রোহিঙ্গাদের চোখ ভিন্ন কিন্তু চোখের পানি সকল মুসলমানের : এরদোগান

 

নিউ ইয়র্কে এরদোগান

সিটিএন ডেস্ক :
মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর দুঃখ-দুর্দশার বর্ণনা দিতে গিয়ে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেছেন, রোহিঙ্গাদের চোখ ভিন্ন হতে পারে কিন্ত এ চোখের পানি বিশ্বের সকল মুসলমানের।
তিনি আরো বলেন, আজকে কোথাও মুসলমানদের দ্বারা আক্রান্ত হলে তাদেরকে জঙ্গি বলা হয়। কিন্তু এখন বুদ্ধদের দ্বারা মুসলমানরা আক্রান্ত। কিন্তু তাদেরকে জঙ্গি বলা হচ্ছে না। এটাই আজ চরম বাস্তবতা। রোহিঙ্গা মুসলিমদের রক্ষায় যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান প্রেসিডেন্ট এরদোগান।
তিনি বৃহস্পতিবার দুপুরে নিউ ইয়কের্র একটি হোটেলে তার্কিস আমেরিকান ন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটি আয়োজিত এক সংবর্ধনায় এসব কথা বলেন।
এসময় এরদোগান আরো বলেন, আমার স্ত্রী ও সন্তান ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সফর করেছে। রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশার বর্ণনা শুনে গাঁ শিউরে উঠে। আজকে এ জনগোষ্ঠীকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। রোহিঙ্গাদের রক্ষায় তুরস্ক বাংলাদেশের পাশে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এরদোগান আরো জানান, তুরস্ক ২০১২ সাল থেকে এ পর্যন্ত মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের জন্য ৭০ মিলিয়ন ডলারের ত্রাণসহায়তা দিয়েছে। ভবিষ্যতে এটি অব্যাহত থাকবে।
এসময় তিনি একটি হাদীসের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তিনিই প্রকৃত মুসলমান যার হাত ও মুখ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদে থাকে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্য দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশি আমেরিকানদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এরদোগানের বক্তব্য শুরুর ৫ মিনিটের পরই ফতুল্লাহ গুলেনের এক সমর্থক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে কিছু সময়ের জন্য পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাকে গ্রেফতার করে। এর পর আরো তিনবার অনুরূপভাবে প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে থামিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। পরে বাকী তিনজনকেও উপস্থিত লোকজন কিল ঘুষি মারে। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাকি তিনজনকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। চার দফা বাধার পরও এরদোগান সাবলিল ভাষায় তার বক্তব্য শেষ করে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন। এরদোগানের এই থামিয়ে দেয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে এসেছে মার্কিন গণমাধ্যমগুলোতে।

রোহিঙ্গা সঙ্কট : মুসলিম দেশগুলোর প্রতি এরদোগানের আহ্বান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান মিয়ানমারে নিষ্ঠুরতার হাত থেকে রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে সম্ভব সবকিছু করতে মুসলিম দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
কাজাখস্তানের রাজধানী আস্তানায় রোববার প্যালেস অব ইন্ডিপেন্ডেন্স অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্মেলনে ভাষণকালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা এ অঞ্চলের মানবিক দুর্দশা লাঘবে মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করতে চাই।’
এরদোগান বলেন, তুরস্ক রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের কাছে আশা করছে সেখানকার কর্তৃপক্ষ মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের কারণে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দেবে।
‘রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গ্রুপগুলো এবং আমাদের মুসলিম দেশগুলোর একসঙ্গে কাজ করতে হবে’, বলেন এরদোগান।
এর আগে এরদোগান রোহিঙ্গা বিষয়টি জাতিসঙ্ঘের সাধারণ অধিবেশনে তোলার প্রুতিশ্রুতি দেন।
ওআইসি সম্মেলনে রোববার একটি সাধারণ ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষণায় মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানানো হয় যে, মিয়ানমার সকল অভিযোগ তদন্তে জাতিসংঘের মানবাধিক কাউন্সিলের মাধ্যমে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি করবে এবং অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনবে। নয়া দিগন্ত অনলাইন, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকবে তুরস্ক : এমিনি এরদোগান
মিয়ানমারে নির্যাতিত হয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের পাশে তুরস্ক থাকবে বলে জানিয়েছেন ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান। এছাড়া মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশ ও জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তুরস্কের ফার্স্ট লেডি এমিনি এরদোগান একথা বলেন।
এ সময় তার সাথে ছিলেন তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেগলুত কাভাসোগলু, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেনসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা।
এমিনি এরদোগান বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় তুরস্কের একটি বিশেষ বিমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান। সেখান থেকে সড়ক পথে প্রথমে উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যান।
সেখানে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের উপর মিয়ানমারে বর্বর নির্যাতনের বর্ণনা শুনেন। এ সময় কুশল বিনিময় করেন ক্যাম্প কর্মকর্তাদের সাথে।
বেলা পৌনে ২টায় উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান তিনি। এসময় ক্যাম্পের দেশী-বিদেশী কর্মকর্তারা এমিনি এরদোগানকে স্বাগত জানান। কক্সবাজার (দক্ষিণ) সংবাদদাতা, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭


শেয়ার করুন