রামু থানা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ

13607836_1027377333978425_2015227410_nনিজস্ব প্রতিবেদক :

রামু থানা পুলিশের বিরুদ্ধে ঈদগড়ে বাসা থেকে ডেকে এনে আবছার নামে এক নিরীহ ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ করছে ভুক্তভোগির পরিবার। প্রভাবশালী ব্যক্তির ইন্ধনে নিরপরাধ আবছারকে সাজানো ঘটনায় পুলিশ আসামী করেছে। এই মিথ্যা মামলা থেকে আবছারকে অব্যাহতি দেয়ার জন্য পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ দাবী করছে তার পরিবার। মঙ্গলবার বিকেলে ঈদগড় বাজারে আবছারের স্ত্রী নুরজাহান এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবী জানান।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শনিবার এশার নামাজের আগে ঈদগড় বাজারের হোমিও প্যাথিক চিকিৎসক ডাঃ মহসীন আজাদকে ঈদগড় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফোন করে ফাঁড়িতে নিয়ে যায়। পরে ফাঁড়ির ইনচার্জ মোঃ হাসেম রামু থানার ওসি স্যারের নির্দেশে ডাঃ মহসীনকে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানায়। ওসি না আসা পর্যন্ত তাকে সেখানে থাকতে হবে জানিয়ে দিয়ে ফাঁড়িয়ে বসিয়ে রাখেন। বেশ কিছুক্ষণ পর রামু থানার ৩ জন কনষ্টেবল নিয়ে এসআই হাবিব ও শিমুল ঈদগড় ফাঁড়িতে আসে। এরপর মহসীনকে ফাঁড়ি থেকে বের করে আবছারকে ফোন করে তার দোকানে নিয়ে আসতে বলে। না হলে তাকে মিথ্যা মামলায় চালান দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়। পরে ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তার নির্দেশ ও হুমকিতে আবছারকে তার দোকানে ডাকতে বাধ্য হয় মহসীন। পরে মহসীনের ডাকে আবছার তার দোকানে আসলে আগে থেকে উৎপেতে থাকা দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও কনষ্টেবলরা তাকে আটক করে রামু থানায় নিয়ে যায়। এরপর থানায় যোগাযোগ করা হলে আবছারের বিরুদ্ধে গুরুত্বর অভিযোগ রয়েছে বলে জানিয়ে দেন রামু থানার ওসি প্রভাস। কিন্তু এর পরদিন রশিদ নগরের একটি ডাকাতি প্রস্তুতির ঘটনায় আটকদের সাথে আবছারকে ফাঁসিয়ে দেন পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে নুরজাহান বলেন, রামু থানা পুলিশ আবছারকে ঈদগড় থেকে মহসীনের মাধ্যমে বাসা থেকে ডেকে এনে ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু একটি সম্পূর্ণ সাজানো ঘটনায় তাকে আটক দেখানো হচ্ছে। পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গেছে ঈদগড় থেকে। কিন্তু দেখাচ্ছে রশিদ নগরে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে আটকের ঘটনায়। নুরুল আবছার একজন প্রবাসী। দীর্ঘদিন ধরে সে সৌদি আরবে প্রবাস যাপন শেষে সম্প্রতি গত তিন মাস আগে দেশে এসেছে। দেশে ফিরে গরু ব্যবসা চালিয়ে উপার্জন করছে সে। কিন্তু পুলিশের সাজানো নাটকে তার জীবন এখন ধ্বংস হতে চলেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আবছার বর্তমান নির্বাচিত চেয়ারম্যান ভুট্টু ও ৭ নং ওয়ার্ড থেকে পরাজিত মেম্বার নাছিরের বিরোধীতা করেন। এ কারণে আবছার তাদের রোষানলে পড়ে। তাদের ইন্ধনে মোটা অংকের মাধ্যমে আবছারকে পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমার স্বামী যদি অপরাধী হয় তাহলে তার শাস্তি হবে। কিন্তু কোন দোষ না করে একজন নিরপরাধ মানুষকে সবার চোখের সামনে ধরে নিয়ে গিয়ে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়ে তার জীবন ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে। তার অনুপস্থিতিতে পরিবারে চরম অভাব অনটন নেমে এসেছে জানিয়ে তিনি ‘সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তার স্বামীকে মিথ্যা মামলা থেকে রেহায় দিতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন’।
ঈদগড় বাজারের হোমিও প্যাথিক চিকিৎসক মুহসীন জানান, আমার মাধ্যমেই বাসা ডেকে এনে পুলিশ আবছারকে ঈদগড় থেকে ধরে নিয়ে গেছে। এর স্বাক্ষী আমি ছাড়াও আরও অনেকে রয়েছে। কিন্তু রশিদ নগরের একটি ডাকাতি প্রস্তুতির ঘটনায় তাকে অস্ত্রসহ আটক দেখাচ্ছে। যেটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।
রামু থানার ওসি (তদন্ত) কামরুজ্জামান জানান, আবছারকে রশিদ নগর থেকে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে আটক করা হয়েছে। পরিবার বিভ্রান্ত ছড়ানোর জন্য মিথ্যা দাবী করছে।
রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রভাস চন্দ্রকে ফোন করা হলে মোবাইল রিসিভ করেন স্বপন নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি নিজেকে অপারেশন অফিসার পরিচয় দিয়ে বলেন, স্যার অসুস্থ তাই নাম্বারটি আমার কাছে। আবছারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ আটক করলে সবার পরিবারই নিরপরাধ দাবী করে। এটা পাবলিকের এক ধরণের রোগ। আবছার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তাকে ডাকাতি প্রস্তুতি কালে আটক করা হয়েছে। যদিও আবছারের বিরুদ্ধে এর আগের কোন অভিযোগ কিংবা মামলা আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি। কিছুক্ষণ চুপ থাকার মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।


শেয়ার করুন