রোহিঙ্গা নিয়ে আলোচনায় ধর্মীয় নেতাদের চান ওআইসি মহাসচিব

সিটিএন ডেস্ক :

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশে ও মিয়ানমারের ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন মুসলিম দেশগুলোর জোট ওআইসির মহাসচিব ইউসেফ বিন আহমদ আল-ওসাইমিন।

বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতকালে তিনি বলেন, মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা এবং বাংলাদেশের মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।

দীর্ঘদিন ধরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভার বহন করা আসছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে গত বছরের শেষ দিকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে নতুন করে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে রোহিঙ্গারা। এই দফায় ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ঢুকেছে বলে সরকারের ভাষ্য।

আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময়ে আহ্বান জানালেও তাতে সাড়া দেয়নি মিয়ানমার। মুসলিম এই জনগোষ্ঠীকে নিজেদের নাগরিক বলেও স্বীকার করতেও তাদের আপত্তি রয়েছে।

চার দিনের সফরে বুধবার ঢাকায় পৌঁছানো ওআইসি মহাসচিব বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার কার্যালয়ে সাক্ষাত করেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইসহানুল করিম বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, “রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ায় ওআইসি মহাসচিব প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, মিয়ানমারের বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতা ও বাংলাদেশের মুসলিম ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে আলোচনা এই সমস্যার সমাধানের পথ বের করবে।”

প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে ওআইসি মহাসচিবকে জানান, বাংলাদেশকে এই সমস্যা নিয়ে নিয়ে ভুগতে হচ্ছে ১৯৯১ সাল থেকে। নিবন্ধিত ও অনিবদ্ধিত মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রায় চার লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প

কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের কক্সবাজারে বসবাস করে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ‘মানবিক কারণে’ নোয়াখালীর হাতিয়ায় সরিয়ে নেওয়ারও ঘোষণা রয়েছে সরকারের।
ওআইসি মহাসচিব রোহিঙ্গাদের স্থানান্তারের ওই সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন বলে ইসহানুল করিম জানান।

শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন, মিয়ানমার যাতে তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়, সেজন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।

প্রেস সচিব জানান, ওআইসি মহাসচিব সাক্ষাৎকালে জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেন। প্রধানমন্ত্রীও সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তাকে জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি এবং এ কাজে ইমাম, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্পৃক্ত করে ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে।

“বাংলাদেশে কিছু রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদে পৃষ্ঠপোষকতা করছে বলেও প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে উল্লেখ করেন,” বলেন তার প্রেস সচিব।

শেখ হাসিনা বৈঠকে বলেন, তার সরকারের লক্ষ্য হল বাংলাদেশের জনগণের চাহিদা পূরণ করা।

১৯৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যরা নিহত হওয়ার পর ছয় বছর নির্বাসিত জীবনের কথাও তিনি এ সময় স্মরণ করেন।
বৈঠকের শুরুতেই আল-ওসাইমিন ওআইসির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন।

ইহসানুল করিম বলেন, “বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রশংসা করে ওআইসি মহাসচিব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মুসলিম বিশ্বের মহিলাদের মধ্যে উজ্জ্বল উদাহরণ’ হিসাবে বর্ণনা করেন এবং তাকে ‘সফল নেত্রী’ হিসাবে অভিহিত করেন।”

আল-ওসাইমিন ওআইসির সদস্য দেশগুলোর জন্য বিজ্ঞান, কারিগরী এবং চিকিৎসা বৃত্তি চালুর কথা প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের নারী উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোতে ওআইসির অংশগ্রহণের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ওআইসিভুক্ত দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ পেলে বাংলাদেশ তাকে স্বাগত জানাবে।

আগামী বছর ওআইসির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পর্যটনমন্ত্রীদের দুটি সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে বাংলাদেশে। এ বিষয়ে ওআইসির পক্ষ থেকে সন্তোষ প্রকাশ করেন আল-ওসাইমিন।

ওআইসির মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার পর বাংলাদেশে এটাই তার প্রথম সফর। এই সফরে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি।

অন্যদের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী এবং প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।


শেয়ার করুন