রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান মিয়ানমারের হাতে: মার্কিন রাষ্ট্রদূত

20408b103b81a61d2a1a2a158836784c-teknaf-pic-1-31-01-17-jpgরোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান মিয়ানমারের হাতে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট। এ ব্যাপারে মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অব্যাহত থাকবে। আজ মঙ্গলবার কক্সবাজারের টেকনাফে দুটি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত আজ টেকনাফের দুটি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের দমন-পীড়নের কারণে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে টেকনাফে পালিয়ে আসা অন্তত ১৮ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, আজ সকালে মার্কিন রাষ্ট্রদূত কক্সবাজার শহর থেকে সড়কপথে টেকনাফের উদ্দেশে রওনা দেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি টেকনাফের লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে পৌঁছান। এই শিবিরে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। এর মধ্যে সদ্য আসা রোহিঙ্গা আছে প্রায় ৩৭ হাজার।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্রথমে এই শিবিরের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইএমও) লেদা স্বাস্থ্য ক্লিনিক পরিদর্শন ও সেখানে চিকিৎসাধীন রোহিঙ্গা রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তিনি শিবিরের এ, বি, সি ও ই ব্লক (রোহিঙ্গাদের থাকার শেডঘর) পরিদর্শন করেন। দুপুর ১২টার দিকে তিনি পুনরায় এই শিবিরে থাকা আইএমও কার্যালয়ে যান। সেখানে তিনি রাখাইন রাজ্য থেকে সদ্য আসা ১৪ জন নারী ও চারজন রোহিঙ্গা পুরুষ এবং কয়েক বছর আগে আসা আরও দুজন রোহিঙ্গা পুরুষের সঙ্গে কথা বলেন।

রাখাইনে নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে ছোটগজরবিল থেকে পালিয়ে আসা ফিরোজা বেগম (৩২) কান্না শুরু করেন। তাঁর কোলে থাকা ২২ দিন বয়সী শিশুটিও এ সময় কান্না শুরু করে। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ডিসেম্বরের শেষ দিকে মিয়ানমারের সেনা ও পুলিশ তাঁদের গ্রামটি ঘিরে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিতে তাঁর স্বামী, বাবা, শ্বশুর, ননদসহ পরিবারের নয়জন নিহত হন। এরপর রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। তখন তিনি অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। কোনোমতে তিনি চার বছর বয়সী এক ছেলে ও আড়াই বছর বয়সী এক মেয়েকে নিয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নেন। প্রাণ বাঁচাতে ওই রাতেই তিনি ছেলেমেয়েকে নিয়ে টেকনাফ পালিয়ে আসেন। এরপর লেদার এই রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রয় নেন। ২২ দিন আগে এই শিবিরের ই-ব্লকের একটি কক্ষে জন্ম নেয় কোলের শিশু সন্তানটি। তাঁর দাবি, ‘মুসলমান বলে আমাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হচ্ছে না। দমন-পীড়ন চালিয়ে ঘরছাড়া করা হচ্ছে।’ ‘তাহলে আমরা কোথায় যাব?’—সে প্রশ্নও করেন তিনি।

লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি দুদু মিয়া মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেন, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নির্যাতন এখনো বন্ধ হয়নি। দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন। নাগরিকত্ব ফিরে পেলে রোহিঙ্গারা এ দেশে এক মুহূর্তও থাকবে না।

রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ ভালো কাজ করেছে।’ ঘটনার চার মাস পর কেন এই পরিদর্শন—এর জবাবে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজতে তাঁর এই রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই মিয়ানমারের ওপর চাপ দিয়ে আসছে। এই চাপ অব্যাহত থাকবে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান মিয়ানমারের হাতে। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ মিয়ানমারকে নিতে হবে।’

বেলা দুইটার দিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবির পরিদর্শন করেন এবং সেখানেও কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন।

সেখান থেকে মার্শা বার্নিকাট কক্সবাজারে পৌঁছে শহরের বাহারছড়া এলাকার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কার্যালয়ে যান। সেখানে কমিশনার এম এম রিজওয়ান হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে তিনি কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেন। বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসক জানান।


শেয়ার করুন