ইসলাম মাহমুদ :
নির্যাত হয়ে রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে তাদের নিজ মাতৃভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে সাময়িক আশ্রয় দেওয়ার কথা উল্লেখ করে সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের বেশিদিন আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। এ বিশাল জনগোষ্ঠীর চাপ সামলানোর মতো অবস্থা বাংলাদেশের নেই। তাদের দ্রুত যেকোনো মূল্যে ফিরিয়ে নিতে হবে।
্লমিয়ানমারের সঙ্গে সুসম্পর্ক আছে এমন মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার, আন্তর্জাতিক স্তরে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগ এবং তৎপরতার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের ওপরও জোর দেন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় খালেদা জিয়া সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং ১৯৯১ সালের বিএনপির শাসনামলে নিজে প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় রোহিঙ্গা ঢলের পরিস্থিতি মোকাবিলার উদাহরণও তুলে ধরেন।
গত ২৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ছয় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। প্রতিদিন নতুন করে বাংলাদেশ সীমান্তে এসে ভিড় করছে রোহিঙ্গা সদস্যরা। এ ঘটনাকে ‘জাতিগত নিধনের ধ্রুপদি’ উদাহরণ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘ।
বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা এরই মধ্যে ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই অস্বাস্থ্যকর ক্যাম্পে বসবাস করছে। এটি এক মানবিক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
নতুন করে রাখাইনে সহিংতার শুরু পর বিপদসংকুল সমুদ্র ও নদী পাড়ি দিয়ে রোহিঙ্গাদের যখন বাংলাদেশমুখী ঢল নামে, তখন খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য লন্ডন ছিলেন। সেখান থেকে বিবৃতির মাধ্যমে সীমান্ত খুলে দিয়ে রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্যের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি। এরপর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।
তিন মাসের বেশি সময় লন্ডনে চিকিৎসা শেষে গত ১৮ অক্টোবর দেশে ফিরে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে কক্সবাজারের যাওয়ার কর্মসূচি দেন খালেদা জিয়া। পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচির অংশ হিসেবেই সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী গত শনিবার ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন। পথে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজ দুপুরে তিনি কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ইউনিয়নের ময়নারঘোনা ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন। পরে তিনি সেখানে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
এ সময়ই খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, রোহিঙ্গাদের পাশে সরকারের যেভাবে দাঁড়ানো উচিত ছিল, তা যথাযথ হয়নি। তিনি শরণার্থী ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বও সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান।
এর আগে দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ময়নারঘোনা এলাকায় পৌঁছান। আগে থেকেই সেখানে সারিবদ্ধভাবে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষরা ত্রাণের জন্য লাইন ভিড় করেন।
বিএনপির ত্রাণ কমিটির প্রধান মির্জা আব্বাস আগেই ১১০ টন ত্রাণবাহী ৪৫টি ট্রাক সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করেছেন। এর মধ্য থেকে কিছু সামগ্রী নিয়ে খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করবেন। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সবার মধ্যে এই ত্রাণ বিতরণ করবেন। এসব ত্রাণের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর পাশাপাশি শিশুখাদ্য ও মাতৃস্বাস্থ্যের উপযোগী খাদ্যও রয়েছে।
ময়নারঘোনায় ত্রাণ বিতরণ শেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাকিমপাড়ায় যান। সেখানে ত্রাণ বিতরণ শেষে যান বালুখালী এলাকার শরণার্থী শিবিরে। সেখানেও তিনি ত্রাণ বিতরণ করবেন।
এ ছাড়া খালেদা জিয়া বিএনপিপন্থী চিকিৎকদের সংগঠন ড্যাবের মেডিকেল টিমের কার্যক্রম পরিদর্শন করবেন। খালেদা জিয়ার সঙ্গে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল্লাহ আল নোমানসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা রয়েছেন।
আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কক্সবাজার সার্কিট হাউস থেকে যাত্রা শুরু করে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর। এ সময় তাঁর সঙ্গে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।