যুবলীগের মহাসমাবেশে বিএনপিকে প্রতিহত করার ঘোষণা

ডেস্ক নিউজঃ

যুবলীগের ৫০ বছর পূর্তি ও সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে বিএনপিকে প্রতিহত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে আওয়ামী লীগ। নেতারা বলেছেন, বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলন ও আগুন সন্ত্রাস প্রতিহত করা হবে।

দলটিকে আওয়ামী লীগের জবাবের জন্যও প্রস্তুত থাকতে বলেছে তারা।
শুক্রবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশটি আয়োজিত হয়।

শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য দেন বিকেল পৌনে পাঁচটায়। তার আগে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কয়েকজন নেতা।

এ ছাড়া যুবলীগের শীর্ষ নেতারাও বক্তব্য দেন।
মহাসমাবেশের মাধ্যমে যুবলীগের নেতাকর্মীদের অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হতে আহ্বান জানান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতার বক্তব্যের উদ্ধৃতি টেনে ধরে তিনি বলেন, আমিও বিশ্বাস করি বাংলাদেশকে কেউ দাবায় রাখতে পারবে না। ওরা (বিএনপি) যত কথাই বলুক বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি আমরা এগিয়ে যাব।

খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে এইট পাশ আর মেট্রিক ফেল দিয়ে দেশ চললে সেই দেশের উন্নতি হয় না বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বহু ঘাত প্রতিঘাতের পরও আজকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা টাকা দেশের জনগণের কল্যাণ ব্যবহার করছি। অর্থনীতিকে গতিশীল করাই আমাদের লক্ষ্য। তারা (বিএনপি) ক্ষমতায় ছিল- দুর্নীতি, লুটপাট করে হাজার হাজার টাকা কামাই করে বিদেশে গিয়ে এখন নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে। আমার কথা হলো- বাংলাদেশের যে অগ্রযাত্রা সেটা কেউ রুখতে পারবে না।

এ সময় বিএনপি নেতাদের মুখে আওয়ামী লীগের সমালোচনা শোভা পায় না বলেও মন্তব্য করেন হাসিনা। তারেক জিয়ার বিভিন্ন দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাটা জিয়াউর রহমান সম্পর্কেও কথা বলেন। যুবলীগের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তরুণের শক্তি বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। দেশ গড়ার কাজে মনোযোগী হতে হবে। দেশের সেবা করতে হবে, মানুষের সেবা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বিএনপিকে উদ্দেশ্য বলেন, খেলা হবে। খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে; দু:শাসনের বিরুদ্ধে; লুটপাটের বিরুদ্ধে। খেলা হবে বিএনপির বিরুদ্ধে; আগুন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, খেলা হবে ভোট চুরির বিরুদ্ধে; ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে। তৈরি হয়ে যান। প্রস্তুত হয়ে যান। জবাব দেব।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ নিয়ে বিএনপির বক্তব্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ফখরুল বলেন আমরা ঋণ নিয়েছি। আমরা ঋণ নিয়েছি ঘি খাওয়ার জন্য নয়। বিএনপি ঋণ নিয়েছিল ঘি খাওয়ার জন্য। বাজেট করেছিল বিদেশি ঋণের ওপর। আজকে আমাদের ঋণ পরিশোধ হয় বলেই আইএমএফ খুব সহজে বাংলাদেশকে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। কারণ, আইএমএফ জানে শেখ হাসিনা সময়মতো ঋণ পরিশোধ করে। সে কারণে তারা ঋণ দিয়েছে। বিএনপি যদি আরেকবার আসে সব খাবে। বিদেশি ঋণ গিলে খাবে। গণতন্ত্র গিলে খাবে। নির্বাচন গিলে খাবে। সুযোগ পেলে বাংলাদেশ পর্যন্ত গিলে খাবে।

দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, ওরা ভয় দেখায়। হুমকি মারে। ১০ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার পতন ঘটাবে। তারেক জিয়া দেশে আসবে। আর বিএনপি ক্ষমতায় চলে যাবে। পাগলে কী না বলে, ছাগলে কি না খায়। ওরা তো পাগল। ওরা খুনি। তারেক কীভাবে আসবে? যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, ও তো ভয়ে আসবে না। খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত। প্রধানমন্ত্রী সহানুভূতির কারণে তাকে কারাগার থেকে বাসায় দিয়েছে। দেওয়া উচিত নয়। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তাদের বিষয়ে কোনো সহানুভূতি দেখানো যাবে না।

