রোহিঙ্গা স্রোত এখন কুতুপালংয়ে

উখিয়ার বালুখালীতে গতকাল শিশু সন্তান নিয়ে ত্রাণের জন্য অপেক্ষা

সিটিএন ডেস্ক :
পাহাড়ে অবৈধভাবে গড়া তাঁবু ভেঙে দেওয়া হচ্ছে, ঘুমধুম ও তুমব্রু পাহাড় শূন্য করা হয়েছে, আরও এক হাজার একর জমি বরাদ্দ

অস্থায়ীভাবে রোহিঙ্গাদের এক প্লাটফর্মে রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এরই মধ্যে কুতুপালং ও বালুখালী সীমানা ঘেঁষা আরও এক হাজার একর জমি বরাদ্দ করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্য।

এখন বনবিভাগ থেকে নেওয়া জমির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে তিন হাজার একর। বান্দরবানের তুমব্রু, ঘুমধুম থেকে শুরু করে টেকনাফে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সব রোহিঙ্গাকে কুতুপালং নিয়ে আসা হচ্ছে। তাই স্রোত এখন কুতুপালংমুখী। এরই মধ্যে তুমব্রু ও ঘুমধুম পাহাড়ে থাকা প্রায় সব রোহিঙ্গাকেই নিয়ে আসা হয়েছে। অবৈধভাবে পাহাড়ে বসবাস করা সব রোহিঙ্গাকে বের করে দিতে জেলা প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেছেন, কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প সম্প্রসারণে আরও এক হাজার একর বনভূমি বরাদ্দ করছে সরকার। এ নিয়ে ক্যাম্পটির জমির পরিমাণ দাঁড়াবে তিন হাজার একর। ১৯৭৮ সালের পর যেসব রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তারা এখন বিচ্ছিন্নভাবে অনেকগুলো ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। তাদেরই এখন এক ক্যাম্পের আওতায় আনা হবে। এখন পর্যন্ত সেখানে ৭৫ হাজারের বেশি শেড নির্মাণ করা হয়েছে। সব রোহিঙ্গাকে ওই ক্যাম্পে জায়গা দিতে সেখানে মোট দেড় লাখ শেড নির্মাণ করবে সরকার। গতকাল সরেজমিন বান্দরবানের জলপাইতলী, আজোহাইয়্যা, বড় শনখোলা, তুমব্রু ও ঘুমঘুম এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে বেশ কয়েকটি পাহাড় এখন রোহিঙ্গাশূন্য। পাহাড়গুলো ন্যাড়া হয়ে আছে। কোলাহলপূর্ণ ওই এলাকা এখন অনেকটাই নীরব, নিস্তব্ধ। রোহিঙ্গারা যখন ওইসব পাহাড়ে আশ্রয় নেয়, তখন গাছপালাসহ সব গুল্ম কেটে ফেলে। একইভাবে মাটি কেটেও সমতল করা হয়। পরে তাঁবু খাটিয়ে বসবাস শুরু করে তারা। গতকাল দুপুরে দেখা যায়, বৃষ্টি হওয়ার পরপরই পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ছে। তুমব্রু এলাকায় বসবাস করা আবদুর রহিম জানান, বড় ধরনের কোনো বৃষ্টিপাত হলে এই পাহাড়ে ধস হতো। এতে বহু রোহিঙ্গা হতাহত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। তাই তারা আগেভাগেই সরে গিয়ে নিজেদের জীবন নিরাপদ করেছে। তবে উখিয়ার থাইংখালী, পালংখালী, আঞ্জুমানপাড়া, টেকনাফের লম্বাবিল, উনছিপ্রাংসহ বেশ কিছু এলাকায় বিস্তৃত পাহাড়ে এখনো রোহিঙ্গারা গাছপাতা কেটে তাঁবু বানিয়ে বসবাস করছে। এ প্রসঙ্গে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মাহিদুর রহমান জানান, যেখানেই রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকুক, তাদের সরকার নির্ধারিত স্থানেই ফিরে আসতে হবে। কুতুপালং ও বালুখালীতে সরকার নির্ধারিত দুই হাজার একরের মধ্যে ৭০ ভাগেই রোহিঙ্গারা তাঁবু খাটিয়েছে। তাই সরকার আরও এক হাজার একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। আশা করি, এর মধ্যেই অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা তাঁবু তৈরি করতে পারবে। অভিযোগ রয়েছে, অবৈধভাবে পাহাড়ে বসবাস করতে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করছেন কতিপয় বাংলাদেশি দালাল। তারা কিছু টাকার বিনিময়ে সরকারি জমিতে রোহিঙ্গাদের তাঁবু গেড়ে দিচ্ছেন। তাদের ধরতে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে। জেলা প্রশাসক আলী হোসেন এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনও সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন সাইফুল আশরাফ জয় ও জুয়েল আহমেদ শুরু থেকেই মাঠে রয়েছেন। এ পর্যন্ত প্রায় আড়াইশ দালালকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। গতকালও এক দালালকে ছয় মাসের সাজা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ ও র‍্যাব মাঠে কাজ করছে। জানা যায়, কুতুপালং ও বালুখালীতে প্রাথমিকভাবে ইউএনএইচসিআর ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় ১৪ হাজার শেড নির্মাণ করা হবে। এর নকশাও অনেকটা চূড়ান্ত। এখন নতুন করে এক হাজার একর জমি বরাদ্দ করায় শেডের পরিমাণও বেড়ে যাবে।
এর মধ্যে ১০ হাজার শেড তৈরি করবে ইউএনএইচসিআর। বাকি চার হাজার করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তবে সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন হাজার একর জমির মধ্যেই সব রোহিঙ্গার জন্য তাঁবু নির্মাণ করা সম্ভব। এদিকে আশ্রয় শিবির গড়ার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ তৈরি করতে নিবন্ধন কার্যক্রমও চলছে। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন হয়েছে। নিবন্ধিতদের বড় অংশই শিশু। বয়স্করা নিবন্ধনে তেমন সাড়া দিচ্ছে না। এর কারণ, পরিচয়পত্রে জাতীয়তা লেখা হচ্ছে মিয়ানমার। রোহিঙ্গাদের দাবি, জাতীয়তা হতে হবে রোহিঙ্গা। একটি দুষ্টুচক্রের প্ররোচনায় নিবন্ধনে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে বয়স্ক রোহিঙ্গারা। নিবন্ধনের দায়িত্বে থাকা সেনা কর্মকর্তা লাবিব সিদ্দিক সিয়াম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সামান্য সমস্যা থাকলেও এটা ঠিক হয়ে যাবে। কুতুপালং, বালুখালী, নয়াপাড়া ও থাইংখালীতে ৫০টি বুথে নিবন্ধন চলছে। যেভাবে নিবন্ধন হচ্ছে, তাতে দুই আড়াই মাসেই সব রোহিঙ্গার তালিকা তৈরি সম্ভব হবে।


শেয়ার করুন