যত দোষ নন্দঘোষ !

মাহবুবা সুলতানা শিউলি

কলম সৈনিক চেষ্টা করে কলম দিয়ে হলেও সমাজের জন্য কিছু করার, কিছু বলার।

পুলিশ মানে আতংক, অনেকটা ঘৃণার জায়গা বর্তমান সমাজে। এরমধ্যেও অনেকেই ভালোর দৃষ্টান্ত স্হাপন করেছেন। নঁওগার সাবেক পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হকের কিছু লিখনি আমি পড়েছি। তিনি একজন সৎ পুলিশ অফিসার বলে মনে করি। তবে পরিচিত-অপরিচিত অনেক পুলিশ অফিসার আছেন যারা এ পেশাটাকে ব্যবসার মূল হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন। ধীক্ তাদের। গুটিকয়েক যাঁরা ভালো আছেন, বিশ্বাস করি দেশ তাদের দ্বারাই এগিয়ে যাবে। তাঁদের সহযোগিতায় সাধারণ মানুষেরা সুবিচার পাবে এ প্রত্যাশা রাখি। পৃথিবীতে এখনও ভালো মানুষ আছে বলেই পৃথিবী আজও সুন্দর।

এই গুণে ধরা পচনশীল সমাজে অনেকসময় মনেহয় পুলিশই কিছু ভালো কাজ করে যাচ্ছে। মন্দিরের সাধু বা মসজিদের ইমামের সততার বুলি আওড়ানো অনেক সহজ। কিন্তু তারাও আজ দুর্নীতিগ্রস্থ। শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, ব্যাংকার, প্রশাসন, জজ সবই দুর্নীতিবাজ। সেখানে কতিপয় বিপথগামী পুলিশকে আংগুল দেখিয়ে অনেকেই দৃষ্টি অন্য দিকে সরায়। এটা খুব কমন ব্যাপার । পুলিশ সদস্যরা ১৬ কোটি নাগরিক থেকেই এসেছেন। বাংলাদেশ, সিংগাপুর এর পুলিশি সেবা চায় !!! কই রেলওয়ে, ভুমি অফিস, ডাক্তার, শিক্ষা, সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে ত কেউ সিংগাপুর এর সেবা চায়না। পুলিশ এখনও বহুলাংশে ভালো বলে এই সমাজ আছে। দুর্নীতির শীর্ষ সংগঠন এর তালিকাতেও বিডি পুলিশ নেই। ধরতে গেলে বর্তমানে দেশ চলছে পুলিশ প্রশাসন এর উপর নির্ভর করে।

কথায় আছে, “সব পাখি মাছ খায়, দোষ শুধু মাছরাঙা পাখির”। বিষয়টা অনেকটা সেরকম। সবাই শুধু পুলিশের দোষ দেখে। পুলিশের দোষই যেন অপেন আর বাকীদের গুলি অপেন সিক্রেট। আসলে কিছু নামকাওয়াস্তে পুলিশ অফিসার আছেন যাদের কারণে পুলিশ প্রশাসন কলংকিত। কিছু সদস্যদের দুতিনটা বাড়ি, পাঁচসাতটা গাড়ি, নামকরা মার্কেটে বিশাল বিশাল দোকানের মালিক অনেকেই। এসব দেখে দিশাহারা হয়ে যাই। কিভাবে সম্ভব?

অথচ আমার বাবাও একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। জীবদ্দশায় একটা একতলা বাড়িও করে যেতে পারেন নি। ব্যাংক-ব্যালেন্স বলতে আমরা তাঁর সন্তানেরা। আমার মা বর্তমানে সেই কবেকার আমার দাদার করে যাওয়া জীর্ণশীর্ণ বাড়িতেই আছেন। মানুষ অবাক হয়ে যায় একজন এএসপির বাড়ি কিভাবে এরকম থাকে !!! আমি আমার বাবাকে সেলুট করি। তিনি তাঁর পেশাকে সম্মানের জায়গায় সাজিয়েছিলেন। তিনি তাঁর পোশাক ও পেশাকে অন্তর দিয়ে ভালোবাসতেন।

