রোহিঙ্গারা কৌশলে ভোটার হতে তৎপর

ডেস্ক নিউজঃ

কক্সবাজারসহ সারা দেশে শুরু হয়েছে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম। এতে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা কক্সবাজারে কৌশলে ভোটার হতে তৎপরতা শুরু করেছে রোহিঙ্গারা। এতে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করছে পুরাতন রোহিঙ্গারা। তারাই মূলত নতুন রোহিঙ্গাদের কৌশলে নাম পরিচয় গোপন করে জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে ভোটার হতে সহায়তা করছে। এছাড়া পুরাতন ভোটার হয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের ছেলেমেয়েরা অবাধে ভোটার তালিকায় নাম উঠানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। তাই দ্রæত সকল পুরাতন রোহিঙ্গাদের তালিকা করে তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র বাতিল করে হালনাগাদ ভোটার কার্যক্রমে কোন ভাবেই যেন রোহিঙ্গা ভোটার হতে না পারে সে বিষয়ে কঠোর হওয়ার দাবী জানান সচেতন মহল।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সহ সাধারণ স¤পাদক নুনিয়ারছড়া সমাজ কমিটির সাধারণ স¤পাদক কুতুব উদ্দিন বলেন, স¤প্রতি হালনাগাদ ভোটার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় ভোটার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে এখনো পৌর এলাকা বা সদরে শুরু হয়নি। কিন্তু আমাদের জানা মতে, এখন থেকেই অনেক পুরাতন রোহিঙ্গারা কৌশলে তাদের অনেক আত্মীয় স্বজনকে ভোটার করার জন্য কক্সবাজার পৌরসভাসহ জেলা বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে কৌশলে জন্মনিবন্ধন, জাতীয়তা সনদপত্র, বিশেষ প্রত্যায়নপত্র সংগ্রহ করছে। রোহিঙ্গাদের হাতে থাকা অনেক জাতীয় পরিচয়পত্র ভুয়া। তারা ঢাকা চট্টগ্রাম, ফেনী কুমিল্লাসহ অনেক জায়গার ঠিকানা দিয়ে ভোটার হয়েছে। বাস্তবে অনেকে এনআইডি কেন্দ্রীয় সার্ভারেও নেই। কিন্তু সেগুলো যাচাই বাছাই করার কোন সুযোগ নেই। সে কারণে তারা নতুন রোহিঙ্গাদের ভাই, বোন, ছেলেমেয়ে পরিচয় দিয়ে ভোটার করাচ্ছে।
সদরের খুরুশকুল এলাকার এক ইউপি সদস্য বলেন, খুরুশকুল পেচাঁরঘোনা এলাকার বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে আলী হোসেন নামের এক রোহিঙ্গা বর্তমানে জেল গেইট এলাকায় বহুতল ভবনের মালিক। তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দেওয়ার পরে তদন্তাধীন আছে। কিন্তু সেই আলী হোসেন বর্তমানে তার পরিচয় পত্র দিয়ে অনেক নতুন রোহিঙ্গা এবং তার ছেলেমেয়েকে ভোটার করানোর জন্য কাজ করছে। একইভাবে খুরুশকুল টাইমবাজার এলাকার পাশে আবদুল্লাহ নামের এক রোহিঙ্গা স¤প্রতি বিশাল বাড়ি করেছে। সেখানে সিসি ক্যামেরাও স্থাপন করেছে। তার বিরুদ্ধে স্থানীয়ভাবে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রোহিঙ্গা ও তার নামে থাকা এনআইডি দিয়ে নতুন রোহিঙ্গাদের ভোটার করার জন্য কাজ করছে।

এদিকে কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ হাজী পাড়া এলাকার জাহেদ, খোরশেদসহ অনেকে জানান, এলাকায় মনজুর আলম নামের এক রোহিঙ্গা এলাকায় ভুয়া খতিযান সৃজন করে এলাকার অনেক মানুষ থেকে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। পরে বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক তার সেই ভুয়া খতিয়ান বাতিল করে। সেই রোহিঙ্গা বর্তমানে ক্যা¤প থেকে এনে অনেক রোহিঙ্গাকে ভোটার করার জন্য কাগজপত্র সংগ্রহ করছে বলে জানান এলাকাবাসী। এছাড়া দক্ষিণহাজী পাড়া এলাকার বাসিন্দা পরিচয় দিয়ে ১৩ লাখ ইয়াবাসহ আটক হয়ে বর্তমানে জেলে থাকা বেলাল এবং তার শ্যালক সাইফুল, রহমত উল্লাহ, হাজী জমির,সহ অনেকে নতুন রোহিঙ্গাদের ভোটার করার জন্য মহেশখালীর বিভিন্ন ঠিকানা দিয়ে কাগজপত্র সংগ্রহ করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া মোহসেনার স্বামী ইউনুচ বর্তমানে হাজীপাড়ায় দোকান করে তার কাছে ক্যা¤েপর রোহিঙ্গার কার্ড আছে আবার স্থানীয় ভাবে এনআইডিও আছে তবে আমাদের জানা মতে সেটা ভুয়া।
এদিকে পেকুয়া উপজেলার সংবাককর্মী এম. গিয়াস উদ্দিন বলেন, ২০ মে থেকে এলাকায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখানে প্রতিটি ইউনিয়নে এখন মানুষের উপচেপড়া ভীড়। সেখানে তারা জন্মনিবন্ধন, জাতীয় সনদপত্র, প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করছে। এখানে অনেক রোহিঙ্গা আছে। তার মধ্যে অনেক পুরাতন রোহিঙ্গাদের আত্মীয়স্বজন। আবার কিছু রোহিঙ্গাদের সহায়তা করছে স্থানীয় মানুষ। টাকার লোভে টাকা অনেক রোহিঙ্গাদের নিজেদের আত্মীয় স্বজন এবং ছেলেমেয়ে পরিচয় দিচ্ছে। আমার মতে এসব স্থানীয়দের রাষ্ট্রদ্রোহিতা মামলা দেওয়া দরকার।
পিএমখালী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার মিজানুর রহমান সিকদার বলেন, আমার এলাকায় অনেক পুরাতন রোহিঙ্গা ভোটার হয়েছে। আমি তাদের আইডি কার্ড জব্দ করার জন্য চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছি।
এ ব্যপারে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, উপজেলা পরিষদের মাসিক সভায় আমরা বলে দিয়েছি, কোন রোহিঙ্গাদের যাতে সনদ বা অন্য কোন কাগজ পত্র দেওয়া না হয়। আমার মতে সবাই সচেতন আছে। তার পরও যে রোহিঙ্গা ভোটার হওয়ার আশংকা নেই সেটা বলা যাবে না। কারণ, রোহিঙ্গা সংকট এখানকার সমস্যা না।
তিনি বলেন, আমার জানা মতে, অনেক রোহিঙ্গা এখন রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে অনেক বেশি প্রতিষ্টিত। তাদের বিপক্ষে বলার মত লোক নাই।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার এসএম শাহাদাত হোসেন বলেন, কোন ভাবেই যাতে রোহিঙ্গা ভোটার হতে না পারে সে জন্য সরকার অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। মূলত জনপ্রতিনিধিরা যদি সতর্ক থাকে তাহলে একজন রোহিঙ্গাও ভোটার হতে পারবে না বলে জানান তিনি।


শেয়ার করুন