রোহিঙ্গাদের এনআইডি:চসিক’র সাবেক কাউন্সিলরসহ ৬ জন দুদকের জালে

সিটিএন ডেস্ক:

মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি জাতীয়তা ও জন্মসনদ দেয়ার অভিযোগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন বালির বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় কাউন্সিলর কার্যালয়ের এক কর্মী, ওই রোহিঙ্গা নারী ও তার কথিত বাবা-মা এবং একজন দালালসহ মোট ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে।

সোমবার বিকেল পৌনে ৪টায় দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বাদি হয়ে মামলাটি করেন। অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে শরীফ উদ্দিন দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলার আসামিরা হলেন- চসিকের ৩৪ নম্বর পাথরঘাটা ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন বালি, ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ের জন্ম নিবন্ধন সনদ সহকারী সুবর্ণ দত্ত এবং ‘দালাল’ সিরাজুল ইসলাম, ২৬ বছর বয়সী রোহিঙ্গা নারী অহিদা এবং তার কথিত বাবা-মা মোহাম্মদ ইসমাইল ও মেহেরজান।

দুদক সূত্রে জানা যায়, রোহিঙ্গা নাগরিক অহিদ ও তার বাবা ইসমাইল ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর জাতীয়তা সনদপত্র পাওয়ার জন্য চসিকের ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর ইসমাইল বালির কাছে আবেদন করলে ওইদিনই তারা জাতীয়তা সনদপত্র পান। বাবা-ছেলে জাতীয়তা সনদ পাওয়ার পর আবার জন্ম নিবন্ধন ফরমের জন্য আবেদন করলে একই বছরের ৭ নভেম্বর জন্ম নিবন্ধন সনদপত্রও দেন কাউন্সিলর বালি।

অহিদা, ইসমাইল ও মেহেরজান- এই তিনজনই চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা ওয়ার্ড থেকে জাতীয়তা ও জন্মসনদ পেয়েছেন এবং কোতোয়ালি থানা নির্বাচন কমিশনারের কার্যালয়ে আবেদন করে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) পাওয়ার পাশাপাশি ভোটার তালিকায়ও অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। পরবর্তীতে তারা পাঁচলাইশ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। সেখানে তাদের পরিচয়ের সতত্য যাচাইয়ের বিষয়টি এড়াতে দালাল হিসেবে পরিচিত সিরাজুল ইসলামকে ধরেন অহিদ ও তার বাবা ইসমাইল।

জাতীয়তা সনদপত্র ও জন্মনিবন্ধন দেয়ার পর তাদের দুইজনের সেই পাসপোর্টের ফরমেও কাউন্সিলর ইসমাইল বালি সত্যায়িত করেন। ওই সময় ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর দুদকের অভিযানে পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিস থেকে দালাল ইসমাইল আটক হন। সেসময় অহিদ ও তার বাবা পরিচয় দেয়ে ইসমাইলকে জালিয়াতির মাধ্যমে পাসপোর্ট বানিয়ে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে নেন তিনি। একইসঙ্গে অহিদের বাবা ইসমাইল ও মা মেহের জান নন বলেও তদন্তে বের হয়ে আসে। তবে তারা সকলেই রোহিঙ্গা এবং সৌদি প্রবাসী।

দুদক সূত্র আরও জানায়, শুধুমাত্র কাউন্সিলর ইসমাইল বালির দেয়া জন্ম নিবন্ধন সনদপত্র ও জাতীয়তা সনদপত্রের ওপর ভিত্তি করেই চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার নির্বাচন কর্মকর্তা অহিদকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেন। বালির এই কাজে সহযোগিতা করেন ওই ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সনদ সহকারী সুবর্ণ দত্ত।

মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়েছে, অভিযুক্তরা একে অন্যের সহায়তায় লাভবান হয়ে এবং অন্যকে অন্যায়ভাবে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশে প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভুয়া পরিচয় ও নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে রোহিঙ্গা নাগরিকদের জন্য জাতীয়তা সনদ ও জন্ম সনদ তৈরি করেন এবং পাসপোর্ট ও এনআইডি পাওয়ার পথ তৈরি করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ৪৬৭, ৪৬৮, ৪৭১ ও ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে।

দুদকের চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিন বলেন, অভিযুক্ত ছয়জনের মধ্যে ইসমাইল, মেহের জান ও অহিদা তিনজনই রোহিঙ্গা। তারা এ দেশের নাগরিক না হওয়ার সত্ত্বেও দালাল সিরাজুল ইসলামের মাধ্যমে পাথরঘাটা ওয়ার্ড অফিস থেকে নাম-ঠিকানা গোপন করে টাকার বিনিময়ে নেয়া হয়েছে জন্ম নিবন্ধন সনদ ও নাগরিক সনদ। এসব সনদ নিয়ে তারা পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন।

তিনি বলেন, পরস্পর যোগসাজশে মোটা অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে এসব সনদ নিতে রোহিঙ্গাদের সহযোগিতা করেছে অভিযুক্ত তিনজন। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তরা সবাই পলাতক রয়েছে।

উল্লেখ্য, বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেন বালি চট্টগ্রাম নগরীর পাথরঘাটা ওয়ার্ড থেকে ২০১০ সালে ও ২০১৫ সালে দুই দফায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। সর্বশেষ গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চসিক নির্বাচনে কেন্দ্রে ঢুকে নির্বাচন কর্মকর্তাদের মারধরের অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এবারের নির্বাচনে জিততে পারেননি বালি।


শেয়ার করুন