নিজস্ব প্রতিনিধি :
রামুতে চারিত্রিক ও পারিপার্শ্বিকতার বিচারে মানুষের পরিচয় হোক এ আহ্বানে সফল মঞ্চায়ন হয়েছে সমাজের ধর্মীয় কুসংস্কারে অসহায় নারীর করুন পরিণতির জীবনচরিত্রের নাটক ‘যখন বৃত্তের বাইরে’। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ‘মুসলমানীর গল্প’ অবলম্বনে ‘যখন বৃত্তের বাইরে’ নাটকের নাট্যরূপ ও নির্দেশনা দিয়েছেন নাট্যকার স্বপন ভট্টাচার্য্য। শনিবার (১০ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় রামু খিজারী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তেন ‘কক্সবাজার থিয়েটার’র প্রযোজনায় নাটকটি মঞ্চায়িত হয়। কক্সবাজার থিয়েটারের ৩০ বছর পূর্তি উদযাপনের ধারাবাহিকতায় ‘যখন বৃত্তের বাইরে’ নাটকটির মঞ্চায়ন করা হয় বলে জানিয়েছেন, কক্সবাজার থিয়েটারের সহ-সভাপতি সুশান্ত পাল বাচ্চু। নাটক মঞ্চায়ন শেষে নাট্যমঞ্চে শুভেচ্ছ বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার-৩ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব সাইমুম সরওয়ার কমল। তিনি কক্সবাজার জেলায় নাট্য আন্দোলনের পথিকৃত হিসেবে কক্সবাজার থিয়েটারের অব্যাহত নাট্যমঞ্চায়নের ভূয়শী প্রসংশা করে, তাদের অগ্রযাত্রাকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। এ সময় সাইমুম সরওয়ার কমল এমপি কক্সবাজার থিয়েটারের নাট্য আন্দোলনকে আরো সমৃদ্ধ করতে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেয়ার ঘোষনা দেন।
‘যখন বৃত্তের বাইরে’ নাটকের প্রযোজনা অধিকর্তা ও কক্সবাজার থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট তাপস রক্ষিত বলেন, অপসংস্কৃতির বাঁধভাঙ্গা জোয়ার, গণতন্ত্রের নামে যথেচ্ছাচার, রাজনৈতিক দুঃশাসনের গিলোটিন-অভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইনকে প্রতিপক্ষ করে ১৯৮৪ সালে কক্সবাজার থিয়েটারের পথচলা শুরু হয়। প্রতিকূলতা ও বিপদসংকুল সময়ে শুদ্ধ সংস্কৃতির আলপথ থেকে কক্সবাজার থিয়েটার কখনো সরে দাঁড়ায়নি। মহান মুক্তিযদ্ধের চেতনা বুকে গেঁথে, সমাজ পরিবর্তনের অঙ্গীকারে শুরু হয় কক্সবাজার থিয়েটারের কর্মকান্ড। সংস্কৃতিবান মানুষের ভালবাসায় কক্সবাজার থিয়েটার তিন দশক পূর্তি উদযাপন করছে। এ উপলক্ষ্যে বছরব্যাপী সারাদেশে নাটক মঞ্চায়নের অংশ হিসাবে রামুতে মঞ্চায়ন করা হলো নাটকটি। তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি শিল্পের জন্য শিল্প নয়-মানুষের জন্য শিল্প। আমরা চাই জীবন চেতনায় উদ্ভাসিত হউক শিল্প-সংস্কৃতির ভূবন। সকল কূপমন্ডুকতার অবসান চাই আমরা। সাম্প্রদায়িক বিষবৃক্ষের মূল উৎপাটনে সংস্কৃতি কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে আরো তীব্রতা চাই। সংগ্রামের সম্মিলনী ক্ষেত্র হিসেবে দেশ জুড়ে চাই এক বিশাল মুক্তমঞ্চ।
নাটকের নির্দেশক ও নাট্যকার স্বপন ভট্টাচার্য্য জানান, ‘যখন বৃত্তের বাইরে’ নাটকে ধর্মীয় কুসংস্কারের কারণে কমলার জীবন-চরিত্রের মাধ্যমে সমাজের করুন পরিনতির কথা ফুটে উঠেছে। মানুষকে ধর্মীয় পরিচয়ে বিচার না করে তার চারিত্রিক, পারিপার্শ্বিকতা দিয়ে বিচার করলেই পৃথিবীর সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। তিনি আরো জানান, নাটকে ডাকাতের কবলে পড়ে সমাজের চোখে অস্পৃশ্য হয়ে যায় কমলা। উদার হবির খাঁ উদ্ধার করে আশ্রয় না দিলে, কমলার পরিণতি হয়তো সমাজের নিয়মে নির্ধারিত হয়ে যেতো। হবির খাঁ’র আশ্রয়ে থেকে জীবনকে বুঝতে শেখে কমলা। ভালবাসার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে কমলা ধর্মীয় সংস্কারের উর্দ্ধে উঠে সমাজের প্রতি তার বিদ্রোহের ঘোষনা দেয়।
নাটকে কমলা চরিত্রে ইসমত আরা ইসু, সরলা চরিত্রে জনি রুদ্র, কাকীমা চরিত্রে সোহাগ রুদ্র, কাকামনি চরিত্রে তাপস বড়ুয়া, পঞ্চবটি ও শরাফত চরিত্রে বদরুল আলম লিটন, জামাই চরিত্রে এড. তাপস রক্ষিত, গজা চরিত্রে প্রবাল পাল, পঁচা চরিত্রে সাগর পাল, মধুমোল্লা চরিত্রে সুশান্ত পাল বাচ্চু, গাজী চরিত্রে দেবাশীষ দাশ দেবু, কালু চরিত্রে গিয়াস উদ্দীন মুকুল, হবির খাঁ চরিত্রে ইঞ্জি.আবুল মঞ্জুর, ব্রাহ্মণ চরিত্রে বিভাস সেনগুপ্ত জিগমী, করিম চরিত্রে দোলন পাল ও আজমত চরিত্রে অমির দাশ অভিনয় করেছেন। ‘যখন বৃত্তের বাইরে’ সফল মঞ্চায়নের নেপথ্যে কাজ করেছেন, মঞ্চ ও আলো পরিকল্পনায় স্বপন ভট্টাচার্য, পোষাক পরিকল্পনায় শাহানা মজুমদার চুমকী, রূপসজ্জায় দেবাশীষ দাশ দেবু, পোষ্টার ডিজাইনে মান্নান ও নৈপূণ্য, আলোক সরবরাহে জামাল হোসেন মনু, দ্রব্য সামগ্রীতে সুমন দাশ, প্রচার ও প্রকাশনায় গিয়াস উদ্দিন মুকুল, প্রযোজনা ব্যবস্থাপক আবু দাউদ চৌধুরী রিপন, সমন্বয়কারী এডভোকেট সৈয়দ রাশেদ উদ্দিন, প্রযোজনা উপদেষ্টা ইকবাল মোঃ শামশুল হুদা টাইঢেল ও প্রযোজনা অধিকর্তা হিসেবে কাজ করেছেন, এডভোকেট তাপস রক্ষিত।