লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে

সিটিএন ডেস্ক:

Khaleda দেয়ার পিঠ ঠেকে গেছে। এখন আন্দোলন ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই। একটি যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত চলমান আন্দোলন অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

তিনি বলেছেন, ‘আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। আন্দোলন ছাড়া সামনে আর কোনো পথ খোলা রাখা হয়নি। ক্ষমতার জন্য নয়, গণতন্ত্র, দেশবাসীর ভোটাধিকার ও হৃত মৌলিক মানবিক অধিকার ফিরিয়ে আনতে, শান্তি, নিরাপত্তা, আইনের শাসন ও সুবিচার নিশ্চিত করতে আমাদের আন্দোলন অভীষ্ট লক্ষ্যে না পৌঁছা পর্যন্ত চলতে থাকবে। যেকোনো পরিস্থিতি বা পরিণতির জন্য আমি তৈরি আছি।’

বৃহস্পতিবার দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া এ ঘোষণা দেন।

খালেদা জিয়া বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে আন্দোলন চলছে। দেশেরে সাধারণ মানুষ এবং গণতন্ত্রের সংগ্রামে অবতীর্ণ নেতা-কর্মীরা অনেক কষ্ট সয়ে এবং বিচার বহির্ভূত হত্যা, গুম, গুলি করে আহত করা, অত্যাচার, নির্যাতন, লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস, পাইকারি গ্রেপ্তার, পুলিশী রিমান্ড, বাড়িতে হামলার মতো ভয়ঙ্কর ত্রাসের রাজত্বের মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। ’

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে মুষ্টিমেয় স্তাবক ও সুবিধাভোগীদের দ্বারা বেষ্টিত সরকার জনগণের আন্দোলনে ভীত হয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এইসব বাহিনীর নিয়ন্ত্রণভার দলবাজ ও বিতর্কিত কতিপয় কর্মকর্তার হাতে তুলে দিয়ে তাদের মাধ্যমে জনগণ ও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলসমূহের ওপর চরম জুলুম-নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালানো হচ্ছে।’

খালেদা জিয়া দাবি করেন, ‘আমাদের আন্দোলন সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক। কিন্তু আন্দোলন চলাকালে যাত্রীবাহী ও অন্যান্য যানবাহনে পেট্রোল বোমা মেরে ইতোমধ্যে নারী-শিশুসহ বেশ কয়েকজন নাগরিকের জীবন কেড়ে নেয়া হয়েছে। এই শোচনীয় মৃত্যুর পাশাপাশি বার্ন ইউনিটে ঝলসানো দেহ নিয়ে অনেকে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। নিরপরাধ মানুষের ওপর এই বীভৎস আক্রমণের আমরা তীব্র নিন্দা জানাই। এইসব নৃশংস হামলায় জড়িত প্রকৃত অপরধীদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ফের দাবি জানাই।’
আওয়ামী লীগের পূর্ববর্তী সহিংসতা কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘আমি পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, মানুষের জীবন নিয়ে অপরাজনীতি আমরা করিনা। হত্যা ও লাশের রাজনীতির সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এমন হীন ও নৃশংস অপরাজনীতি আমরা কখনো করবো না। এখন যারা ক্ষমতা আঁকড়ে আছে তারাই অতীতে আন্দোলনের নামে যাত্রীবাসে গান পাউডার দিয়ে আগুন লাগিয়ে ডজন ডজন মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে। লগি-বৈঠার তা-বে মানুষ হত্যা করে লাশের ওপর নৃত্য করেছে। একটার বদলে দশটা লাশ ফেলার প্রকাশ্য নির্দেশ দিয়েছে। অফিসগামী কর্মকর্তাদের প্রকাশ্য রাজপথে বিবস্ত্র করেছে। সমুদ্রবন্দর অচল করেছে। রেল স্টেশন পুড়িয়ে দিয়েছে। লাগাতার হরতালে এসএসসি পরীক্ষা ৩ মাস পর্যন্ত পিছাতে বাধ্য করেছে। পবিত্র রমজান মাসে পর্যন্ত হরতাল করেছে।’

তিনি বলেন, ‘দেশবাসী জানেন কণিষ্ঠপুত্রের অকাল মৃত্যুতে আমি মানসিকভাবে এক চরম শোকাবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছি। এই বিপর্যয়ের ধকল কাটিয়ে ওঠার আগেই আমার সঙ্গে কী ধরনের নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে। সুপরিকল্পিতভাবে সর্বমুখী চাপ ও অনিরাপদ পরিস্থিতি তৈরি করে তারা আমাকে জনগণ ও নেতা-কর্মী থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সচেষ্ট। কিন্তু কোনো অনৈতিক চাপ বা ভীতির মুখে আমি নত হবো না। যে-কোনো পরিস্থিতি বা পরিণতির জন্য আমি তৈরি আছি।’

গত এক বছর ধরে বিএনপি শান্তিপূর্ণভাবে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ক্রমাগত আহ্বান জানিয়েছে কিন্তু সরকার কোনো কিছুতে কর্ণপাত করেনি বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অব্যাহত অবরোধ হরতালে এ পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা দুইবার পেছানো হয়েছে।


শেয়ার করুন