যে পরানে প্রেম জমেনি

2016_03_05_09_16_25_83a4EoJYGctxvGAnEhxS1l57Egy2o0_original‘আমারে তলব দিও দ্যাখো যদি দুঃখের কাফন/ তোমারে পিন্ধায়া কেউ অন্যখানে যাইবার চায়/ মানুষ কি জানে ক্যান মোচড়ায় মানুষের মন/ অহেতুক দুঃখ দিয়া কেউ ক্যান এত সুখ পায়?’ সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের ‘পরাণের গহীন ভিতর’ কবিতার মতো কেই একজন পরান আক্তাররে দুঃখ দিয়েছিল? নাকি তিনি নিজেই দুঃখের সাগরে ভেসে গেছেন।

রামগঞ্জে দীর্ঘ ৮ বছর ধরে শিকলে বন্দি সেই পরান আক্তার(২৭) যে নিজের অব্যক্ত ভালবাসার আগুনে পুড়ে শিকলের বন্দি জীবন বেছে নিয়েছেন। কিন্তু কেন? বুকের মধ্যে অব্যক্ত ভালবাসার মাশুল দিতে হচ্ছে আজো তাকে। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে কখনও শিকলে কখনও ঘরে তালা মেরে বন্দি করে রাখা হচ্ছে এ পরানকে। যে বয়সে তার স্বামী, সন্তান নিয়ে সংসার করার কথা সে বয়সে অন্ধকার ঘরের চার দেয়ালের মধ্যে মাথা ঠুকরে জীবন নিঃশেষ করে চলেছে। এখন স্বপ্ন দেখা চোখের নিচে শোকের কালি।

এ নির্দয়, নির্মম অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে ৯নং ভোলাকোট ইউনিয়নের ভোলাকোট গ্রামের বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা এটিএম শামছুজ্জামানের গ্রামের বাড়ির বড় বাড়িতে। এখন অবশ্য তারা ওই বাড়ি থেকে উঠে গিয়ে ভোলাকোট বাজারের (টিওরী) দক্ষিণে নতুন একটি বাড়িতে বসবাস করছে। ওই বাড়ির মৃত হারেছ মিয়ার মেয়ে পরান আক্তার।

স্থানীয় টিওরী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় জনৈক নাজিম উদ্দিনের প্রেমে পড়েন পরান। কিন্তু কিছু মানুষ তার মনের কথা বলতে পারে না। যদি সে ফিরে দেয় এই ভয়ে নাজিমকেও জানাতে পারেনি। অন্য কারো কাছেও প্রকাশ করতে পারেনি সেই উছলেপরা প্রেম। ফলে পরান তার অব্যক্ত ভালবাসার আগুনে পুড়তে পুড়তে এক পর্যায়ে পাগল হয়ে যায়। নাজিমের নাম ধরে বিভিন্ন প্রলাপ বকতে থাকে আর তখনই পরানের প্রেমের কাহিনী ফাঁস হয়ে যায়। এ তথ্যগুলো নিশ্চিত করে জানান পরানের ভাবি নাছিমা আক্তার ও মা সহিদা বেগম।

৬ ভাইবোনের মধ্যে পরান আক্তার ৫ম। তার ছোট বোনটিরও বিয়ে হয়ে গেছে। পরানকে কবিরাজি থেকে শুরু করে বিভিন্ন চিকিৎসা করানো হয়েছে কিন্তু ভালো হয়নি। আর তাছাড়া পরান আক্তারদের উপার্জনক্ষম একমাত্র ভাই ইউছুপ বাড়িতে না থাকার কারণে ও আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে পরানকে তারা ভালোভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না। পরাণ প্রায় বিভিন্ন বকাবকি করতো এবং বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতো। তাই নিরুপায় হয়ে পরিবারের লোকজন তাকে শিকলে বেঁধে ঘরের একটি কক্ষে আটকে রাখে।

এ ব্যাপারে টিওরী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী সিনিয়র শিক্ষক মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, পরানকে আমরা চিনি সে এই বিদ্যালয়ে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। সে একজন ভালো ছাত্রী ছিল কিন্তু কী কারণে তার এ অবস্থা হয়েছে আমরা তা বলতে পারবো না। শুনেছি তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়।

এলাকাবাসী জানান, পরান একজন ভালো মানুষ ছিল। হঠাৎ করেই তার এ অবস্থা হয়েছে। তবে তাকে যদি উন্নত চিকিৎসা দেয়া হয় সে ভালো হয়ে যাবে বলে ধারণা করছে তারা।

পরান আক্তারের মা সহিদা বেগম জানান, ডাক্তার বলেছে উন্নত চিকিৎসার পেলে পরাণ সুস্থ হয়ে উঠবে। কিন্তু পরিবারের অভাবের কারণে তাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

–বাংলামেইল২৪ডটকম


শেয়ার করুন