৌসমে খরস্রোতা মাতামুহুরীর করাল গ্রাসে দু’কুলের অধিবাসীদের সর্বশান্ত করে দেয়। নদীর ভাঙ্গনের পাশপাশি পাহাড়ী ঢলে নিমজ্জিত করে দেয় লামা শহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষয় ক্ষতির পরিমান দাড়ায় কোটি টাকারও বেশী। গত কয়েক বছরে অসংখ্য বাড়ী ঘর, সরকারি বেসরকারি স্থাপনা রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভাটর্, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ, ক্যায়াং ও লামা শহর এলাকায় প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নদীগর্ভে বিলীন হয়েগেছে। হাল নাগাদ বহু গুরুত্ব পূর্ণ স্থাপনা নদী ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে। এর মধ্যে সদ্য নির্মিত কোটি টাকা ব্যয়ে অংহ্লাপাড়া ব্রীজটিও ভাঙ্গনের কবলে রয়েছে। চাম্পাতলী, লামা বাজারপাড়া, উপজাতিদের স্বশান, শীলেরতুয়া মার্মাপাড়া, লাইনঝিরি ফকিরপাড়া, লামারমূখ,অংহ্লাপাড়া বানিজ্যিক এলাকাসহ শত বছর পরাতন দুটি পাড়া, মেরা খোলাসহ বমুবিলছড়ির বিস্তীর্ণ এলাকা ইতিমধ্যে গ্রাস করে নিয়েছে প্রমত্তা মাতামুহুরী।
অপর দিকে গত তিন দশকে তামাক চাষ, পাথর আহরণসহ পরিবেশ বিদ্ধেষী কর্মকান্ডের ফলে নদীর নাব্যতা অস্বাবাভিক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। ফলে কয়েক ঘন্টা টানা মূসলধারে বৃষ্টি হলে পৌর এলাকাসহ বিশাল জনবসতি, উপজেলা প্রশাসন ও বাণিজ্যিক এলাকা ৫/১০ ফুট পানির নীচে তলিয়ে যায়। এসময় প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়ার পাশা-পাশি ২হাজার একর ক্ষেতের ফসল জলমগ্নতার কারণে পলিচাপা পড়ে নষ্ট হয়ে যায়।
সূত্রে জানাযায়, ১৯৯৩ সালে নদীর ভাঙ্গন ও লামাকে বন্যা মুক্ত করার জন্য এলাকাবাসীর পক্ষে তৎকালীন প্রধান মন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়। পি.এম’র স্পেশাল এ্যাফেয়ার্স বিভাগ থেকে সচিব পানি উন্নয়ন ও বন্যা নিয়ন্ত্রন মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। জানা যায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই সময় একটি প্রকল্প গ্রহন করে প্রাক্কলন তেরী করেছিল। প্রায় দু’যুগ সময় অতিবাহীত হতে চললেও সেই কাগজে প্রাক্কলনের এখন পর্যন্ত বাস্তবের মুখ দেখেনি এলাকাবাসী। এছাড়া ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধান মন্ত্রী বান্দরবান সফরে আসলে মাতামুহুরী নদীর ভাঙ্গন রোধে কাজ করার জন্য ৬ কোটি টাকার বরাদ্ধ ঘোষণা করেন। “ইদুর কপালে’’ লামাবাসী প্রধান মন্ত্রী কর্তৃক ঘোষিত ৬ কোটি টাকার বরাদ্ধ কোথায় গেল তাও জানেনা এখন পর্যন্ত। স্থানীয়দের অভিযোগ, বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের তরিৎকর্মা কর্মকর্তা কর্মচারীরা সরকারের এমপি মন্ত্রীদের পটকল নিয়ে বারমাস ব্যস্ত থাকে। সূত্রে প্রকাশ পানি উন্নয়ন বোর্ড দেশের বিভিন্ন জেলায় নদী শাসন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। বান্দরবান জেলাসহ জনবহুল লামা উপজেলার লাখ মানুষ সরকারের এ সেবা থেকে বঞ্চিত থাকার বিষয়টি খোদ এমপি মন্ত্রীদেরও জানা রয়েছে।
জানাগেছে, ২০০২ সালের ১৯ নভেম্বর- লামা পৌর সভার স্বারক নং- লামা/পৌর/২০০২/৩৭০ মূলে বিস্তারিত উল্লেখ করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাবর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে লামা পৌর শহর রক্ষা বাঁধ নির্মানের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রীর নিকট একটি আবেদন জানানো হয়েছিল। তৎসময় জেলার দায়িত্ব প্রাপ্ত সরকারের মন্ত্রী তার পত্র নং- পবম/প্রতিমন্ত্রী/ডি.ও(৪)২০০২/২৭৭ তারিখ ২১ নভেম্বর ২০০২ ইং মূলে লামা পৌরসভায় বাঁধ নির্মানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নিতে সংশি¬ষ্ট বিভাগকে নির্দেশ দিতে পানি সম্পদ মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। এসবের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড লামা শহরকে নদী ভাঙ্গনও বন্যার কবল থেকে রক্ষার জন্য প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের প্রাক্কলন তৈরি করেছিলেন। তৎকালীন ৪ দলীয় জোট সরকারের মিথ্যা আশ্বাসের শিকার স্থানীয়রা সেই প্রকল্পটির বাস্তব রুপ দেখেনি কোনদিন। এর জন্য ওইসময় এলাকাবাসী বৈরী প্রশাসনিক ব্যাবস্থা ও আত্মকেনদ্রীক নেতৃত্বকে মূলতঃ দায়ি করেছিল।
স্থানীয়দের মতে রাজনৈতিক পালা বদল হলেও লামাবাসির মৌলিক সমস্যা গুলোর উত্তরণ হয়নি কোন দিন। লামাকে নদী ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা ও বন্যামুক্ত করার দাবীটি বর্তমানে গনদাবীতে রুপ দিয়েছে। সম্প্রতি লামায় এক ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠনে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি লামাকে বন্যামুক্ত করার সর্বাত্তক প্রচেষ্টার আশ্বাস দেন। বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডকে কাজে লাগিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ গ্রহনের জন্য এলাকার সকল পেশা ও শ্রেনীর মানুষ পার্বত্য মন্ত্রীর বলিষ্ট হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।


শেয়ার করুন