যৌথবাহিনী নিরাপত্তা দিলেও আসছে না পর্যটক

 beach-গোলাম আজম খান, কক্সবাজার:

২০ দলের টানা অবরোধের কক্সবাজার পর্যটন শিল্পে স্থবিরতা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে সৈকতে গিয়ে দেখা গেছে, যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই ফাঁকা। পর্যটকের বসার ছাতা-চেয়ারগুলো খালি পড়ে আছে। ছাতার মালিক আবদুল মান্নান নয়াদিগন্তকে বলেন, জানুয়ারির প্রথম দিন হরতাল হলেও টানা তিন দিন সৈকতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের ভিড় ছিল। আর এখন একজনও নেই। সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, কলাতলী পয়েন্ট, শৈবাল পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্টেও একই চিত্র। যেখানে পর্যটকের ভীড়ে হাঁটা যেত না। সেখানে ফাঁকা সৈকতে বিরাজ করছে নিস্তব্দতা।
ঢাকাসহ অন্যান্য জেলা শহর থেকে দুরপাল্লার যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক না থাকায় এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। আর বিমানে যারা আসছে তা পর্যটনের ভর মৌসুমের জন্য উল্লেখযোগ্য নয়। এ পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে পর্যটকরা যাতে স্বাভাবিকভাবে কক্সবাজার আসতে পারেন, পর্যটন মৌসুমে যাতে ব্যবসায়ী ক্ষতিগ্রস্থ না হন তার জন্য আরো ব্যাপক নিরাপত্তার উদ্যোগ সম্প্রতি কক্সবাজার প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জেলার বিশেষ আইন শৃংখলার রক্ষার উদ্যোগ নিলেও কোন কাজে আসছেনা। বিশেষ করে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প রক্ষা ও সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক কাজ করতে যা প্রয়োজন তার সকল প্রকার নিরাপত্তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি সভায় নেয়া সিদ্ধান্ত মতে পুলিশ, বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যদের পাহারায় পর্যটক সহ যাত্রীবাহী বাসগুলো চলাচল করছিল। কিন্তু পেট্রোল বোমায় দগ্ধ হয়ে মৃত্যুর অহরহ চিত্র প্রচার পাওয়ায় ভ্রমনে বের হতে সাহস পাচ্ছে না পর্যটকরা।  এর পরও ২০ দলের টানা অবরোধে মানুষের স্বাভাবিক জীবনের জন্য পুলিশ ও বিজিবি পাহারায় দূরপাল্লার যান চালাচলের চেষ্টা করেও পর্যটক আসছেনা। গত ১২ জানুয়ারী থেকে মহাসড়কে বিজিবি ও পুলিশ র‌্যাব এর নিñিদ্র প্রহরায় রয়েছে। এর সঙ্গে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর সড়ক পাহারা দেয়ার ঘোষণা সত্তেও রাতে স্বল্পসংখ্যক যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করছে।
বিজিবি এবং পুলিশসহ আইন-শৃংখলাবাহিনীর অন্য সদস্যদের পাহারায় রাতের বেলা ঢাকাগামী যে যাত্রী ও পণ্যবাহী গাড়ি যাতায়াত করছে তা প্রয়োজনের তুলনায় ১০ ভাগেরও কম। আর দিনের বেলা সেটি সীমিত হয়ে ৫ ভাগে নেমে এসেছে। তবে যেসব গাড়ির সার্ভিস ভালো, উন্নত, ভালমানের সেগুলো রাস্তায় নামছে না। বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কের লক্কর-ঝক্কর গাড়ি পুলিশি পাহারায় ঢাকায় পাঠানো হচ্ছে। এতে টানা অবরোধে পর্যটক শূণ্য হয়ে পড়েছে কক্সবাজার। দৈনিক দশ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। ইতিমধ্যে বহু কর্মচারীকে ‘বাধ্যগত’ ছুটি দেয়া হয়েছে। ছাটাইয়ের তালিকায় রয়েছে ২০ হাজার শ্রমিক। হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছে হোটেল মোটেল মালিকরা। ২০১৫ সালের প্রথম দিন হরতাল দিয়ে অশুভ সূচনার পর ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ, মাঝে মাঝে হরতাল ভরা মৌসুমেও পর্যটন স্পট গুলোকে জন-মানব শুণ্য করে দিয়েছে। বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে অনেক হোটেল-মোটেল-রেস্তোরা ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্টান। যার ফলে জেলার পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্টানে কর্মরত প্রায় অর্ধলাখাধিক কর্মজীবির মাঝে বিরাজ করছে ছাটাই আতংক। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দীর্ঘায়িত হলে এ শিল্পে হাজার কোটি টাকার ক্ষতির আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস’র চেয়ারম্যান লায়ন এম. এন করিম বলেন, দেশের অপার সম্ভাবনাময় একটি শিল্প পর্যটন। বিশ্বের দীর্ঘতম অখন্ড বালিয়াড়িকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারেই এ শিল্প বিকাশের সুযোগ রয়েছে। এখানে আসা ভ্রমণ পিপাসুদের বিশ্বমানের সেবা নিশ্চিত করতে উদ্দোক্তা হিসেবে আমরা সমুদ্রপারে হাজার কোটি টাকা গেড়ে ফেলেছি। কিন্তু  রাজনৈতিক অস্থিরতার ও অশুভ কান্ড দেশে ঘটছে তাতে এখানে বিনিয়োগকারিরা চোখে সরষের ফুল দেখছেন।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেষ্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব ওমর সোলতান বলেন, আবাসিক ও রেস্তোরা খাতে প্রতিদিন প্রায় ১০ কোটি টাকা লোকসান হচ্ছে।

beach-1কক্সবাজার আবাসিক হোটেল-মোটেল ও গেষ্ট হাউজ শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্র জানায়, হরতাল-অবরোধের কারণে পর্যটক শূন্যতা বিরাজ করায় মালিক পক্ষ অনেককে বাধ্যতামূক ছুটি দিয়েছেন। ফলে হোটেল-মোটেল ও গেষ্ট হাউজের সাথে জড়িত প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী অসহায় দিন যাপন করছেন।
কক্সবাজার হোটেল ও রেস্তোরা মালিক সমিতির কর্মকর্তা টিটু জানান, পর্যটক শূণ্যতার কারণে হোটেল-মোটেল জোন এলাকার প্রায় ৩ শতাধিক প্রতিষ্টানের ১৫ হাজারের বেশী শ্রমিক-কর্মচারী বেকার সময় কাটাচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহমেদুল কবীর বলেন, ডিসেম্বরে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় সামলাতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। এখন ফাঁকা সৈকতে পুলিশ সদস্যদের অলস সময় কাটাতে হচ্ছে।
কেয়ারী র্ট্যুস ইনচার্জ হুমায়ন কবির জানান, গত ১৭ জানুয়ারী টেকনাফ হতে কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজ যোগে ৬০-৭০ জন পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণে গেছেন । অথচ পর্যটনের ভর মৌসুমে ৬-৭ টি জাহাজ যোগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩ হতে ৫ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিন ভ্রমণে যেত। ১৮, ১৯ ও ২০.২১,২২ জানুয়ারী সেন্টমার্টিনের উদ্দ্যেশে কোন জাহাজ ছেড়ে যায়নি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানিয়েছেন, হরতাল-অবরোধের মাঝেও কক্সবাজারের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার-টেকনাফ মহাসড়কে যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন রাখতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

 


শেয়ার করুন