রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী

মিয়ানমার থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিতে দেশটির ‘টালবাহানার’ মধ্যে এই প্রক্রিয়ায় ভারতের সহযোগিতা চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গণভবনে ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে প্রধানমন্ত্রী এই সহযোগিতা চান। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসনে ভারত মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করুক।’

‘বাংলাদেশ ইন্ডিয়া মিডিয়া ডায়ালগ’ এ অংশ নিতে এই সাংবাদিকরা বাংলাদেশে এসেছেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ইনস্টিটিউট অব কনফ্লিক্ট, ল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ-আইসিএলডিএস এই সংলাপের আয়োজন করে।

গত আগস্টে রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযানের মুখে প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে ১১ লাখের মতো রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে। তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশ দেশটির সঙ্গে চুক্তিও করেছে। কিন্তু মিয়ানমার নানা অজুহাত দেখিয়ে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে চাইছে বলে ১৯ ফেব্রুয়ারির সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আবার বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের স্রোত তৈরি হওয়ার পর বাংলাদেশ বিষয়টি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে গেলেও ভারতকে পুরোপুরি পাশে পায়নি। মিয়ানমারের সঙ্গেও ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে চাওয়া ভারত এ ক্ষেত্রে ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নেয়ার চেষ্টা করছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে জাতিসংঘে তোলা বাংলাদেশের প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হলেও ভারত ভোট দেয়নি বাংলাদেশকে। অবশ্য বাংলাদেশের বিপক্ষেও অবস্থান নেয়নি তারা। বাংলাদেশের পক্ষে ভোট দানে বিরত থাকা দেশটি অবশ্য রোহিঙ্গাদের জন্য ত্রাণ পাঠিয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সঙ্গে ফিজিকাল অ্যারাঞ্জমেন্ট চু্ক্তি সই হয়েছে গত ১৬ জানুয়ারি। ২৩ জানুয়ারি থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হবে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা। তবে সেটি পিছিয়ে গেছে। আর গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থ শোয়ের আতে আট হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এদেরকে দ্রুত ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার রাজি হয়েছে।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ভারতের সহযোগিতা চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাপারে আমরা দিল্লির সহযোগিতা চাই। তারা যেন মিয়ানমারের নাগরিকদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। যদি ভারত মিয়ানমারকে চাপ অব্যাহত রাখে তাহলে হয়তো তারা তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।’

প্রধানমন্ত্রী মনে করছেন, কর্মসংস্থানের অভাবে শরণার্থী রোহিঙ্গারা জঙ্গিবাদে ঝুঁকে পড়তে পারে। আর এ জন্য তাদের প্রত্যাবাসন ভারত-বাংলাদেশ উভয়ের জন্য জরুরি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যখন জনগণের মধ্যে হতাশা এসে পড়ে এবং কোন কাজ থাকে না, তখন তাদের কেউ কেউ জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়তেই পারে।

‘এছাড়াও সেখানে বৈশ্বিক সমস্যা জঙ্গিবাদের উত্থান হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।…যদিও আমরা লক্ষ্য রাখছি এ ধরনের কোনও ঘটনা যেন না ঘটে।’

‘রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে ছোট ছোট শিশুরা রয়েছে এবং প্রতিদিনই শিশুর জন্ম এই সংখ্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। পাশাপাশি সেখানে বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষ এবং যুবক রয়েছে।’

ভারতীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ-ভারত ও বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক, আগামী নির্বাচন, তিস্তার পানিবণ্টন, যোগাযোগ এবং বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলের ভারতে সম্প্রচার সম্পর্কিত বিষয়টি তুলে ধরেন।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম, আইসিএলডিএস চেয়ারম্যান এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ জমির, আইসিএলডিএস ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান, উপদেষ্টা মোজাম্মেল বাবু, আহবায়ক শ্যামল দত্ত এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহ্সানুল করিম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন