রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে ‘বদ্ধপরিকর’ ইসি

2015_10_01_19_41_31_laIjBWqeAOgFCrNpbNfwN03NMWhEYa_originalসিটিএন ডেস্ক:

ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি ঠেকাতে উঠে পড়ে লেগেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে নানা পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় তিন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শাখায় নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করতে আলাদা চিঠি পাঠাচ্ছে কমিশন।

আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক কার্যালয় এবং শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে এই চিঠি পাঠাবে কমিশন।

ইসি সূত্রে জানা যায়, ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তি রোধ করতে ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির ১৪টি উপজেলাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। এসব এলাকায় বিশেষ কমিটিও গঠন করা হয়েছে; যাদের সুপারিশের ভিত্তিতে ওই এলাকাগুলোতে ভোটার তালিকা করা হয়। তারপরও কিছু অসাধু চক্রের হাত ধরে রোহিঙ্গারা ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। এজন্য ইসি রোহিঙ্গাদের তথ্য সংগ্রহ করতে আলাদা ডেটাবেজ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

ভোটার তালিকায় বিভিন্ন উপায়ে রোহিঙ্গাদের অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে এবং তা রোধে আলাদা ডেটাবেজ তৈরির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে চিঠিতে মূলত, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তথ্য সংরক্ষিত থাকলে সে আলোকে ইসির নির্ধারিত ছকের মাধ্যমে তথ্য সরবরাহ করতে বলা হচ্ছে। ছক মোতাবেক তথ্য দেয়া সম্ভব না হলেও সংগৃহীত তথ্য (যেভাবে আছে) সফট কপিসহ সরবরাহের জন্য অনুরোধও করছে ইসি।

ইসির সিনিয়র সহকারি সচিব মাহফুজা আক্তার বাংলামেইল বলেন, রোহিঙ্গাদের তথ্য সরবরাহ সংক্রান্ত একটি ফাইল প্রস্তুত করা হয়েছে। ফাইলটি অনুমোদন দিলে শিগগিরই মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে রোহিঙ্গাদের তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হবে।

এ বিষয়ে ইসির যুগ্ম-সচিব জেসমিন টুলী বাংলামেইলকে বলেন, রোহিঙ্গাদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি রোধে আলাদা তথ্যভাণ্ডার করা হচ্ছে। এ হিসেবে আগামী সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও জেলায় তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়া হবে।

তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়গুলো থেকে সংরক্ষিত তথ্যগুলো পেলে বিদ্যমান ভোটার তালিকা থেকে রোহিঙ্গাদের শনাক্ত করা এবং আগামীতেও ভোটার হওয়া থেকে তাদের ঠেকানো যাবে। তাছাড়া ইসির কাছে নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের কোনো ডেটাবেজ নেই। সহযোগিতা পেলে ডেটাবেজ করা সহজ হবে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, রোহিঙ্গা ভোটার ঠেকাতে ইসি বদ্ধপরিকর। এ কারণে বিভিন্ন সময়ে তারা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। এছাড়া চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ বাড়ার কারণে কমিশনে উদ্বেগ বেড়েছে। এসব এলাকায় ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা ঠেকাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ফের ফরম যাচাই ও নিবন্ধন কেন্দ্রে বিশেষ কমিটির প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ইসি সূত্রে জানা যায়, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য জেলায় রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার না হতে পারেন, ইসি থেকে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে ও জুলাইয়ে রোহিঙ্গাদের তথ্য সরবরাহ করতে এই তিন জেলার প্রশাসককে তাগাদা দিয়ে চিঠি পাঠায় কমিশন। এছাড়া রোহিঙ্গা ভোটার ঠেকাতে স্থানীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কমিটিও গঠন করেছে কমিশন। চলমান হালনাগাদে যেন রোহিঙ্গারা অন্তর্ভুক্ত না হতে পারেন সে বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক, ওই এলাকাগুলোর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও নিবন্ধন কর্মকর্তা, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের তাগিদে ভোটার তালিকা থেকে ১০০ জন রোহিঙ্গাকে বাদ দেয়া হয়। তার আগে ২০০৯ সালে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের তাগিদে রোহিঙ্গা ও ভুয়া সন্দেহে কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙামাটি জেলায় ৪৮ হাজার ৬৭৩ জনের নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয় বলেও কমিশন সূত্রে জানা যায়।

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন ২০১৪ সালে রোহিঙ্গা ভোটার ঠেকাতে কক্সবাজার, বান্দরবান ও রাঙ্গামাটির ১৪টি উপজেলাকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। এছাড়া অন্যান্য জেলার ৪৬টি উপজেলায় রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সর্তক থাকার নির্দেশ দেয়া আছে।


শেয়ার করুন