শুধু পুলিশের দিকে আংগুল না উঁচিয়ে আমাদের দৃষ্টি যদি অন্যদিকে তাকাই তবে চারিদিকে শুধু দুর্নীতি ছাড়া কিছুই চোখে পড়বেনা। আমাদের প্রিয় নবীর পেশা ছিল ব্যবসা। অথচ আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা আজ কলুষিত। সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানকে আকাশচুম্বী মুল্যমানে রাখছে। গরীব দুখ্খীদের সাথে যেন ফান করছে। পয়সাওয়ালারা কি পেঁয়াজ না খেয়ে বসে আছে? ২০০-২৫০/- টাকা পয়সাওয়ালাদের কাছে কিছুই না। মরছে তাঁরাই মধ্যবিত্ত , নিম্নবিত্ত ও গরীবেরা। দুর্নীতিবাজদের ভুড়িভোজ পেঁয়াজের দাম ৫০০/- হলেও থেমে থাকবে না। ঘৃণার সাথে বলছি, ভুমি অফিসের পিয়ন, বন অফিসের ৩য় শ্রেণির কর্মচারী, তেল কোম্পানি র দারোয়ান, বন্দরের গেইটম্যান, পিডাব্লিওডি, রোডস এন্ড হাইয়ের সামান্য কর্মচারীরা কোটি কোটি টাকার মালিক। দুর্নীতিবাজদের ঘরে টাকা রাখার জায়গা নেই । দেশের ব্যাংকেও এরা টাকা রাখেনা। সুইস ব্যাংকে রাখে। বিদেশে ২০/৩০ টা ফ্ল্যাটের মালিক। যেন রূপকথার গল্প যা অবিশ্বাস্য।

আরো আছে, প্রাইভেট না পড়লে শিক্ষক ফেল করায়, প্রশ্ন ফাঁস করে। বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে আরো নোংরামি – সিজিপিএ শরীরে কেনা বেচা হয়। ছি! এসব শুনলেও গা ঘিন ঘিন করে।সাংবাদিক স্পট থেকে টাকা তোলে, না দিলে নিউজ। কাউকে হয়রানি করার জন্য উদ্ভট, বানোয়াট , মিথ্যা , বিভ্রান্তি মুলক নিউজ ছেপে দিচ্ছে! যার যা ইচ্ছে তাই করছে। টাকার বিনিময়ে কারাগারের ভিতরে মেলে ইয়াবা, আসামি গোপনে থাকে বাড়িতে। ইয়াবার চাহিদা থাকবে না কেন? হাই লেভেলের মানুষেরা সেবন করে। বুয়েট, মেডিকেল সহ প্রায় সব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থীরা ইয়াবার গ্রাহক। কিশোর-কিশোরীরাও বিভিন্ন নেশায় আসক্ত। পত্রিকায় বার বার লেখা হয়েছে চট্রগ্রাম কলেজের আশপাশেই রয়েছে এসব কারবারী যা অনেকটাই অপেন সিক্রেট। কিন্তু প্রশাসন নিরব দর্শক। কেন? কিছুই বুঝে উঠতে পারি না। স্বচক্ষে দেখা, দেবপাহাড়ের মোড়ে স্কুল ড্রেস পড়া ছোট ছোট কিশোরেরা সিগারেট টানছে। আরেকটু ভিতরে টং আকারের মুদির দোকানের ভিতর গাঁজা খাচ্ছে তরুন যুবকেরা। বাচ্চার জন্য চিপস কেনার সময় আড়চোখে দেখলাম মাদকের ধূয়ায় ধূয়াসা পরিবেশ। হায়রে দিনদুপুরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে নেক্সট জেনারেশন।

হায়রে দীর্ঘশ্বাস ! একটা টেস্ট লাগলে ডাঃ দেয় পনেরটা টেস্ট, ২ মিনিট রোগি দেখে নেয় ১০০০ টাকা, খাবারে ভেজাল, ওজনে কম, মানুষ মানুষকে লাভের জন্য ঘি বলে আলকাতরা বেঁচে দিচ্ছে। এক একটা ভুমি অফিসে যে দুর্নীতি সমগ্র বাংলাদেশ পুলিশ ঘোষণা দিয়ে ঘুষ খেলে তার সমান হবে না। সবাই মিলে দেশটাকে যা ইচ্ছা তা বানিয়ে ফেলছে। টাকা আর ধন দৌলতের কাছে সম্পর্ক পরাজিত। অথচ কেউ একজন ভালো কিছু করতে চায়লে তার পিছনে দশজন লেগে যায়। মানুষ সততার গল্প বলে, কিন্তু গরীব পাত্র হলে মেয়ে বিয়ে দেয়না। ইয়াবাওয়ালাকেই বড় ব্যবসায়ী বলে বিয়ে দেয়। মানুষ কই যাবে?

দিনশেষে সব সরকারের দোষ বলে চাপিয়ে দিয়ে শান্তি পেতে চায়। আরে সরকার কি আপনাকে দুর্নীতি করতে বলেছে নাকি!? সৎ , সততা এসব টাকায় কেনা পাওয়া যায়না। যত্তসব !
যত দোষ নন্দঘোষ!
মহান আল্লাহপাক সবার বোধশক্তি আরো বাড়িয়ে দিক!
___________________________________
মাহবুবা সুলতানা শিউলি
সদস্য, বোর্ড অব ট্রাস্টিজ
কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ।
ইমেইল: [email protected]


শেয়ার করুন