যানজট-জলজটে অচল শহর

শাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন:
পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার শহরের যানজটের কাহিনী দীর্ঘদিনের। শহরের বাজারঘাটা ও বার্মিজ মার্কেট- এই দু’এলাকা জুড়ে সারা বছর লেগেই থাকে যানজট। যানজটের জন্য এমনিতে করুণ দুরাবস্থা মানুষের। কিন্তু বর্ষাকাল এলে কষ্টের ষোলকনা পূর্ণ হয় যেন! বছরের অন্যান্য সময় অবস্থা যাই হোক না কেন এই সময় আর নিস্তার নেই! বরাবরই দুঃখ বাজারঘাটা-বার্মিজ মার্কেট। পাহাড়ি ঢলে নেমে আসা পানিতে নদী রূপ নেয় এই এলাকা। কোমর সমান পানিতে টইটম্বুর প্রধান সড়ক। ফলে যানজটের সাথে একাকার হয় জলজট।

Jam Pic  (1)সামনে গর্ত। কিন্তু পানির নিচের গর্তটা চালকের জ্ঞাত থাকার কথা না। তাই অনায়সেই গাড়ি নামিয়ে দিল সেই গর্তে। শেষে তুলতে হচ্ছে টেনে। ততক্ষণে দু’পাশে লেগে গেছে বিরাট যানজট। ছবিটি বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধান সড়কের বৌদ্ধমন্দির সড়কের মাথা থেকে তোলা।
গত ২০ দিনের চিত্র মতে, এই সময় ধরে কক্সবাজার শহরবাসী এক দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকা পড়ে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে জনজীবন। বৌদ্ধ মন্দির সড়ক ও বিকেপাল সড়ক দিয়ে নেমে আসা ঢলে এখন পর্যন্ত পানিবন্দি বাজারঘাটা ও বার্মিজ মার্কেট এলাকা।
সরেজমিন চিত্র মতে, বৃষ্টির সাথে সাথেই পানি জমে যাওয়ায় টমটম, সিএনজি অটোরিক্সা, মাহিন্দ্রসহ শহরের উপযোগী কোন যানবাহন ওই এলাকা পারাপার করতে পারে না। ফলে দু’ধারে আটকা পড়ে সব যানবাহন, যাত্রী ও সাধারণ লোকজন। এই জলজটের ফলে সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট।
অপরদিকে বৃষ্টি থামলেও কমে না যানজট! পানি থাকে না তবে ঢলের পানির সাথে নেমে আসা পাহাড়ি মাটির আস্তুরণ পড়ে যায় সড়কজুড়ে। কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয় ঢিবি। মাটির পলিতে নামলেই নিস্তার নেই কোন যানবাহনের! পলি মাটিতে দেবে গিয়ে আটকা পড়ে সব ধরণের যানবাহন। এর ফলেও সৃষ্টি হয় যানজট।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, বার্মিজ স্কুল সংলগ্ন বৌদ্ধমন্দির সড়কে মাথায় ঢলের তোড়ে সৃষ্টি হয়ে বিশাল গর্ত। পানিতে ভর্তি থাকায় দেখা যাচ্ছে না গর্তটি। কর্তৃপক্ষও দেয়নি সতর্কতা চিহ্ন। ফলে প্রতিমহূর্ত গর্তে পড়ছে চলন্ত যানবাহন। এতে করে বড় ধরণের দুর্ঘটনা না ঘটলেও ছোটখাটো ঘটনা ঘটেই চলছে। তার চেয়েও বড় কথা ওই গতে পড়া গাড়ি টেনে তুলতে তুলতে দু’পাশে পড়ে যাচ্ছে যানবাহনের দীর্ঘ সারি। এতে করে সৃষ্টি ভয়াবহ যানজট। যানজটের কবলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে মানুষ।
অন্যদিকে হেঁটে চলাচলের কোন উপায় নেই। জল আর কাদায় একাকার সারা সড়ক। সব মিলিয়ে অচল হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন।
ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ বলছে, ঈদ বাজার উপলক্ষ্যে কক্সবাজার শহরে প্রচুর বাইরের লোকজন আসছে। সেই সাথে শহরে বাস করা লোকজনও ঈদ বাজার জন্য ব্যস্ত হয়েছে। এই কারণে শহরের যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে গেছে। এতে করে এমনিতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। তার উপর বাজারঘাটা ও বার্মিজ মার্কেট এলাকা জলজটের কারণে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।
ক্ষুব্ধ শহরবাসী: কক্সবাজারের মতো একটি প্রথম শ্রেণীর শহরের এই করুণ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় শহরবাসী চরম ক্ষুব্ধ। দীর্ঘদিনের দাবীর প্রেক্ষিতেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় এই ক্ষুব্ধতা বেড়েই চলছে।
অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ জানান, সারা বছর যানজটে এমনিতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বর্ষাকাল এলেই তার সাথে নতুন মাত্রা যোগ হয় পানি। এই সময় জীবন এক প্রকার অচল হয়ে পড়ে।
নীরব কর্তৃপক্ষ: পর্যটন রাজধানী কক্সবাজারের মতো শহরের করুণ দশা নিয়ে নীরব রয়েছে কর্তৃপক্ষ। পৌর কর্তৃপক্ষ। তারা সমস্যা লাঘবে চেষ্টা চালানো কথা বললেও কার্যত কোন কোন সমাধান দিতে পারছে না। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়নি। কক্সবাজারবাসী জলাবদ্ধা ও যানজট নিরসনের বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচী দিলেও তা কোন কাজে আসছে না।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল জানান, কক্সবাজার পৌরসভার জলাবদ্ধতা সমস্যাটা জটিল। পাহাড়ি ঢলের সাথে নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় তা সহজবোধ্য নয়। তবুও পৌরসভা সমাধানের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে।


শেয়ার করুন