শতাধিক দালাল চক্র

রোহিঙ্গাদের জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা আদায়

টেকনাফ  প্রতিনিধি:
টেকনাফে রোহিঙ্গাদের নিয়ে অবৈধ ব্যবসা জোরেশোরে চলছে। ট্রলার যোগে রোহিঙ্গাদের এনে জিম্মি করে মোটা অংকের টাকা আদায় করা হচ্ছে। টাকা পয়সা, স্বর্ণালংকারসহ যাবতীয় কিছু ছিনিয়ে নিয়ে নিরীহ রোহিঙ্গাদের বন্দিশালায় আটক করে নির্যাতনের মাধ্যমে বিদেশে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামত টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বিদেশে থাকা স্বজনরাও নিরুপায় হয়ে টাকার বিনিময়ে দালালদের হাত থেকে আত্মীয়দের ছাড়িয়ে নিচ্ছেন। রোহিঙ্গা এবং স্থানীয়রা জানায়, মাথা পিছু দশ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের মুক্ত করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের সহায়তা করার অপরাধে এ পর্যন্ত ৪৩ জন দালালকে আটক করা হয়। এতে ৪২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান হয়েছে। অপরদিকে হ্নীলা দক্ষিণ যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দালাল সলিমকে অসুস্থতা জনিত কারণে অর্থ দন্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত।

এদিকে মিয়ানমারের মংডু শীলখালী এলাকার কলিমুল্লাহর পুত্র মো: নাঈম, একই এলাকার সলিমুল্লাহ জানান, লেংগুরবিল তুলাতলী এলাকার দালাল নুরুল বশর সাগর পথে ট্রলার যোগে এনে আমাদের কাছ থেকে দেড় লক্ষ টাকা নিয়ে নিয়েছেন। এরপরও আরো অতিরিক্ত টাকা আদায়ের আশায় আমাদেরকে তাদের বাড়ীতে বন্দি করে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছেন। এমনকি নারীদের ধর্ষণও করেছেন। পরে স্থানীয় এক নেতার সহায়তায় পুলিশের মাধ্যমে তাদের বন্দিশালা থেকে মুক্ত হয়েছি।

মিয়ানমারের জাদীরপাড়া এলাকার ছৈয়দ আলমের স্ত্রী মনজু আরা কেঁদে কেঁদে বলেন, বাহারছড়ার জাহাজপুরা এলাকার হেলাল উদ্দিনের পুত্র হাফেজ আব্দুল করিম দালাল আমরা ছব্বিশ জনের কাছ থেকে দশ লক্ষ ১৫হাজার টাকা নেওয়ার পরও আরো টাকা নেওয়ার জন্য বন্দিশালায় আটক করে রেখেছেন। এভাবে মনজু আরা ও সলিমুল্লাহর মত হাজার হাজার রোহিঙ্গার সবকিছু ছিনিয়ে নিয়ে জিম্মি করে রেখে বিদেশে থাকা স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামত টাকা নিয়ে নিচ্ছেন। উপজেলার সেন্ট মার্টিনদ্বীপ, শাহ পরীরদ্বীপ, সাবরাং, হাদুর ছড়া, মহেশখালীয়া পাড়া, কাটাবনিয়া, খুরের মুখ, সদরের তুলাতলী, লম্বরী, মিঠাপানিরছড়া, লেংগুরবিল, শীলখালী, নোয়াখালীয়াপাড়া, জাহাজপুরা, শামলাপুর, হ্নীলা, হোয়াইক্যংয়ের বিভিন্ন ঘাট দিয়ে শত শত নৌকা গিয়ে মিয়ানমার থেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসছে।