তিনি আরও বলেন, তারা বলে ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবে। আওয়ামী লীগ পালাবার দল নয়। তারেক জিয়া পালিয়ে লন্ডনে ১৫ বছর আছে। ফালু পালিয়ে বিদেশে আছে। তোরা পালিয়ে পাকিস্তানে যেতে পারিস। আমরা এই মাটি মানুষের দেশ ছেড়ে পালাতে জানি না। তারেক আর খালেদা জিয়া দুধ খাচ্ছে আর বিএনপির নেতারা ছাগলের ৩ ও ৪ নম্বর বাচ্চার মতো লাফাচ্ছে। জীবনেরও তো এ দেশের মানুষের ভালোবাসা আর ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। সংবিধান অনুযায়ী আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ হবে। সাহস থাকলে এসে নির্বাচন করেন। সাজাপ্রাপ্ত তারেক জিয়া ও খালেদা জিয়া তো নির্বাচন করতে পারবে না।

শেখ সেলিম বলেন, বিএনপি রাজনৈতিক দল না, তারা পাকিস্তানের এজেন্ট। যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে তারা কিসের দল? যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে তারা গণতন্ত্রের কথা বলে। খালেদা জিয়া গণতন্ত্র শেখায়। কিসের গণতন্ত্র? মুচলেকার গণতন্ত্র। ৫০০ লোককে যারা হত্যা করেছে, যাদের বিন্দুমাত্র মনুষ্যত্ব নেই তারা এটা করতে পারে।

যুবলীগকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারেননি। তিনি সবাইকে আপন করে নিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আজকে সজাগ। যুবলীগের ছেলেদের সজাগ থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে ঐক্য গড়তে হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিএনপি ছাগলের বাচ্চার মতো শুধু লাফাবে। আর পারলে দেশ ছেড়ে পালাবে। নিজেদের মধ্যে কোনো ভুল বোঝাবুঝি করা যাবে না।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপি অনেক হত্যাকাণ্ড সংগঠিত করেছে, যখনই আপনারা ক্ষমতা এসেছেন তখনই হত্যা করেছেন। ১৩, ১৪ ও ১৫ তে এদেশে অনেক মানুষকে হত্যা করেছেন। মনে রাখবেন আজকের এই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখার জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটি সুষ্ঠু সুন্দর, অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ বঙ্গবন্ধুর সমস্ত আদর্শিক সৈনিকরা ঐক্যবদ্ধ। যে কোনো ষড়যন্ত্রের দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে, এ হোক আজকের শপথ।

এ সময় যুবলীগের আরেক সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এই বিশাল যুব জনতার সমাবেশ আপনার নির্দেশের অপেক্ষায় আছে। এই যুবলীগ আপনার নির্দেশে খালেদা-নিজামির বিরুদ্ধে লড়াই করেছিল। যুবলীগ আপনার দিকে আজ তাকিয়ে আছে। যারা আজ দেশে আতঙ্ক ছড়াতে চায়, আগুন সন্ত্রাস করতে চায়, মানুষ খুন করতে চায় এই যুবলীগ তাদের প্রতিহত করতে প্রস্তুত।

নিজ বক্তব্যে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আপনি বরিশালে পদ্মা দিয়ে যাননি, বিমানে চড়ে গেছেন। পদ্মা সেতু ও শেখ হাসিনার উন্নয়ন ব্যবহারে লজ্জা পাবেন না। আপনার নেতাকর্মীরা কী শেখ হাসিনার উন্নয়ন ব্যবহার থেকে বিরত থেকেছেন? তারা সেটা করেননি, পারেননি। আপনি শেখ হাসিনার উন্নয়ন উপেক্ষা করতে পারবেন না।

এ সময় তিনটি দাবি তুলে ধরেন পরশ। তিনি বলেন, পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। জনগণের কাছে সরকারের উন্নয়ন এবং বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে হবে। আগামী জাতীয় নির্বাচনে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল যেন ক্ষমতায় না আসতে পারে, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।

যুবলীগ চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও যুবলীগের অপর সাবেক চেয়ারম্যান আমির হোসেন আমু, যুবলীগের সাধারণ সম্পদাক মাইনুল হোসেন খান নিখিল প্রমুখ। যুবলীগের পক্ষ থেকে সমাবেশের প্রধান অতিথি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্রেস্ট ও মাঠের উপর খচিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি উপহার দেওয়া হয়।


শেয়ার করুন