রোগে কাবু মান্না

87101_b2ডেস্ক রিপোর্ট : কারাগারে ভাল নেই নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। রোগে কাবু হয়ে পড়েছেন। ভুগছেন ডায়াবেটিস, হার্ট, ব্লাড প্রেসারসহ নানা জটিল রোগে। নতুন করে দেখা দিয়েছে হাঁটুর ব্যথা। এতে তার হাঁটা-চলায় সমস্যা হচ্ছে।
ডিভিশন না পাওয়ায় তার ঠিকানা হয়েছে কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ড। যেখানে তাকে শুতে হচ্ছে সাধারণ বিছানায়। এতে পিঠের ব্যথায় ভুগছেন। ব্যথার জন্য থেরাপি নিয়েছেন টানা এক মাস। একটি মামলায় ১০ দিনের রিমান্ড ভোগ করলেও অপর মামলায় রিমান্ড শেষ না হওয়ায় জামিনের আবেদনও করতে পারছেন না তার আইনজীবীরা। তাই দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সাত নম্বর সেলে কাটছে ডাকসু’র সাবেক এই ভিপি’র কারাজীবন।
গত ২৮শে এপ্রিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য চলতি বছরের শুরু থেকেই প্রচারণা চালিয়েছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও টকশোতে সরকারের কঠোর সমালোচনা করে বক্তব্য রেখেছিলেন।
২৩শে ফেব্র“য়ারি আমেরিকায় অবস্থানরত ঢাকার সাবেক মেয়র ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থানরত সাবেক এক সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে মান্নার ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যায়। মোবাইল ফোনে রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গত ২৫শে ফেব্র“য়ারি গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। ২১ ঘণ্টা নিখোঁজ থাকার পর গুলশান থানায় তাকে হাজির করা হয়।
এরপর দু’টি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হয় সাবেক এই আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে। একটি মামলায় ১০ দিন রিমান্ড ভোগ করার পর অপর মামলায় ফের ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশের হেফাজতে থাকার ৩ দিনের মাথায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। পরে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে ন্যাশনাল হার্ট ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। কিছুদিন পর তাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফিরিয়ে নেয়া হয়।
কারাগারে ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন মান্না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে ফের তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। তবে পিঠের ব্যথার কারণে টানা একমাস বিএসএমএমইউতে থেরাপি নেন তিনি।
এদিকে গুলশানের বাসায় অনেকটা নিঃসঙ্গ জীবন কাটছে মান্নার স্ত্রী মেহের নিগারের। সংসার একাই সামলাচ্ছেন তিনি। আত্মীয়-স্বজনরা তার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। বাবাকে গ্রেপ্তারের সময় দেশে ছিলেন একমাত্র ছেলে নিলয় মান্না। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা শুরু হওয়ায় কিছুদিন পরেই তিনি চলে যান কানাডায়। বর্তমানে তিনি সেখানেই অবস্থান করছেন।
একমাত্র মেয়ে নিলম মান্না রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি মায়ের সঙ্গেই থাকেন। মান্নার গ্রেপ্তারের পর তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে।
মান্নার স্ত্রী মেহের নিগার বলেন, সপ্তাহে একদিন তাকে (মান্না) দেখতে যাই। গত শুক্রবার কারাগারে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম। নতুন করে তার হাঁটুতে সমস্যা দেখা দিয়েছে। কয়েকদিন আগে তার হাঁটু হঠাৎ করে ফুলে যায়। হাঁটুতে প্রচ- ব্যথা অনুভব করায় একটি ইনজেকশন দেন কারাগারের চিকিৎসকরা। ব্যথা সামান্য কমলেও তার হাঁটা-চলায় সমস্যা হচ্ছে।
এছাড়া ডায়াবেটিস, হার্টে ব্লক, ব্লাড প্রেসার, গ্যাস্ট্রিকসহ নানা পুরনো রোগ রয়েছে। এসব রোগের কারণে বাসায় কম মসলা ও তেল দিয়ে রান্না করা খাবার খেতেন। কিন্তু কারাগারে সেই খাবার পাচ্ছেন না। ফলে খাওয়া-দাওয়ার কিছু অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া কারাগারে তাকে ডিভিশন দেয়া হয়নি। তাই মেঝেতে শুয়ে লেখালেখিও করতে পারছেন না। ফলে তাকে ডিভিশন দেয়ার দাবি জানান স্ত্রী মেহের নিগার।
তিনি আরও বলেন, বগুড়ায় আমাদের কোল্ডস্টোরেজের ব্যবসা রয়েছে। মান্না গ্রেপ্তারের পর ব্যবসা-বাণিজ্যেও কোন খোঁজখবর নিতে পারিনি। এটি কোন অবস্থায় আছে সেটি জানি না। তবে রাজনীতি না বুঝায় দলের কোন খোঁজখবর রাখেন না তিনি।
নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এসএম আকরামের নেতৃত্বেই সংগঠনটি চলছে। এ ব্যাপারে নাগরিক ঐক্যের দপ্তর সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেন, মান্না ভাইয়ের মুক্তির জন্য দলের পক্ষ থেকে আমরা আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। ইতিমধ্যে আলোচনা সভা-মানববন্ধনসহ কয়েকটি কর্মসূচি পালন করছি। আগামী সপ্তাহে আমাদের দলীয় বৈঠক রয়েছে। ওই বৈঠক থেকে মান্নার মুক্তির দাবিতে সমাবেশের কর্মসূচি আসতে পারে।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় মান্না ভাই ১০ দিনের রিমান্ড ভোগ করেছেন। কিন্তু অপর মামলায় ১০ দিনের রিমান্ডে পাঠালে তিন দিনের মাথায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই ওই রিমান্ড শেষ না হওয়া পর্যন্ত জামিনের আবেদন করতে পারছি না।
এছাড়া কারাগারে তাকে ডিভিশন দেয়ার জন্য উচ্চ আদালতে আবেদন করলেও সেটি খারিজ করে দেন আদালত। মাহমুদুর রহমান মান্না চাকসুর জিএস ও দু’-দু’বার ডাকসুর ভিপি ছিলেন। এরপর বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ৮০-এর দশকে তিনি যোগ দেন আওয়ামী লীগে। পরবর্তীতে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদকে দায়িত্ব পালন করেন। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে সংস্কারপন্থির ট্যাগ লাগায় ছিটকে পড়েন আওয়ামী লীগ থেকে। ২০১০ সালে নাগরিক ঐক্য নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। বর্তমানে তিনি দলটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। মানবজমিন


শেয়ার করুন