টেকনাফ উপকুলের এসব ঘাট দিয়ে শতাধিক দালাল সাগর পথে অবাধে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছেন। চল্লিশোর্ধ্ব দালাল আটক হলেও এখনো অধরা রয়েছেন লেংগুরবিল তুলাতলী এলাকার মোজাফফরের পুত্র নুরুল বশর, খাইরুল বশর কালা, বকসু মিয়ার পুত্র মো: আমিন, নুরুল আমিন নুরু, দক্ষিণ লেংগুর বিলের কলিমুল্লাহর পুত্র ইয়াকুব, আমির আহমদের পুত্র ফিরুজ মিয়া, মাঠপাড়া এলাকার আজিজুর রহমানের পুত্র কামাল হোসন, সাবরাং হারিয়াখালী এলাকার ইউসুফ আহমদের পুত্র নুরুল ইসলাম, নুরুল ইসলামের পুত্র রাশেদ, দক্ষিণ লম্বরী এলাকার দেলোয়ার হোসন, বাহারছড়া জাহাজপুরা এলাকার এখলাছুর রহমানের পুত্র মো: আলী মুন্না, হেলাল উদ্দিনের পুত্র হাফেজ আব্দুল করিম, মৃত কাদেরের পুত্র এনামুল হক, মো: হোছনের পুত্র নুর মোস্তফা ওরফে ভুলু মিস্ত্রি, মকতুল হোসেনের পুত্র হাবিবুর রহমান, শেখ আহমদের পুত্র রহমত উল্লাহ, আব্দু জাব্বারের পুত্র আনোয়ার, মো: হাসানের পুত্র কলিমুল্লাহ, হাবিবুর রহমানের পুত্র মোশতাক মিয়া, গোলাম আকবরের পুত্র জাকের হোছাইন, বার্মাইয়া ছৈয়দ আলম, হলবনিয়ার আব্দু সালের পুত্র সলিমুল্লাহ, ছৈয়দ আকবরের পুত্র মুসলিম মিয়া, নজির আহমদের পুত্র ছিদ্দিক, মো: হাসানের পুত্র নুর হোসন বুইশ্যা, দক্ষিণ শিলখালীর জাফর নুরের পুত্র মো: রফিক, হাজ্বী জাফর আহমদের পুত্র আলী আকবর, বার্মাইয়া পেঠান, স্থানীয় এক মেম্বারের নেতৃত্বে শাহ পরীরদ্বীপ পশ্চিম উত্তরপাড়া এলাকার কবির আহমদের পুত্র আলমগীর, শহিদুল্লাহ, ইব্রাহীম, ইসহাক, উত্তরপাড়া এলাকার নজির আহমদের পুত্র জিয়াউল, মো: ছৈয়দ, মৃত কালুর পুত্র জাহাংগীর আলম, কোনাপাড়া এলাকার ছৈয়দ করিমের পুত্র মো: আমিন ও একই এলাকার আব্দুল খালেক, হ্নীলা মৌলভীবাজার এলাকার আকিল আহমদের পুত্র মাইনুল ইসলাম, লেদার আবুল কাশেমের পুত্র মো: আলম, শামসুল আলমসহ উপজেলার জাদীমুরা, লেদা, রঙ্গিখালী, আলী খালী, ফুলের ডেইল, মৌলভীবাজার, নয়াবাজার, ঝিমংখালী, নয়াপাড়া, কাঞ্জরপাড়া, হোয়াইক্যং, লম্বাবিল, উলুবনিয়া এলাকার শতাধিক দালাল রোহিঙ্গাদের এনে জিম্মি করে টাকা আদায়ের মিশনে রয়েছেন।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: মাইন উদ্দিন খাঁন জানান, রোহিঙ্গাদের সহায়তার নামে যারা অপরাধ করছে সে সব দালালদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। ভ্রাম্যমান আদালতে ৪২ দালালকে সাজা ও এক দালালকে অর্থ দন্ড দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ওসি আরো জানান, রোহিঙ্গাদের নিয়ে যারা ব্যবসা করবে তাদেরকে কিছুতেই ছাড় দেওয়া হবেনা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক জানান, দালালের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অভিযান অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে বোট মালিক এবং জেলেদের নিয়ে সচেতনতামুলক সভাও করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধি এবং সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।


শেয়ার করুন