রেড এলার্টে ৮২ বাংলাদেশি

সিটিএন ডেস্ক:
এ যাবত ৮২ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে রেড এলার্ট জারি আছে ইন্টারপোলে। এদের প্রায় সবাইকে বাংলাদেশ খুঁজলেও কাউকে কাউকে অন্য দেশও খুঁজছে। আবার তাদের কাউকে একই সাথে বাংলাদেশসহ অন্য দেশের নাগরিক হিসেবেও দেখাচ্ছে ইন্টারপোলের নোটিস বোর্ড। তাদের প্রায় সবার বিরুদ্ধেই হত্যার অভিযোগ আছে। কোন অপরাধের দ- কার্যকর করতে বা কোন অভিযোগের বিচার করতে তাদের খোঁজা হচ্ছে। তাদের সবাই পুরুষ। এদের মধ্যে ৬০ জনের ছবি থাকলেও বাকিদের ছবি নেই ইন্টারপোলের রেড এলার্ট দেয়া নোটিস বোর্ডে।
ইন্টারপোলের তথ্য অনুসারে খান আলিম উদ্দিনের বর্তমান বয়স ৫২ বছর। জš§ বাংলাদেশের মৌলভীবাজারে। তবে এখানে তাকে একই সাথে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে দেখানো হয়েছে। আবার এই দুই দেশের কোন দেশই তাকে খুঁজছে না। তাকে খুঁজছে কানাডা। ওদিকে কুমিল্লার হানিফকে খুঁজছে মালদ্বীপ। সম্পদ আত্মসাতের এক মামলায় তাকে খুঁজছে মালদ্বীপ।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি আব্দুল জাব্বার ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড এলার্ট জারি করার প্রেক্ষিতে বিষয়টি বেশ আলোচনায় আসে। তাদের দুই জনের ছবি পাশাপাশিই ছিল। আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে মানুষ হত্যায় অভিযুক্ত তারেক রহমানের ছবি ও মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদ- প্রাপ্ত আব্দুল জাব্বারের ছবি শুক্রবার সকালেও পাশাপাশি থাকলেও দুপুরের পর তা আলাদা করা হয়। আগে তারেকের ছবির ঠিক আগের ছবিটি জাব্বারের থাকলেও বিকেলে ছবিটি পরের পৃষ্ঠার (বাংলাদেশের যাদের নামে রেড এলার্ট আছে, শুধুমাত্র তাদের ছবি সম্বলিত) একমাত্র ছবি হিসেবে দেখা যায়।
ইন্টারপোলের মাধ্যমে বাংলাদেশ যাদের খুঁজছে তাদের মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন মামলার আসামি। জানা গেছে, তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্ব নিয়ে বা রাজনৈতিক আশ্রয়ে প্রকাশ্যে জীবনযাপন করছে। কিন্তু তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা যাচ্ছে না, তাই বিচারবঞ্চিত থেকে যাচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। কার্যকর হচ্ছে না আদালতের রায়। আইনি ও রাজনৈতিক জটিলতার মারপ্যাঁচে আটকে আছে তাদের কাউকে কাউকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া। আবার কাউকে দেশে ফেরাতে কোনো উদ্যোগই নেই।
ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্টপ্রাপ্ত আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনা প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বিদেশে পলাতক যে কোনো আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলের সহায়তা চেয়ে থাকে ওই দেশের পুলিশ। তখন ইন্টারপোল সংশ্লিষ্ট আসামির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে ওই দেশকে জানায়। এরপর সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে আলোচনা করে কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় আসামিকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া গ্রহণ করে ওই দেশ। তবে রেড অ্যালার্টপ্রাপ্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তারের এখতিয়ার ইন্টারপোলের নেই। এ ক্ষেত্রে যে রাষ্ট্রে আসামি পলাতক সে রাষ্ট্র এবং যে রাষ্ট্র খুঁজছে সে রাষ্ট্রের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর অনেকটা নির্ভর করে দেশে ফেরানো বা হস্তান্তর প্রক্রিয়া।
যেই ৮২ জনের বিরুদ্ধে রেড এলার্ট আছে, তাদের মধ্যে রয়েছে নারায়ণগঞ্জের অপহরণোত্তর ৭ খুন মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেন। অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করে কলকাতা যাওয়ার পর গত বছর জুনে সেখানে গ্রেপ্তার হন তিনি। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারতের কাছে লিখিত প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত সরকার এ প্রস্তাবে রাজি হলেও নূর হোসেনকে দেশে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না। এদিকে গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতে গ্রেপ্তার হয় ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্টপ্রাপ্ত আসামি ঢাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মোল্লা মাসুদ। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনাও আটকে আছে।
বিদেশে পলাতক ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্টপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধুর ৬ খুনির মধ্যে এএম রাশেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে, নূর চৌধুরী কানাডায় এবং আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন ভারতে আছেন বলে তথ্য রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। শরীফুল হক ডালিম এবং খন্দকার আব্দুর রশিদ পাকিস্তানে আছেন বলে মনে করে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। রাশেদ চৌধুরীকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে বলে ৪ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে আশ্বাস দিয়েছিল। কিন্তু সেই আশ্বাস এখনো আশ্বাসই হিসেবেই আছে। এ ছাড়া দুর্বল আইনি লড়াইয়ের কারণে ফেরানো যাচ্ছে না কানাডায় থাকা নূর চৌধুরীকেও।
মডেল কন্যা তিন্নি হত্যা মামলার আসামি, আশির দশকের তুখোড় ছাত্রনেতা ও সাবেক এমপি গোলাম ফারুক অভির মাথার ওপরও ঝুলছে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট। তাকেও দেশে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না।

এদিকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ও জামায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন আবুল কালাম আযাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকারের বিরুদ্ধেও ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি রয়েছে। ফাঁসির আদেশ হওয়ার আগেই ২০১২ সালের ৩০ মার্চ গোয়েন্দা নজর এড়িয়ে পালান এই নরঘাতক। এরপর পাকিস্তানে যাওয়ার উদ্দেশ্য ২ এপ্রিল তিনি উত্তরাঞ্চলের হিলি সীমান্ত দিয়ে ভারতে ঢোকেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানায়। বর্তমানে বাচ্চু রাজাকার পাকিস্তানে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা মামলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ নেতা তাজউদ্দিনকে ধরতে ২০০৭ সালে ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট ইস্যু করা হয়। কিন্তু এখনো তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা যায়নি। বর্তমানে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় পলাতক জীবনযাপন করছেন। সেখানে তাকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রেখেছে ইন্টারপোলের দক্ষিণ আফ্রিকা শাখা।

ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্টপ্রাপ্ত বাংলাদেশি শীর্ষ সন্ত্রাসীদের বেশিরভাগই পালিয়ে আছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। তাদের মধ্যে সাজ্জাদ হোসেন ওরফে শিবির ক্যাডার সাজ্জাদ এবং সুব্রত বাইন ভারতের কারাগারে বন্দি। অন্যরা আছে প্রকাশ্যে। তাদের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীরুল ইসলাম জয়, সালাউদ্দিন মিন্টু, আবদুল জব্বার ওরফে মুন্না, নবীর হোসেন ওরফে নবী, শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাসের ভাই প্রকাশ কুমার বিশ্বাস, হারুন শেখ, সুজিত সুলতান, তৌফিক আলম, নাসির উদ্দিন রতন, হারিস আহমেদ, খোরশেদ আলম, শৈলেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, শাহাদাত হোসেন ওরফে শাহাদত, চান মিয়া, মিন্টু, স্বপন মালাকার, আমিনুর রহমান, ওমর ফারুক ওরফে কচি, রফিকুল ইসলাম ওরফে কাজল, দীপু ওরফে নুরুল, আহমেদ মঞ্জু এবং মকবুল হোসেন অন্যতম। দুই পুলিশ কর্মকর্তা হত্যা মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান বর্তমানে দুবাই আছে। আমিন রসুল ওরফে টোকাই সাগর আছে যুক্তরাষ্ট্রে। তাদের কাউকেই দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি।


শেয়ার করুন