রানের পাহাড় গড়েও প্রোটিয়াদের নাটকীয় হার

en_15_bg_359125384মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ১৮তম ম্যাচে মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড। বিগ স্কোরিং ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে ইংলিশরা। দারুণ জমে উঠা হাইভোল্টেজ এই ম্যাচে প্রোটিয়াদের ২ বল হাতে রেখে ২ উইকেটে হারিয়েছে ইয়ন মরগানের দল।

নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে হেরে কিছুটা চাপে ছিল ইংলিশরা। অন্যদিকে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামে প্রোটিয়ারা।

আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ইংলিশ বোলারদের উড়িয়ে দিয়ে অর্ধশতকের দেখা পান দুই প্রোটিয়া ওপেনার হাশিম আমলা ও কুইন্টন ডি কক। এছাড়া হাফ সেঞ্চুরি করেন অপরাজিত থাকা জেপি ডুমিনি। ৪ উইকেট হারিয়ে ২২৯ রান সংগ্রহ করে প্রোটিয়ারা। জবাবে, জো রুটের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ১৯.৪ ওভারে জয় তুলে নেয় ইংল্যান্ড।

টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ইংলিশ দলপতি ইয়ন মরগান। প্রোটিয়াদের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন ডি কক ও হাশিম আমলা। প্রথম ওভার থেকে মাত্র দুই রান তোলেন তারা। এরপরই ডি কক ও আমলার ব্যাটে ঝড় উঠে।

পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভারে আসে ৮৩ রান। দলীয় ৫০ পূর্ণ করতে দুই ওপেনার মাত্র ২৩ বল খরচ করেন। ৪৮ বলে দলীয় শতক আচে। ২১ বলে অর্ধশতকের দেখা পান ডি কক। এর আগে ২৫ ম্যাচ ধরে কোনো অর্ধশতক ছিলোনা ২৩ বছর বয়সী এ বামহাতি ওপেনারের।

ইনিংসের অষ্টম ওভারের প্রথম বলে বিদায় নেন ২৪ বলে ৫২ রান করা ডি কক। মঈন আলীর বলে হেলসের হাতে ধরা পড়ার আগে তার ব্যাট থেকে ৭টি চারের পাশাপাশি মুম্বাইয়ের দর্শকরা দেখেছে তিনটি বিশাল ছক্কার মার। দলীয় ৯৬ রানে ভাঙে ওপেনিং জুটি।

তিন নম্বরে নামা ভিলিয়ার্স আদিল রশিদের বলে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ৮ বলে দুটি ছক্কায় ১৬ রান করেন।

২৫ বলে অর্ধশতকের দেখা পান হাশিম আমলা। ইনিংসের ১২তম ওভারে এলবির ফাঁদে পড়েন আমলা। মঈন আলীর বলে আউট হওয়ার আগে ৩১ বলে ৭টি চার আর তিনটি ছক্কায় আমলা করেন ৫৮ রান।

ইনিংসের ১৬তম ওভারে সাজঘরে ফেরেন ১৭ বলে ১৭ রান করা ডু প্লেসিস। উইলির বলে মিড উইকেটে জ্যাসন রয়ের তালুবন্দি হন প্লেসিস।

২৬ বলে অর্ধশতকের দেখা পান জেপি ডুমিনি। শেষ পর্যন্ত ২৮ বলে ৩টি চার আর ৩টি ছক্কায় ৫৪ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। এছাড়া ১২ বলে দুটি করে চার ও ছক্কায় ২৮ রান করে অপরাজিত থাকেন ডেভিড মিলার। ডুমিনি আর মিলার ২৭ বলে ৬০ রানের জুটি গড়ে অবিচ্ছিন্ন থাকেন।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টেনের গ্রুপ ওয়ানের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার ছুঁড়ে দেওয়া ২৩০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামে ইংল্যান্ড। দলের হয়ে ব্যাটিং উদ্বোধন করতে নামেন অ্যালেক্স হেলস ও জ্যাসন রয়। শুরু থেকেই প্রোটিয়া বোলারদের সীমানাছাড়া করতে থাকেন দুই ইংলিশ ওপেনার। তবে, কাইল অ্যাবোটের করা ইনিংসের তৃতীয় ওভারের তৃতীয় বলে এলবির ফাঁদে পড়েন অ্যালেক্স হেলস। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে ৭ বলে আসে ১৭ রান।

প্রথম ১৭ বলেই দলীয় ৫০ রান আসে ইংলিশদের। ৪৫ বলে দলীয় শতক আসে ইয়ন মরগানের দলের।

ইনিংসের পঞ্চম ওভারে বিদায় নেন ব্যাটে ঝড় তোলা জ্যাসন রয়। অ্যাবোটের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৬ বল খেলে ৪৩ রান করা রয়। বিদায়ের আগে ৫টি চার আর তিনটি ছক্কা হাঁকান এই ইংলিশ ওপেনার। ষষ্ঠ ওভারে রাবাদা ফেরান ৯ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৫ রান করা বেন স্টোকসকে।

ইনিংসের দশম ওভারে ডুমিনি বোল্ড করেন ইংলিশ দলপতি ইংন মরগানকে। আউটের আগে ১৫ বল খেলে ১২ রান করেন মরগান।

দলীয় ১১১ রানের মাথায় চতুর্থ উইকেটের পতন ঘটলেও ৩৬ বলে ৭৫ রানের জুটি গড়ে রানের চাকা ঘোরান অর্ধশতক হাঁকানো জো রুট এবং জোস বাটলার। ১৬তম ওভারে ইমরান তাহির স্টাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন ১৪ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ২১ রান করা বাটলারকে।

এরপরও একাই লড়াই চালিয়ে দলকে জয়ের দিকে নিতে থাকেন জো রুট। ২৯ বলে অর্ধশতকের দেখা পান জো রুট। ১৯তম ওভারে রাবাদার বলে মিলারের হাতে ধরা পড়ার আগে ৪৪ বলে করেন ৮৩ রান। তার ইনিংসে ছিল ছয়টি চার আর চারটি ছক্কার মার।

শেষ ওভারে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল এক রান। অ্যাবোটের প্রথম বলে ডুমিনির হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন ক্রিস জর্ডান (৫)। পরের বলেই রান আউট হন ডেভিড উইলি। তৃতীয় বলটিতে কোনো রান নিতে পারেননি ইংলিশ ব্যাটসম্যান মঈন আলী। চতুর্থ বলে সিঙ্গেল হলে জয়ের আনন্দে ভাসেন ইংলিশরা।

১৯.৪ ওভার ব্যাট করে দলকে জয়ের বন্দরে নিতে সাহায্য করেন অপরাজিত থাকা মঈন আলী (১০ বলে ১২)।

ইংল্যান্ড একাদশ: জ্যাসন রয়, অ্যালেক্স হেলস, জো রুট, ইয়ন মরগান (অধিনায়ক), জস বাটলার, বেন স্টোকস, মঈন আলী, আদিল রশিদ, ডেভিড উইলি, ক্রিস জর্ডান ও রিস টপলি।

দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ: হাশিম আমলা, ডি কক, এবি ডি ভিলিয়ার্স (উইকেটরক্ষক), ফাফ ডু প্লেসিস (অধিনায়ক), জেপি ডুমিনি, ডেভিড মিলার, ক্রিস মরিস, কাগিসো রাবাদা, ডেল স্টেইন, কাইল অ্যাবোট ও ইমরান তাহির।


শেয়ার করুন